থমকে: (বাঁ দিক থেকে) ছাতনার ঝাঁটিপাহাড়ি স্টেশনে দাঁড়িয়ে ভুবনেশ্বর-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস। কাঁটাডি স্টেশনের সামনে রেল লাইনে ধামসা মাদল নিয়ে বসে পড়েছেন ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির কর্মী সমর্থকেরা। নিজস্ব চিত্র
এমনিতেই ১১ ঘণ্টারও বেশি দেরিতে চলছিল। রবিবার সন্ধ্যার বদলে ভুবনেশ্বর-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস বাঁকুড়া স্টেশনে পৌঁছেছিল সোমবার সকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ। হাড় হিম করা ঠান্ডা হাওয়া সহ্য করে রাতভর স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন যাত্রীরা। ট্রেন উঠে ভাবলেন স্বস্তি!
না। ভোগান্তির আরও বাকি ছিল। বাঁকুড়া স্টেশন থেকে রওনা দিয়ে ছাতনার ঝাঁটিপাহাড়ি স্টেশনে গিয়ে থমকে গেল ট্রেন। অবরোধ চলছে। ঘণ্টা তিনেক ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার পরে রুট বদলে পিছিয়ে খড়্গপুর। সেখান থেকে অন্য পথে নয়াদিল্লি।ওই ট্রেনের যাত্রী বিষ্ণুপুরের গোস্বামীপাড়ার বাসিন্দা প্রণবেশ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা আগে হয়নি। স্টেশনে বরফের মতো ঠান্ডা হাওয়া হাড়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছিল। খুব দুর্ভোগ হল।’’
সোমবার রেল অবরোধের জেরে আটকে পড়া মানুষজন অসহায় হয়ে ছড়িয়ে ছিলেন বাঁকুড়া স্টেশন চত্বরে। অবরোধের জেরে এ দিন বাতিল হয়ে যায় খড়্গপুর-হাতিয়া লোকাল, বিষ্ণুপুর-ধানবাদ লোকাল এবং আদ্রা-মেদিনীপুর মেমু ট্রেন। শালিমার-আদ্রা সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস খড়্গপুর থেকেই ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আদ্রা থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় রাঁচী থেকে হাওড়া যাওয়ার ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস। এর ফলে চরম নাকাল হতে হয়েছে যাত্রীদের।
এ দিন সকালে বাঁকুড়া স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল, বাইরে টিকিট কাউন্টারের সামনে জটলা পাকিয়ে বিক্ষপ্ত ভাবে বসে রয়েছেন অনেকে। অশীতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে শিশু— সবাই রয়েছে তার মধ্যে। স্টেশনের ভিতরেও একই ছবি। যাত্রীদের ঠাসা ভিড় ছিল স্টেশন চত্বর জুড়ে। একের পর এক ট্রেন বাতিল হওয়ার খবর শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কিছুই করার ছিল না তাঁদের। কলকাতা মেডিক্যালে চিকিৎসা করাতে যাওয়ার জন্য এ দিন সকালে পুরুলিয়া এক্সপ্রেস বাঁকুড়া স্টেশনে এসেছিলেন ধলডাঙার প্রৌঢ় অবনী নন্দী। অবরোধের জন্য তাঁর যাওয়া হয়নি আর। অবনীবাবু বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষকে এই ভাবে হয়রান হতে হল। অনেক কষ্টে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়েছিলাম। আবার কবে পাব জানি না।’’ বাঁকুড়া স্টেশন ম্যানেজার সারাসুদ্দিন মল্লিক বলেন, “সকাল থেকেই যাত্রীদের নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে আমাদের। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অফিসে এসে।”
দুপুর ১৫টা ৫০ মিনিটে যখন অবরোধ ওঠার খবর শোনা যায়। হাঁফ ছাড়েন সবাই। তবে ততক্ষণে যা দেরি হয়েছে তাতে অনেকেরই গন্তব্যে যাওয়া আর বাড়ি ফিরে যাওয়া একই ব্যাপার হয়ে পড়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy