Advertisement
১৮ মে ২০২৪

বিরোধী-শূন্যের পথে দুবরাজপুর পুরসভা

কংগ্রেসের দেখানো পথে এ বার বিজেপি-ও! দুবরাজপুর পুরসভার চার কংগ্রেস কাউন্সিলর আগেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। রবিবার বিকালে এ বার তৃণমূলে নাম লেখালেন পুরসভার এক বিজেপি কাউন্সিলরও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০১:১৭
Share: Save:

কংগ্রেসের দেখানো পথে এ বার বিজেপি-ও!

দুবরাজপুর পুরসভার চার কংগ্রেস কাউন্সিলর আগেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। রবিবার বিকালে এ বার তৃণমূলে নাম লেখালেন পুরসভার এক বিজেপি কাউন্সিলরও। এ দিনই বোলপুরে তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের হাত থেকে জোড়াফুল পতাকা তুলে নেন দুবরাজপুরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর মৌসুমী দে। শুধু মৌসুমী দেবীই নন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন দুবরাজপুর শহরের বিজেপি সাধারণ সম্পাদক মানিক মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রীও।

২০১৩ সালে পুরভোটে ১৬ আসন বিশিষ্ট দুবরাজপুর পুরসভায় মোট ৭টি আসন পেয়েছিল বিরোধী দলগুলি। ক্ষমতাসীন তৃণমূল পেয়েছিল ৯টি আসন। ভোট মেটার কয়েক মাস পরেই ধীরে ধীরে চার কংগ্রেস কাউন্সিলর বোলপুরে গিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন। এ বার দুই বিজেপি কাউন্সিলরের মধ্যে এক জন দলবদল করায় কার্যত বিরোধী শূন্য পুরসভা হওয়ার দিকেই এগোচ্ছে দুবরাজপুর পুরসভা। এখন বিরোধী বলতে এক বিজেপি ও সিপিএম কাউন্সিলর। তাঁরাও আর কত দিন নিজেদের দলে থাকবেন, তা নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে দুবরাজপুরে। এ দিকে, এলাকাবাসীর একাংশের মত, এ ভাবে একটি রাজনৈতিক দল থেকে জিতে দল বদল করা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করারই সামিল। তা ছাড়া বিরোধী না থাকলে পুরসভার ত্রুটি বিচ্যূতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার লোকও থাকবে না। গণতন্ত্রে সেটাও কাম্য নয় বলেই শহরের বহু বিশিষ্ট জন মনে করছেন।

কেন দল বদল?

প্রশ্নের উত্তরে পরোক্ষে কিন্তু বিরোধী ওয়ার্ডের প্রতি ক্ষমতাসীন বোর্ডের বঞ্চনাকেই দায়ী করেছেন সদ্য প্রাক্তন বিজেপি নেতা মানিক মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘গত পুরভোটে মৌসুমী বিজেপি-র প্রতীকে সব চেয়ে বেশি ব্যবধানে বিপক্ষকে হারিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু, মানুষের জন্য যে পরিমাণ কাজ করার কথা, তা তিনি করতে পারছিলেন না। সেখানে শাসকদলের দখলে থাকা ওয়ার্ডগুলিতে উন্নয়নের পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। সেই কারণেই ওয়ার্ডে সকলের সঙ্গে কথা বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’’ তাঁর কথাতেই সম্মতি জানিয়ে মৌসুমীদেবীও বলেন, ‘‘উন্নয়নের স্বার্থেই দল বদল করলাম।’’

তবে, এই দলবদলে চরম অস্বস্তি বিজেপি-র অন্দরে। গত ভোটে জেলার চারটি পুরসভায় যে অবস্থানে ছিল বিজেপি, সেই অনুযায়ী ফল করতে পারেনি। দলের একাংশের মত, পুর নির্বাচনের আগে জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের পদত্যাগের পর থেকেই যেন নিজেদের গোছাতে পারছে না বিজেপি। সেখানে গত দু’বার যে আসন থেকে বিজেপি জয়ী হচ্ছে, তেমন একটি আসনে জয়ী কাউন্সিলর এবং শহরের নেতার পদত্যাগ অস্বস্তি যে আরও বাড়াবে তাতে সন্দেহ নেই। বিজেপি সূত্রেরই খবর, এই ধস নামার ইঙ্গিত পেয়ে আগেই মানিকবাবুর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার একটা চেষ্টা করেছিলেন জেলা বিজেপি নেতারা। কাজ না হওয়ায় হতাশা চাপতে পারছেন না অনেকে। কেউ কেউ তো এখনই বলে দিচ্ছেন, ‘‘দুবরাজপুরে সংগঠন সত্যি-ই দুর্বল হয়ে পড়ল।’’

অন্য দিকে, একে একে বিরোধী কাউন্সিলরেরা ক্ষমতাসীন তৃণমূল বোর্ডে যুক্ত হওয়ায় উচ্ছ্বসিত শাসক শিবির। অনুব্রত এ দিন দাবি করেন, ‘‘ওঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে সামিল হয়েছেন। উন্নয়নের স্বার্থেই দলবদল করেছেন। ওঁদের স্বাগত জানাই।’’ যদিও পুরসভার তরফে বিরোধী ওয়ার্ডগুলি বঞ্চনার স্বীকার হওয়ার জন্যই দল বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন বিরোধী কাউন্সিলরেরা মত বহু বিরোধীরই। বিরোধী সিপিএম কাউন্সিলর আলাউদ্দিন খান যেমন সরাসরিই অভিযোগ করছেন, ‘‘শাসকদলের দখলে থাকা ওয়ার্ডগুলির তুলনায় বিরোধী ওয়ার্ডে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এলাকার বাসিন্দারা প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেখে অনেকেই বাধ্য হয়ে দল বদলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।’’ পাশাপাশি তাঁর মত, এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সুবিধা-সুযোগের হাতছানিও থাকতে পারে।

প্রায় একই সুর বিজেপি-র জেলা আহ্বায়ক অর্জুন সাহারও। তাঁর দাবি, ‘‘এক জন নেতা বা একজন কাউন্সিলর গেলেই দলের সংগঠন দুর্বল হবে বলে আমি মনে করি না। বর্তমানে বিজেপি-র এত করুণ অবস্থাও হয়নি বা তৃণমূল দারুণ কিছু করে দেখায়নি যে দল বদল করতে হবে। দল বদলের পিছনে ভিন্ন অঙ্ক কাজ করেছে নিশ্চয়-ই। তবে ব্যক্তি স্বাধীনতা সকলেরই আছে।’’

মৌসুমীদেবীদের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়েই দিয়েছেন তৃণমূল পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘যে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, সেই ওয়ার্ডে কোনও বঞ্চনা হয়নি। যেহেতু ৭০ শতাংশ গরিব মানুষের বাস তাই সমস্যা নিত্য সঙ্গী। কাউন্সিলরের মনে হয়েছে, শাসকদলে থাকলে তিনি হয়তো আরও বেশি করে ওয়ার্ডের মানুষের জন্য কাজ করতে পারবেন, তাই তিনি দলে এসেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE