এ যেন শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে অনাস্থা আনার সময়সীমা পার হওয়ার পরেই এ বার তৃণমূলের দ্বন্দ্বে তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা নিয়ে আসা হল রঘুনাথপুর ১ ব্লকের নতুনডি পঞ্চায়েতে। এ দিকে, সাঁতুড়ি ব্লকের সাঁতুড়ি পঞ্চায়েতে অনাস্থায় সিপিএমের প্রধানকে সোমবার তলবি সভায় সরিয়ে দিলেন তৃণমূলের সদস্যেরা।
ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের বছরখানেক পরেই শাসকদলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে রাজ্য জুড়েই তৃণমূলের দখলে থাকা পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতে বারবার অনাস্থা আসতে থাকে। জেরবার হয়ে পড়ে শাসকদল তৃণমূল। শেষে বিধানসভায় বিল করা হয়, নির্বাচনের আড়াই বছরের মধ্যে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে অনাস্থা আনা যাবে না। কালীঘাটে জেলা নেতাদের ডেকে বারবার দলনেত্রী দ্বন্দ্ব ভুলে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিলেও তা অনেকেই কানে তুলছেন না। আড়াই বছরের সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পরে ফের সেই দ্বন্দ্বকে সামনে এনে অনাস্থা আনা হচ্ছে।
নতুনডি পঞ্চায়েতে সম্প্রতি দলেরই প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছেন পঞ্চায়েতে তৃণমূলেরই ছয় সদস্য। প্রধানকে পঞ্চায়েতে পাওয়া যায় না, অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করেই তিনি কাজ করেন— এমন অভিযোগ লিখিত ভাবে দিয়ে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন তাঁরা। তবে দলেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, আসলে গোষ্ঠী বিবাদই অনাস্থার প্রধান কারণ। রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সভাপতি কৃষ্ণ মাহাতো বলেন, ‘‘দলীয় নেতৃত্বকে না জানিয়েই নতুনডি পঞ্চায়েতে আমাদের প্রধানের বিরুদ্ধে দলেরই ছয় সদস্য অনাস্থা এনেছেন। কিন্তু দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা যাবে না বলে দলের কড়া নির্দেশ রয়েছে। দল তাই এই অনাস্থাকে সমর্থন করে না।” তিনি জানান, ওই সদস্যদের বোঝানো হবে।
এই ব্লকে অবশ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই বিভিন্ন পঞ্চায়েতে অনাস্থা এসেছে। বাদ পড়েনি পঞ্চায়েত সমিতিও। পরিস্থিতি সামলাতে শেষ পর্যন্ত ওই ব্লকের দলের সভাপতিকেও সরাতে হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরিকে। অনাস্থা আনার হিড়িক কিছুটা কমে। কিন্তু পরিস্থিতি যে বদলায়নি, নতুনডির ঘটনা ফের তা সামনে এনে দিয়েছে।
নতুনডি পঞ্চায়েতে প্রধানের সঙ্গে দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর বিবাদ অবশ্য নতুন নয়। প্রধান পূর্ণিমা মুদির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে একাধিকবার ব্লক থেকে শুরু করে মহকুমা প্রশাসনের কাছে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ সদস্যেরা। এমনকী দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযাগ জানানোর পরেও প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলে পঞ্চায়েতে তালা দিয়ে বিক্ষোভও দেখান দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর লোকজন।.
আড়াই বছরের সময়সীমা শেষ হতেই পঞ্চায়েতে তৃণমূলের উপপ্রধান শম্ভু গড়াই, পঞ্চায়েতে তৃণমূলের দলনেতা নিরোদ কৈবর্ত্য-সহ ছয় সদস্য প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন। এই পঞ্চায়েতে ১২ জন সদস্যের মধ্যে ১০ জনই তৃণমূলের। দু’টি আসন রয়েছে সিপিএমের দখলে। উপপ্রধানের অভিযোগ, ‘‘প্রধান হিসেবে পূর্ণিমাদেবীর প্রশাসনিক কাজে দক্ষতা নেই। ফলে পঞ্চায়েত থেকে যে ধরনের পরিষেবা বাসিন্দাদের দেওয়ার কথা তিনি তা দিতে পারছেন না। অন্যদিকে তিনি পঞ্চায়েতের কাজ নিয়ে বাকি সদস্যদের সঙ্গেও আলোচনা করেন না। বিভিন্ন সময়ে দল ও প্রশাসনের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে বাধ্য হয়ে অনাস্থা আনতে হয়েছে।”
তবে ফোন বন্ধ থাকা পূর্ণিমাদেবীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায় জানান,নতুনডি পঞ্চায়েতে অনাস্থা নিয়ে ব্লক থেকে কোনও রিপোর্ট তাঁর কাছে আসেনি।
অন্য দিকে, সাঁতুড়িতে তৃণমূল পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংখ্যরিষ্ঠ আসন পেলেও প্রধানের আসন তফসিলি জাতি মহিলার জন্য সংরক্ষিত থাকায় তারা প্রধান পদটি পায়নি। প্রধান হয়েছিলেন সিপিএমের গোলাপি বাউরি। কয়েকমাস আগে উপনির্বাচনে লেদিয়াম সংসদের আসনে তৃণমূলের প্রতীকে জয়ী হন রেখা বাউরি। সময়সীমা পার হতেই তাই সিপিএমের প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিল তৃণমূল। সোমবার ওই পঞ্চায়েতে তলবিসভা হয়। সেখানে তৃণমূলের পাঁচ সদস্য অনাস্থার পক্ষে ভোট দেন। সিপিএমের তিন সদস্য অবশ্য হাজির হননি। দলের ব্লক সভাপতি রামপ্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নিয়ম মেনে সাঁতুড়ি পঞ্চায়েতে শীঘ্রই আমাদের দলের প্রধান দায়িত্ব নেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy