Advertisement
০৩ মে ২০২৪
পুরুলিয়ায় বিলি করা হবে ১০ হাজার ‘সয়েল হেল্থ কার্ড’

মাটি কেমন, চাষিকে জানিয়ে দেবে কার্ড

জব কার্ড, স্বাস্থ্যবিমার কার্ড, আধার কার্ড আগেই ছিল। এ বার মাটির চরিত্র কেমন, তা জানাতে এসে গেল ‘সয়েল হেল্থ কার্ড’।

প্রশান্ত পাল
শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৬ ০১:২৪
Share: Save:

জব কার্ড, স্বাস্থ্যবিমার কার্ড, আধার কার্ড আগেই ছিল। এ বার মাটির চরিত্র কেমন, তা জানাতে এসে গেল ‘সয়েল হেল্থ কার্ড’।

কার্ডে উল্লেখ থাকবে সংশ্লিষ্ট কৃষকের জমির বা মাটির স্বাস্থ্যের বিশদ হাল হকিকত। হেল্থ-কার্ডে যে ভাবে প্রেশার, সুগার, রক্তের গ্রুপ, ওজন, উচ্চতা ইত্যাদির উল্লেখ থাকে, সে ভাবেই ওই কার্ডে থাকবে জমির মাটির বিভিন্ন উপাদানের কথা। পুরুলিয়ার এক কৃষি কর্তার কথায়, ‘‘বিজ্ঞান ভিত্তিক চাষের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে গ্রামের চাষিদের হাতে ওই স্বাস্থ্য কার্ড তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক।’’

জমিতে সার দিতে হবে, কিন্তু কতটা দেবেন? রাসায়নিকই বা কতটা দিতে হবে? — মাটির প্রকৃতি না জানায় এমন নানা সমস্যায় পড়েন বহু কৃষিজীবী। পুরুলিয়াতেও খুঁজলেই মেলে এমন চাষি। একটু যাঁদের সঙ্গতি রয়েছে তাঁরা যে মাটির নমুনা পরীক্ষা করিয়ে নেবেন সে উপায়ও নেই। কেননা জেলায় তেমন কোনও পরীক্ষাগারও নেই। তাই আন্দাজে ভর করেই জমিতে সার দেন তাঁরা। কৃষিবিজ্ঞানীদের মত, তাতে ফলন কম হয়। মাটির স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হয়।

কেন?

খুলে বললেন কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের অধীন পুরুলিয়া জাহাজপুর কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের গবেষক তথা কৃষি বিজ্ঞানী মানসকুমার ভট্টাচার্য। তিনি জানাচ্ছেন, মাটিতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, অর্গানিক কার্বন, পটাশ, অম্লত্ব, পটাসিয়াম, জিঙ্ক, বোরন, আয়রন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, সালফার-সহ নানা উপাদান থাকে।

তিনি বলেন, ‘‘অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ চাষি যে জমিতে চাষ করছেন তিনি জানেনই না তাঁর চাষযোগ্য জমিতে কোন উপাদান কতটা পরিমাণে রয়েছে। জমি চাষ করার সময় চাষি সচরাচর স্থানীয় সার-কীটনাশক বিক্রেতা বা কৃষি দফতরের সঙ্গে যুক্ত লোকজনের উপর নির্ভর করেন।’’

মানসবাবুর কথায়, মাটির উপাদানের উপরই নির্ভর করে কোন জমিতে কতটা পরিমাণ সার প্রয়োগ করা দরকার। পরীক্ষায় দেখা গেল কোনও জমিতে পটাশিয়াম বেশি রয়েছে। সেখানে পটাশ দেওয়ার প্রয়োজনই নেই। আবার দেখা গেল কোনও জমিতে নাইট্রোজেন যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। সেখানে এই সার প্রয়োগ করা অর্থহীন। বরং তার কু-প্রভাব পড়ে ফলনে।

অকারণে মাটিতে কোনও উপাদান বেশি হয়ে গেলে যতটা পরিমাণ ফলন পাওয়ার কথা ছিল ততটা ফলন পাওয়া যায় না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয় চাষিকে।

এখানেই কার্ডের উপযোগিতা।

চাষির কাছে নিজের জমির হেলথ-কার্ড থাকলে তাঁর পক্ষে জমির চরিত্র বোঝা সম্ভব হবে। তিনি আগেভাগেই জেনে থাকবেন তাঁর জমিতে ঠিক কোন জাতীয় সার, কতটা প্রয়োগ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি সেই কার্ড দেখে বিশেষজ্ঞেরাও বলে দিতে পারবেন কোন ফসলের ক্ষেত্রে তাঁকে কোন সার প্রয়োগ করতে হবে। বা আদৌ সার প্রয়োগের প্রয়োজন রয়েছে কিনা!

কৃষি দফতরের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়ায় দশ হাজার চাষির হাতে এই কার্ড তুলে দেওয়া হবে। রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় এই কাজ শুরু হচ্ছে। জানা গিয়েছে, প্রতি দশ হেক্টর জমি (৭৫ বিঘা) থেকে মাটির নমুনা সংগ্রহ করে মাটি পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। সব মিলিয়ে তিন বছর ধরে প্রক্রিয়াটি চলবে। রাজ্য কৃষি দফতরের সহায়তায় জেলার বিভিন্ন ব্লকের গ্রাম থেকে নমুনা সংগ্রহের কাজ করা হবে। সংশ্লিষ্ট জমির খতিয়ান, দাগ নম্বর ও অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশ কার্ডে উল্লেখ থাকবে। মাটি পরীক্ষা করা হবে যে যন্ত্রে সেই ‘মৃগা পরীক্ষক’ নামের যন্ত্র ইতিমধ্যেই পুরুলিয়ায় পৌঁছে গিয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার কিছু চাষির হাতে এই কার্ড তুলেও দেওয়া হয়েছে।

এই কার্ড পেয়ে খুশি চাষিরা। পুরুলিয়া ২ ব্লকের মালথোড় গ্রামের চাষি ফণিভূষণ মাহাতো বলেন, ‘‘চাষবাস করেই তো জীবিকা নির্বাহ হয়। কিন্তু এ ভাবে মাটির উপাদান পরীক্ষা করে চাষবাসের কথা কখনও ভাবিনি।’’ খুশি পুরুলিয়া ২ ব্লকের বাঁধগড় গ্রামের চাষী পরিবারের সদস্য চন্দনা মাহাতো, লক্ষ্মী কর্মকার বা দুমদুমি গ্রামের সরস্বতী মাহাতোরাও। এই প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন পুরুলিয়ার সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

soil card purulia health card
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE