কিছু ব্লকে আধিকারিক নেই। কিছু ব্লকে আবার কর্মীতে টান। আবার নয়া অনলাইন পদ্ধতির কারণে কাজের গতি শ্লথ হয়েছে আগেই। অথচ কমার বদলে কাজের চাপ বাড়ছে পাহাড়প্রমাণ। জেলার বিভিন্ন ব্লকে জমির পরচা থেকে যাবতীয় কাগজপত্রে পরিষেবা প্রার্থীর মিউটেশন বা নামপত্তন করতে মাসের পর মাস লেগা যাচ্ছে। ফলে দুর্ভোগে পড়ছেন জেলার অগুনতি জমি সংক্রান্ত পরিষেবা প্রার্থী।
ছবিটা অচিরেই বদলাতে বিশেষ পরিকল্পনা নিল জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। আধিকারিক এবং কর্মীদের একটি ভ্রাম্যমান টিম বানিয়ে কাজের নিরিখে পিছিয়ে পড়া ব্লকগুলিতে গিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার লক্ষ্য নিয়েছে দফতর। যেখানে মাসখানেক কাজ করে পরিস্থিতির পরিবর্তন এনেই অন্য ব্লকে ছুটে যাবে ওই দল। আর দফতরের এই পদক্ষেপেই দীর্ঘ দিন ধরে মিউটেশনের জন্য আবেদন করা জেলার প্রায় ৪৬ হাজার আবেদনকারী উপকৃত হবেন বলে আশা করছেন কর্মী-আধিকারিকেরা।
দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের প্রতিটি জেলায় জমির মিউটেশন বা নামপত্তন সংক্রান্ত দীর্ঘ দিনের জট কাটাতে গত ৯ জুন ভূমি দফতরের মুখ্যসচিব তথা ভূমি সংস্কার কমিশনার প্রতিটি জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। জেলার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ছে, দ্রুত মিউটেশন সংক্রান্ত জট কাটানোর জন্য ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রামে’র মাধ্যমে মিউটেশন নিয়ে ‘লিক্যুইডেশন’ করা হবে। সেই প্রোগ্রামের মাধ্যমে কোনও জেলার যে ব্লকে বেশি জট আছে, সেই ব্লকে অন্যান্য ব্লকের আধিকারিকেরা গিয়ে মাসখানেকের মধ্যে জট কাটিয়ে আসবেন। এর ফলে ওই সব ব্লকের বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের সমস্যার সমাধান হবে।’’ জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক নীলকমল বিশ্বাস জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে রামপুরহাট, বোলপুর ও সিউড়ি— এই তিন মহকুমার ছ’টি ব্লককে চিহ্নিত করে প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হবে। এই ছয় ব্লকে কাজ শেষ করার পরে বাকি ব্লকগুলিতে কাজ শুরু হবে। ‘‘প্রথম পর্যায়ে যে ছ’টি ব্লকে কাজ হবে, তাতেই এই জেলার মিউটেশন সংক্রান্ত জটিলতা অনেকটাই কেটে যাবে। বাকি ব্লকগুলিতে ওই সমস্যা তুলনায় কম,’’— দাবি নীলকমলবাবুর।
এই পরিকল্পনা অনুযায়া, আগামী ১ জুলাই থেকে রামপুরহাটের মুরারই ২, নলহাটি ২, সিউড়ির সিউড়ি ১, মহম্মদবাজার, সাঁইথিয়া এবং বোলপুরের নানুর— জেলার এই ছয় ব্লকে ওই ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ চালু হবে। দীর্ঘ দিন থেকে বিএলআরও নেই নলহাটি ২ ব্লকে। পর্যাপ্ত সংখ্যায় নেই রেভিনিউ অফিসার। অবসরপ্রাপ্তদের দিয়েই কাজ চলছে। সংখ্যা কম কর্মীদেরও। নলহাটি ১ ব্লকের বিএলআরও-কে দায়িত্বে দেওয়া হলেও তিনি এই ব্লকে অনেক দিনই আসেননি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। আর তার জেরেই এই ব্লকে মিউটেশনের জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা ছ’ হাজার ছাড়িয়েছে গিয়েছে বলে মেনে নিচ্ছেন দফতরেরই কর্তারা।
নলহাটি ২ ব্লকের বারা গ্রামের বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সিপিএমের খাইরুল হাসানের দাবি, ‘‘বিএলআরও না থাকায় চরম অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে। এই মুহূর্তে জমির শ্রেণিবিন্যাস বা চরিত্র বদলের জন্য সাত হাজার আবেদন বিএলআরও অফিসে জমা পড়েছে। অথচ তা করা হচ্ছে না। সমস্যা মেটানোর জন্য দীর্ঘ দিন ধরে জেলা প্রশাসনকে বারবার জানাচ্ছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’’ প্রায় একই সুর মুরারই থানার মাঠকরমজা গ্রামের বাসিন্দা তথা মুরারই ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের আলি রেজারও। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘মুরারই ২ বিএলআরও অফিসে থাকার কথা তিন জন রেভিনিউ অফিসার। কিন্তু, বাস্তবে রয়েছেন মাত্র এক জন। তার উপর মাঝে মধ্যেই লিঙ্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। দিনের শেষে সমস্যায় পড়ছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষ।’’
এ দিকে দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ১৯টি ব্লকের মধ্যে এই মুহূর্তে নলহাটি ২, মুরারই ২ ও রাজনগর ব্লকে বিএলআরও নেই। নীলকমলবাবুর আশ্বাস, ‘‘ওই তিন ব্লকে খুব শীঘ্রই বিএলআরও নিয়োগ করা হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মেনে চললে জেলা জুড়ে জমির মিউটেশন সংক্রান্ত সমস্যা আগামী এক মাসের মধ্যেই দূর হয়ে যাবে বলে আমার আশা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy