ফাইল চিত্র।
প্রশাসনিক বৈঠক ও কর্মিসভা—দু’জায়গাতেই ‘জঙ্গলসুন্দরী’ কর্মনগরীতে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ ও তাকে ঘিরে কর্মসংস্থানের কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, রঘুনাথপুরের ওই শিল্পনগরী গড়ে উঠলে পুরুলিয়া জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ছবিটাই বদলে যাবে। তবে তাঁর এই দাবি ঘিরে শুরু হয়েছে চাপান-উতোর। বিরোধীদের একাংশের দাবি, ২০২১-র ফেব্রুয়ারিতে শিল্পনগরী গড়ার ঘোষণার পরে, প্রায় দেড় বছর পেরোতে চললেও নতুন করে বিনিয়োগ কার্যত আসেনি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার অবশ্য দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী যা বলেন, তা করে দেখান। তাঁর কথামতো রঘুনাথপুরের শিল্পনগরীতে ধাপে ধাপে বিনিয়োগ হবে।”
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে, অন্তর্বর্তী বাজেটে রঘুনাথপুরে শিল্পনগরী তৈরির কথা ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। বাজেট-নথিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, এক দিকে ডানকুনি থেকে বর্ধমান, দুর্গাপুর হয়ে আসানসোল এবং অন্য দিকে বড়জোড়া, বাঁকুড়া হয়ে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর পর্যন্ত বিশেষ ‘শিল্প করিডর’ তৈরি হচ্ছে। ওই করিডরে পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুরে রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমের ২,৪৮৩ একর জমিতে রাজ্যের প্রথম শিল্পনগরী, ‘জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরী’ গড়ে তোলা হবে। শিল্পনগরীর পরিকাঠামো গড়তে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়-বরাদ্দের প্রস্তাব বাজেটে দেওয়া হয়েছিল।
তার পরে, বারে বারে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের বক্তব্যে উঠে এসেছে শিল্পনগরীর প্রসঙ্গ। মাস দুয়েক আগে, সাঁতুড়িতে একটিইস্পাত কারখানার উদ্বোধনে এসে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, রঘুনাথপুরের শিল্পনগরীতে বিনিয়োগ করবে পাঁচটি বড় মাপের ইস্পাত প্রস্তুতকারক সংস্থা। ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজ়নেস সামিট’ (বিবিজিএস)-এ ওই পাঁচটি সংস্থার সঙ্গে রাজ্যর ‘মউ’ সই হবে, দাবি করেছিলেন তিনি। গত সোমবার প্রশাসনিক বৈঠক ও পরে কর্মিসভাতেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রঘুনাথপুরে শিল্পনগরী হচ্ছে। ৭২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। সেখানে লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়েরা চাকরি পাবে। আর বাইরে যেতে হবে না। এখানেই পড়াশোনা করবে। এখানেই চাকরি করবে।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদকপ্রদীপ রায়ের দাবি, বাম আমলে রঘুনাথপুরে শিল্পস্থাপনে জমি অধিগ্রহণ করে কয়েকটি সংস্থাকে দেওয়া হয়েছিল। বাকি জমি রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমের হাতে আছে। সেখানেই শিল্প গড়ার কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বাম আমলে যে সংস্থাগুলিকে শিল্পস্থাপনে জমি দেওয়া হয়েছিল, রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে, তারা বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়েছে। প্রদীপের অভিযোগ, “জঙ্গলসুন্দরী কর্মনগরীর নামে ‘কুমির ছানা’ দেখাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। নতুন কোনও শিল্পসংস্থা বিনিয়োগ করেনি। তৃণমূলের শিল্প গড়ার সদিচ্ছাই নেই। রঘুনাথপুরের শিল্প-সম্ভাবনা নষ্ট করেছে তৃণমূল। এখনও হাজার হাজার বেকার যুবক কাজের সন্ধানে ভিন্ রাজ্যে যাচ্ছেন।”
বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গারও কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী কখনও রঘুনাথপুরে শিল্প হাব, কখনও শিল্পতালুক গড়ার কথা বলেন। এ বার সেটা বদলে হয়েছে শিল্পনগরী। নাম বদলায়। মউও সই হয়। কিন্তু বিনিয়োগ আসে না। আসলে যে দল রাজ্য থেকে টাটার মতো সংস্থাকে তাড়ায়, তাদের উপরে কোনও শিল্পসংস্থা ভরসা করতে পারে না। রঘুনাথপুরে শিল্প গড়ার নামে ধারাবাহিক ভাবে ভাঁওতাদিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।”
সৌমেনের অবশ্য দাবি, গত কয়েক বছরে রঘুনাথপুরে বিনিয়োগ করেছে একটি বড় মাপের সিমেন্ট প্রস্তুতকারী সংস্থা। তারা রাজ্যের সব চেয়ে বড় সিমেন্ট কারখানাটি তৈরি করছেন রঘুনাথপুরেই। বিনিয়োগে আগ্রহী একটি ইস্পাত সংস্থা। সঙ্গে একটি শিল্প সংস্থা সাঁতুড়িতে বন্ধ থাকা ইস্পাত কারখানা অধিগ্রহণ করে উৎপাদন শুরু করেছে। তাঁর দাবি, “শিল্পনগরী তৈরির ঘোষণার পরে, রঘুনাথপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে দশ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে। ধাপে-ধাপে ৭২ হাজার কোটি টাকাই বিনিয়োগ হবে। কর্মসংস্থানের জন্য বাইরে যেতে হবে না জেলার যুবকদের।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy