একশো দিনের শ্রমিকদের সঙ্গে মানবাজার ১ সমিতির সভাপতি।—নিজস্ব চিত্র।
পরনে ধোপধুরস্ত পোশাক। ত্রিপলের উপরে তাঁরা সারি দিয়ে বসেছিলেন। একে একে তাঁদের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে গেলেন এক মহিলা। হাতে তুলে দিলেন মিষ্টির প্যাকেট। তবে এটা নিছক আর পাঁচটা সাধারণ গণভাইফোঁটার উৎসব নয়। ফোঁটা নিলেন যাঁরা, তাঁরা ১০০ দিনের শ্রমিক। আর যিনি ফোঁটা দিলেন, তিনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। প্রশাসক ও শ্রমিকের দূরত্ব ঘুচিয়ে মঙ্গলবার ভাইফোঁটার নির্মল আনন্দে মেতে উঠলেন সবাই। বিনিময়ে নতুন ভাইদের কাছ থেকে নিজের বোনেদের সম্মান রক্ষার জন্য একটি করে শৌচালয় তৈরি করে দেওয়ার শপথ আদায় করিয়ে নিলেন নতুন দিদি কবিতা মাহাতো।
নিজের অফিস চত্বরেই এই ভাইফোঁটার আয়োজন করেছিলেন মানবাজার ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কবিতাদেবী। রেওয়াজ মেনে কাঁসার থালায় বিভিন্ন ধরনের ফল, মিষ্টি, মাটির প্রদীপ ও চন্দন— সব উপকরণই মজুত ছিল। প্রথমে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কবিতা মাহাতো, পরে স্থানীয় বিসরি পঞ্চায়েতের প্রধান লতা সিং শ্রমিক ভাইদের ফোঁটা দিলেন। ছোটরা পায়ে হাত দিয়ে প্রণামও করলেন। ফোঁটা পড়ল উৎসবে উপস্থিত থাকা বিডিও এবং কর্মীরাও।
১০০ দিনের কাজের শ্রমিক মানবাজার থানার গোলকিডি গ্রামের অপিন্দ মুন্ডা, গুরুপদ মুন্ডা, গণেশগোড়া গ্রামের সুবল বাউরি, পাথরমহড়া গ্রামের শুকদেব বাউরি আয়োজন দেখে অবাক। তাঁরা বলেন, ‘‘ভাইফোঁটা কী তাই-ই জানতাম না। দিদি ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করছেন, এমন ব্যাপার কোনওদিন দেখিনি। মনটা ভরে গেল।’’ অনেকেই স্বীকার করলেন, তাঁরা এত সম্মান, এত ভালবাসা কোনওদিন পাননি।
একই অনুভূতি নতুন দিদিদেরও। যেমন বিসরি পঞ্চায়েতের প্রধান লতা সিং বলেন, ‘‘আমাদের তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাইফোঁটার চল নেই। তাই এ দিন শ্রমিক ভাইদের কপালে ফোঁটা দিতে পেরে সত্যি ভাল লাগছে। এ এক অন্য ধরনের অনুভূতি।’’ সুবল, শুকদেবরা জানান, ভাই-বোনের সম্পর্ক নিবিড় করতে এ ধরনের উৎসব রয়েছে বলে তাঁরা জানতেন না। এ দিনের অনুষ্ঠানে না এলে তাঁদের কাছে অনেক কিছু অজানা থেকে যেত।
সভাপতি বলেন, ‘‘কে, কোন পদে কাজ করছেন, সেটা বড় কথা নয়। এ দিনটা শুধু ভাই-বোনদের জন্য। এই অনুষ্ঠানে সবাই খোলা মনে এসেছিলেন। আনন্দ পেয়েছেন। এটাই চেয়েছিলাম।’’
এ দিন পঞ্চায়েত সমিতির চত্বরে ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মানবাজার মসজিদ কমিটির সম্পাদক শেখ জিয়াউল রহমান, ব্লক অফিসের অস্থায়ী কর্মী শেখ জব্বরও। শেখ জিয়াউল বলেন, ‘‘ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানে দিলে সম্পর্কের বাঁধন আরও মজবুত হয়।’’
তবে, এই অনুষ্ঠানের মাত্রা আরও খানিকটা বেড়ে গিয়েছে পরিচ্ছন্নতা নিয়ে শ্রমিকদের শপথ বাক্য পাঠ করানোয়। বিডিও সত্যজিৎ বিশ্বাস ফোঁটার আগে তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করান। শ্রমিকেরা জবকার্ড হাতে নিয়ে নিজের বোনদের জন্য একটি করে শৌচাগার গড়ে দেওয়ার শপথ নেন। বিডিও তাঁদের শপথ করান— ১) আমরা নিজেদের পরিচ্ছন্ন রাখব। ২) আমাদের চারপাশকে পরিচ্ছন্ন রাখব। ৩) যেখানে সেখানে নোংরা ফেলব না। ৪) খোলা জায়গায় মলত্যাগ করব না। ৫) সাবান দিয়ে হাত ধোব। ৬) খাবার জল স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পরিবেশন করব। ফেরার পথে শ্রমিকেরা বলেন, ‘‘এ দিন যে কথা দিলাম, তা রাখতেই হবে। না হলে বোনদের সম্মান থাকবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy