তারাপীঠের সৌন্দর্যায়নে মনসুবা মোড়ে তোরণ তৈরি নির্দেশ ছিল। আজও তা তৈরি হয়নি। এখন লাগানো হয় ঘুঁটে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
পরিকল্পনাই সার, তারাপীঠে রূপায়ণ নেই প্রকল্পের!
রানিগঞ্জ–মোরগ্রাম জাতীয় সড়কের উপর রামপুরহাট থানার মনসুবা মোড়। এখান থেকে তারাপীঠের দূরত্ব প্রায় আট কিলোমিটার। বছর ছয়েক আগে এই মোড়েই তারাপীঠ দর্শনার্থীদের জন্য তোরণদ্বার নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বীরভূম জেলা পরিষদে ক্ষমতাশীল বামফ্রন্ট সেই কাজ রূপায়িত করতে পারেনি। রাজ্যে নতুন সরকার আসার পর প্রথম পর্যটন মন্ত্রী রচপাল সিং এই তোরণ দ্বারের শিলান্যাস করেছিলেন। কিন্তু বছর তিনেকের বেশি হয়ে গেলেও সেই তোরণদ্বার নির্মাণের কাজ এখনও শেষ হয়নি।
কেউ কেউ রাজ্যে সরকারি প্রকল্পের বাস্তবায়নের নিরিখে প্রশ্ন তুলতেই পারেন, এ আর নতুন কী!
প্রশ্ন হল, তারাপীঠে বাম আমল থেকে এখনকার তৃণমূল সরকার এমন নানা প্রকল্প নিয়েছে। কিন্তু রূপায়ণ ঘটেনি প্রায় কোনওটিরই। বাম আমলে নেতা মন্ত্রীদের বিশেষ করে সিপিএম নেতা মন্ত্রীদের মধ্যে ধর্মীয় স্থানে পূজা দেওয়া মানে একটা গেল গেল ভাব ছিল। সেই রীতির তোয়াক্কা না করে পরিবহন মন্ত্রী থাকাকালীন সুভাষ চক্রবর্তী বার বার তারাপীঠে পুজো দিয়েছেন। সে নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছে। সেই সব বিতর্ক মাথায় নিয়েই সুভাষবাবু তারাপীঠ লাগোয়া ফুলিডাঙা এলাকায় বাসস্ট্যান্ডের সংস্কার করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
২০০৭ সালে তারাপীঠ বাসস্ট্যান্ড সংস্কারের জন্য পরিবহন দফতর থেকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা অনুমোদন হয়। সেই টাকার মধ্যে ১০ শতাংশ টাকা পঞ্চায়েত সমিতির দেওয়ার কথা ছিল। এছাড়া পরিবহন দফতর থেকে বরাদ্দ টাকার শেষ ধাপে ৭ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকার চেক আইনের জটিলতায় দীর্ঘদিন আটকে ছিল। সম্প্রতি সেই টাকা পাওয়া গিয়েছে। অথচ, টাকা মেলেনি এখনও! রামপুরহাট ২ ব্লকের বিডিও সৌমনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতি থেকে সেই টাকা এখনও দেওয়া হয়নি। ওই টাকা বাসস্ট্যাণ্ড সংস্কারের কাজে লাগানো হবে।’’
ঘটনা হল, পরিকল্পনা মাফিক ফুলিডাঙা এলাকায় জবর দখলকারীদের পুনর্বাসন ব্যবস্থা করে বাসস্ট্যণ্ড তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই রাজ্যে বাম সরকার বিদায় নেয়। পরে পরিবর্তনের সরকার আসার পর তারাপীঠে নেতা মন্ত্রীদের আসা যাওয়ার ঢল বাড়তে থাকে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’বার তারাপীঠে পুজো দিয়েছেন। তিনি নিজেও তারাপীঠের জন্য নানান পরিকল্পনার কথা বলেছেন। গড়ে তুলেছেন তারাপীঠ – রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ।
বিরোধীদের দাবি, নতুন নতুন প্রকল্প নেওয়ার দৌড়ে এই সরকার সবসময়ই এগিয়ে থাকে। কিন্তু সবটাই লোক দেখানো। ইতিমধ্যে তারাপীঠ–রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের জন্য বরাদ্দ করেছেন পাঁচ কোটি টাকা। জেলা পরিষদের প্রাক্তন সহ-সভাধিপতি নিতাই মাল বলেন, ‘‘তারাপীঠের উন্নয়নের জন্য আমরাই পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। কিছু কাজ হয়েছে, তারমধ্যে নদীর দু’পাড় বাঁধানোর চেষ্টা করেছিলাম। অন্য প্রকল্পের কাজ কিছুটা এগিয়েছিল। শশ্মানঘাটে সংস্কারের কাজও হয়েছিল। কিন্তু বাম সরকার চলে যাওয়ার পর সেই উন্নয়ন কই!’’ তারাপীঠের মানুষ ও বাইরে থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরাও ক্ষুব্ধ। স্থানীয় বাসিন্দা গুরুশরণ চট্টোপাধ্যায়, পুলক চট্ট্যোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘বাম-ডান জানি না। তারাপীঠের উন্নয়ন নিয়ে সবাই বড় বড় কথা বলে। কিন্তু তারাপীঠের মূল যে সমস্যা, সে থেকেই গিয়েছে।’’
মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া তারাপীঠে প্রায়ই আসেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরুপ রায়রা। জেলে যাওয়ার মাস খানেক আগেও তারাপীঠে পুজো দিয়ে গিয়েছেন পরিবহনমন্ত্রী মদন মিত্রও। মন্ত্রী হওয়ার পর এই মদনবাবুই তারাপীঠে এসে বাসস্ট্যান্ড সংস্কার করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। ঘোষণা করেছিলেন রামপুরহাট অটো সার্ভিসের নির্দিষ্ট ভাড়া ঠিক করে দেবেন। কোথায় সেই ভাড়ার তালিকা?
তারাপীঠ থেকে দীঘা, তারাপীঠ থেকে কলকাতা বাস চালু করে দেবেন, এমন ঘোষণাও করেছিলেন মদনবাবু। মেলেনি সেই বাস। বাসসার্ভিস বছর খানেক আগে দিন পনের চালু থাকার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মদন মিত্র ঘোষিত তারাপীঠ বাসস্ট্যাণ্ডের সংস্কারও হয়নি। পরিকল্পনায় ছিল আরও কয়েকটি বাসরুটের কথাও। হয়নি কোনওটি! জেলায় এসে উন্নয়নের সাতকাহন শুনিয়ে গিয়েছিলেন বর্তমানের পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধূরীও। কিন্তু সে সব পরিকল্পনা আজও বাস্তব হয়নি।
সম্প্রতি আত্মমর্যাদা প্রকল্পে ঋণ নিয়ে বীরভূমের পঞ্চপীঠ দর্শনের জন্য তারাপীঠ থেকে নলহাটি, নলহাটি থেকে বক্রেশ্বর, বক্রেশ্বর থেকে কঙ্কালিতলা, কঙ্কালিতলা থেকে লাভপুরের ফুল্লরা মা, লাভপুর থেকে সাঁইথিয়া নন্দেকেশ্বরি তলা হয়ে আবার তারাপীঠ একটি বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। বাসটি তারাপীঠ থেকে চালু হয়ে পঞ্চপীঠ দর্শন করে আবার তারাপীঠে ফিরে আসে। ২৯৯ কিমি পথ যাতায়াতের জন্য যাত্রী পিছু তিনশ টাকা ভারা স্থির করা হয়েছে।
এতে সমস্যা কি মিটেছে?
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy