স্বামীকে অকালে হারিয়ে ছেলেকেই আঁকড়ে ধরেছিলেন তিিন। মানসিক প্রতিবন্ধী সেই ছেলের দেখাশোনা করেই তাঁর দিন কাটত। কিন্তু পুকুরে ডুবে যাওয়া সেই ছেলের নিথর দেহ উদ্ধার চোখের সামনে দেখে আর সহ্য করতে পারেননি মা। ছেলের দেহ উদ্ধারের কয়েক ঘণ্টা পরে বাসিন্দারা দেখেন, দূরে একটি গাছ থেকে ঝুলছে মায়ের দেহ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, সন্তান হারানোর শোকে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার বলরামপুরের মণ্ডলকেরোয়া গ্রামের ঘটনা। পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে কেরোয়া গ্রাম থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরের একটি পুকুর থেকে অজয় মণ্ডল (১৪) নামে ওই কিশোরের দেহ উদ্ধার হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলেন তার মা চাঁদমণি মণ্ডল (৩৮)। সন্ধ্যায় পুকুর থেকে কিছুটা দূরে একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর দেহ দেখতে পাওয়া যায়। সন্তানকে নিয়ে মণ্ডলকেরোয়া গ্রামে বাপের বাড়িতে চাঁদমণি থাকতেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে ছেলের মৃত্যুশোকে মা আত্মহত্যা করেছেন। দু’টি দেহই উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পুরুলিয়া হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চাঁদমণির বিয়ে হয়েছিল ঝাড়খণ্ডের নিমডি থানার পিটকি গ্রামে। ছেলের জন্মের বছরখানেকের মধ্যেই তাঁর স্বামী মারা যান। অজয় জন্ম থেকেই মানসিক প্রতিবন্ধী। স্বামীর মৃত্যুর পরে তাকে নিয়ে মণ্ডলকেরোয়ায় বাবার বাড়িতে চলে এসেছিলেন চাঁদমণি। দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। বাড়িতে রয়েছেন চাঁদমণির বাবা, মা এবং ভাইয়েরা। প্রতিবেশিরা জানান, স্বামীর মৃত্যুর পরে ছেলেকে ঘিরেই বাঁচতেন চাঁদমণি। অজয়ের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতেন। কিন্তু চিকিৎসা করানোর মত সামর্থ্য ছিল না। অজয় মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যেত। তবে প্রতিবারই আপন মনে ঘুরে বেড়িয়ে পরে ফিরে আসত। এমনও হয়েছে, সারা রাত বাইরে কাটিয়ে পরের দিন ঘরে ফিরেছে সে। ছেলের জ্বর হওয়ায় তাকে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েছিলেন চাঁদমণি। ফেরার অজয় তাঁর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ছেলে নিজে থেকেই ফিরে আসবে ভেবে কিছুক্ষণ খোঁজ করার পরে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু বিকেলে অজয়ের মৃত্যুর খবর আসে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন চাঁদমণি। ফেরেননি তিনিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy