Advertisement
০৪ মে ২০২৪
নানা অভিজ্ঞতা জেলা জুড়ে

টাকা কই, ব্যাঙ্ক ঘুরে ক্লান্ত জনতা

ঘরের রোজকার খরচায় টান পড়েছে। কিছু টাকার দরকার ছিল ব্যবসার জন্যও। তাই দশ হাজার টাকা তুলবেন বলে ব্যাঙ্কের লাইন দিয়েছিলেন দুবরাজপুরের বাসিন্দা উদয় দত্ত। আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে মাত্র আ়ড়াই হাজার টাকা নিয়েই বাড়ি ফিরতে হল তাঁকে।

নোট নিয়ে ভোগান্তির প্রতিবাদে সাঁইথিয়ায় তৃণমূলের মিছিল। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নোট নিয়ে ভোগান্তির প্রতিবাদে সাঁইথিয়ায় তৃণমূলের মিছিল। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩২
Share: Save:

ঘরের রোজকার খরচায় টান পড়েছে। কিছু টাকার দরকার ছিল ব্যবসার জন্যও। তাই দশ হাজার টাকা তুলবেন বলে ব্যাঙ্কের লাইন দিয়েছিলেন দুবরাজপুরের বাসিন্দা উদয় দত্ত। আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে মাত্র আ়ড়াই হাজার টাকা নিয়েই বাড়ি ফিরতে হল তাঁকে। চলে যাওয়ার আগে দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, ‘‘এ ভাবে চলে?’’

প্রয়োজনের তুলনায় নগদ টাকার জোগান কম শুক্রবারও প্রভাব পড়ল জেলার বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শাখায়। কোথাও কোথাও দাবি মতো টাকা পেলেও জেলার একটা বড় অংশের ব্যাঙ্কে গিয়েই উদয়বাবুর মতো অভিজ্ঞতা হল অনেক গ্রাহকেরই। কোথাও সাকুল্যে হাজার তো কোথাও দু’হাজার টাকা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল তাঁদের। সিউড়ির একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা প্রবন্ধক বলছেন, ‘‘বৃহস্পতিবার টাকার জোগান অত্যন্ত কম ছিল। এ দিন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও গ্রাহকদের একটা বড় অংশকেই ভুগতে হয়েছে।’’

তবে, একাধিক বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা ও এটিএমগুলি সচল থাকায় দুর্ভোগ তেমন নজরে পড়েনি জেলা সদর সিউড়িতে। মফসস‌্ল বা প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় অবশ্য দুর্ভোগ চরমে। সপ্তাহে মোট ২৪ হাজার টাকা তুলতে পারার অনুমতি থাকলেও বাস্তবে অধিকাংশ গ্রাহকই ব্যাঙ্ক থেকে সেই সুবিধা পাননি বলে অভিযোগ। রাষ্ট্রায়ত্ত শাখার ব্যাঙ্কগুলির শাখা প্রবন্ধকদের একাংশের যদিও দাবি, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া গ্রাহকদের নির্ধারিত পরিমাণ টাকা তুলতে দেওয়া হচ্ছে। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের রিজওনাল ম্যানেজার অমরেশকুমার ঝা বলছেন, ‘‘টাকা পাচ্ছেন না, এমন কোনও লিখিত অভিযোগ কোনও গ্রাহক এখনও পর্যন্ত করেননি।’’

বৃহস্পতিবার সাঁইথিয়ার রোঙ্গাইপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় বহু গ্রাহককেই খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল। এ দিন সেখানে ফের টাকা দেওয়া শুরু হলেও তা গ্রাহকদের চাহিদা মতো নয়। গ্রাহকদের দাবি, টাকার জোগান কম জানিয়ে ব্যাঙ্ক চার হাজারের বেশি কাউকে টাকা দিতে রাজি হয়নি। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, সোমবার থেকে টাকার জোগান নিয়ে আর সমস্যা থাকবে না। সাঁইথিয়া শহরে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত শাখা বিগত কিছু দিন ধরে ২৪ হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সেখানকার আধিকারিক নীতিশ দত্ত, দিলীপ ভট্টাচার্যরা। এ দিন ভাগ্য সহায় ছিল সাঁইথিয়ার স্কুলশিক্ষক দেবকুমার দত্ত এবং রামপুরহাটের বাসিন্দা শ্রীকান্ত মালের। তাঁরা যেমন জানালেন, তিনি এ দিন ২৪ হাজার টাকা তুলতে পেরেছেন। গ্রাহকদের দাবি মতো টাকা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শান্তিনিকেতন ও ভুবলডাঙা শাখার দুই আধিকারিক সৈকত চট্টোপাধ্যায় এবং উৎপল মণ্ডলও। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘ব্যাঙ্কে টাকা নেই বলে কাউকে ফেরানো হয়নি।”

তবে, সর্বত্র যে ছবিটা এমন, তা নয়। বিশেষ গ্রামের দিকে। গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত কোনও কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা থেকে গ্রাহকেরা একেবারই টাকা তুলতে পারেননি, এমনও ঘটেছে। নলহাটি থানার কয়থায় অবস্থিত একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকেই যেমন গত দু’দিন ধরে কোনও টাকা না পেয়ে গ্রাহকেরা ঘুরে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। কয়থার বাসিন্দা শহিদুল ইসলামের ক্ষোভ, ‘‘দু’দিন থেকে ঘুরে ঘুরে হয়রান হয়ে যাচ্ছি। ম্যানেজারকে ব্যঙ্কে পাওয়া যায়নি।’’ আবার ফকিরুল শেখের দাবি, তিনি ব্যবসার কাজের জন্য ১০০০ টাকা তুলতে এসেও তা ব্যাঙ্ক থেকে পাননি। এলাকার এটিএম-এও কোনও টাকা মেলেনি। অন্য দিকে, নলহাটিতে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে মাত্র ২ হাজার টাকা পেয়েছেন গ্রাহকেরা। ৩ হাজার টাকার বেশি দেয়নি মুরারই থানার কুশমোড়ে অবস্থিত অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা। ফলে রামপুরহাট মহকুমার গ্রামীণ এলাকার গ্রাহকেরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন বলে দাবি। তবে, রামপুরহাট শহরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মূল কার্যালয় থেকে গ্রাহকেরা এ দিন প্রয়োজন মতো সর্বোচ্চ ২৪,০০০ টাকা তুলতে পেরেছেন বলে কর্তৃপক্ষের দাবি।

এ দিকে, দুবরাজপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় বৃহস্পতিবারই টাকা তুলতে পারেননি গ্রাহকেরা। ‘ক্যাশ নেই’-এর বোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল ব্যাঙ্কের তরফে। এ দিন ওই শাখায় টাকা তোলার বিস্তর লাইন ছিল। কিন্তু, ব্যাঙ্কে মজুদ টাকার পরিমাণ এত কম যে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে মাত্র আড়াই হাজার টাকা করে পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে গ্রাহকদের। দুবরাজপুরের অন্য একটি ব্যাঙ্ক তখন টাকা তোলার ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়েছে তিন হাজারে। যদিও এ দিন শহরের অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় তেমন বড় লাইন লক্ষ করা যায়নি। টাকা পেতেও সমস্যা ছিল না। যদিও শহরের এটিএমগুলির অধিকাংশই এ দিন সচল ছিল না।

গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলোর অবস্থা আরও করুণ। খয়রাশোলের একটি ব্যাঙ্কের সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে গ্রাহক প্রতি হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছিল। সেটাই বেড়ে দু’হাজার করা হয়েছে গত দু’দিন ধরে। কিন্তু দু’ হাজারের একটি করে নোট নিয়ে আরও বেশি সমস্যায় পড়েছেন গ্রাহকেরা। বড়রা গ্রামের টুনি বাগদি নামে এক বধূ যেমন বলছেন, ‘‘কী করব এই নোট নিয়ে? কেউ তো ভাঙিয়েই দিচ্ছে না!’’ গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ম্যানেজারেরা বলছেন, ‘‘টাকার জোগান এত কম, আমরাই বা কী করব?’’ এ দিন টাকার জোগান কম ছিল ডাকঘরগুলিতেও।

জেলা জুড়ে অধিকাংশ ব্যাঙ্কের টাকার সঙ্কটের কথা মেনে নিয়েছেন জেলা লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার দীপ্তেন্দ্রনারায়ণ ঠাকুরও। তবে, তিনি বলছেন, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে টাকার জোগান এখনও খুব কম। তবে ছবিটা বদলাচ্ছে। সোমবারের মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হবে বলে মনে হচ্ছে।’’ ওই দিন থেকে জেলার এটিএম থেকে নতুন পাঁচশো টাকার নোট মিলতে পারে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন ওই ব্যাঙ্ক কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Procession
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE