Advertisement
E-Paper

কর্তাদের পরিদর্শনে বেআব্রু হাসপাতাল

সুপার স্পেশ্যালিটি হসপিটাল, মেডিক্যাল কলেজের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন নেতা-মন্ত্রীরা। কিন্তু, যাকে আশ্রয় করে এত ঢক্কা নিনাদ, জেলার সেই গুরুত্বপূর্ণ রামপুরহাট জেলা হাসপাতালের ভিতরের বেহাল ছবিটা ফের সামনে চলে এল।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৯
ল্যাব পরিষ্কারে হাত লাগাল পরিদর্শক দল।

ল্যাব পরিষ্কারে হাত লাগাল পরিদর্শক দল।

সুপার স্পেশ্যালিটি হসপিটাল, মেডিক্যাল কলেজের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন নেতা-মন্ত্রীরা। কিন্তু, যাকে আশ্রয় করে এত ঢক্কা নিনাদ, জেলার সেই গুরুত্বপূর্ণ রামপুরহাট জেলা হাসপাতালের ভিতরের বেহাল ছবিটা ফের সামনে চলে এল। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জঞ্জাল, জরুরি যন্ত্রপাতির বেহাল দশা, অবাঞ্ছিত লোকেদের আনাগোনা— শনিবার এমনই নানা অব্যবস্থার ছবি ধরা পড়ল হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা স্বাস্থ্য-কর্তাদের চোখে। যার জন্য অসন্তুষ্ট কর্তাদের কাছ থেকে ধমকও খেতে হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

হাসপাতালের ‘কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স ইন্টারন্যাল অ্যাসেসমেন্ট’ করতে এসেছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার ডেপুটি ডিরেক্টর অদীপ ঘোষ এবং সহকারী স্বাস্থ্য অধিকর্তা (প্রশাসন) সন্দীপ সান্যাল-সহ স্বাস্থ্য দফতরের অন্যান্য আধিকারিকেরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন দফতরের বীরভূম জেলা কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগের কর্মীরাও। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ জরুরি বিভাগে ঢুকতেই নীচের তলার ড্রেসিং রুমে স্তুপীকৃত জঞ্জাল নজরে আসে পরিদর্শক দলের। তা দেখে কর্মীদের ধমক দেন স্বাস্থ্য কর্তারা। এর পরে পুরুষ বিভাগ, প্রসূতি বিভাগ, মহিলা বিভাগ— সর্বত্র রোগীর শয্যার নীচে ও আশপাশে জঞ্জাল দেখে হাসপাতালের পরিস্কার পরিচ্ছনতা নিয়ে অ্যাসিন্ট্যান্ট সুপারদের কাছে প্রশ্ন তোলে পরিদর্শক দল।

সেখান থেকে মহিলা বিভাগে পৌঁছলে পরিষেবা নিয়ে রোগীদের নানা প্রশ্নের সামনে পড়েন স্বাস্থ্য কর্তারা। এক জন রোগীর পরিজন কর্তাদের কাছে বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষা করে আসার কাগজও দেখান। আর এক জন আবার হাসপাতালে সরবরাহ করা ওষুধ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তোলেন। প্রতি বিষয়ই নোট করে নেন দৃশ্যতই রুষ্ট স্বাস্থ্য কর্তারা। প্রসূতি বিভাগে পৌঁছলে আরও একটি অব্যবস্থা ধরা পড়ে পরিদর্শক দলের। রোগীদের ছুটি দেওয়ার পরে হাসপাতালে থাকা নথিতে চিকিৎসকদের স্বাক্ষর, প্রয়োজনীয় ট্রিটমেন্টের কথা— কোনওটিই দেখতে না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য কর্তারা।

ওয়ার্ডে ঘুরছে বিড়াল। —সব্যসাচী ইসলাম।

প্রসূতি বিভাগ থেকে বেরিয়ে এক পরিদর্শক হাসপাতালের ভিতরে বিভিন্ন বিভাগে রোগীর আশপাশে অবাঞ্ছিত লোকেদের ঢুকে থাকা নিয়ে সুপারের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হাসপাতালে ভর্তি রোগীকে দেখার ক্ষেত্রে অল্প সময়ের জন্য মাত্র এক জনকেই প্রবেশ করানোর নির্দেশ দেন ওই কর্তা। শিশুবিভাগে পৌঁছল, তখন পুরুষ বিভাগে দেখা গেল পড়ে থাকা জঞ্জাল পরিষ্কারে ব্যস্ততা তটস্থ কর্মীদের। সেখানে যদিও রোগীর শয্যার ঠিক পাশেই দেখা গেল বিড়ালের অবাধ আনাগোনা!

হাসপাতালের ছোট পরিসরের ব্লাড ব্যাঙ্কের বর্তমান পরিকাঠামোও সন্তুষ্ট করতে পারেনি পরিদর্শক দলকে। কর্তারা সুপারকে পরিকাঠামো আরও উন্নত করার কথা বলেন। ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরাও উন্নত মানের ব্লাড ব্যঙ্কের জন্য পৃথক ভাবে অ্যালাইজা রুম, রোগীদের পৃথক বসার ঘর, টেস্টিং রুম, স্টেরিলাইজেশন রুম তৈরি করা দরকার বলে পরিদর্শক দলকে জানান। ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিকাঠামোর উন্নতি দরকার বলে আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল ড্রাগ কন্ট্রোল বোর্ডও।

সেখান থেকে প্যাথোলজি বিভাগ এবং হাসপাতালের কিচেন রুমে গিয়ে নানা অব্যবস্থা খুঁজে পায় পরিদর্শক দল। প্যাথোলজি রুমের ভিতর পুরনো যন্ত্রপাতি, ইট, হিটার রেখে দেওয়ায় কর্মীদের নানা ভাবে বকাঝকা করতে দেখা যায় এক স্বাস্থ্য কর্তাকে। প্রায় আঁধারে ঢাকা কিচেনে গিয়ে আরও বেশি আলো ব্যবহার করার নির্দেশ দেয় দলটি। পাশাপাশি রান্নার জন্য ব্যবহৃত নুন ও তেলের মান যাচাই করার জন্য প্যাকেট দেখতে চাইলে স্বাস্থ্য কর্তাদের তা দেখাতে পারেননি রান্নার কর্মীরা। রান্নাশালার ঠিকাদারকে দুপুরে সুপার ও কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য ডেকে পাঠানোর নির্দেশ দেন ক্ষুব্ধ ওই স্বাস্থ্য কর্তারা। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিদর্শন শেষে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ভবনে চালু হওয়া বহির্বিভাগ দেখতে যায় দলটি। চালু না হওয়া ইন্ডোর বিভাগের কাজকর্ম কেমন এগোচ্ছে, তা-ও দেখেন তাঁরা।

পরিদর্শন শেষে সুপার ও বাকিদের নিয়ে বৈঠকে বসেন ওই স্বাস্থ্য কর্তারা। যদিও সেই বৈঠকে কী হয়েছে, তা নিয়ে কেউ মুখ খোলেননি। বৈঠক থেকে বেরিয়ে অদীপবাবু বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পরিদর্শনের রিপোর্ট দেওয়া হবে। এর বেশি কিছু বলার এক্তিয়ার আমার নেই।’’ হাসপাতালের এমন অব্যবস্থা কেন? তা আর খোলসা করেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুপার সুবোধকুমার মণ্ডল শুধু বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ভবন থেকে ওই কর্তারা পরিদর্শন করেছেন। ওঁদের নির্দেশ মতো কাজ করা হবে।’’

poor condition Hospital Inspection
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy