Advertisement
০৪ মে ২০২৪

হরিণের প্রাণ বাঁচাতে লাঠি হাতে টহল দিচ্ছে গ্রাম

‘গায়ের মাংস তার নিজেরই শত্রু। হরিণ পালাতে চায়, পিছনে ভুসুকু।’— লিখেছিলেন চর্যার কবি।

সতর্ক: জঙ্গলপথে গ্রামবাসী। নিজস্ব চিত্র

সতর্ক: জঙ্গলপথে গ্রামবাসী। নিজস্ব চিত্র

রথীন্দ্রনাথ মাহাতো 
বান্দোয়ান শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৯ ০১:৩৭
Share: Save:

‘গায়ের মাংস তার নিজেরই শত্রু। হরিণ পালাতে চায়, পিছনে ভুসুকু।’— লিখেছিলেন চর্যার কবি। তার হাজার বছর পরে বান্দোয়ান দেখল— জঙ্গলে ছাড়া পাওয়া হরিণ লোকালয়ের দিকে ঘেঁষলেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে কুকুর। আর লাঠি হাতে সেই কুকুর তাড়াচ্ছেন জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দা।

সম্প্রতি পুরুলিয়ার সুরুলিয়া মিনি জ়ু থেকে ৩০টি চিতল হরিণকে ছাড়া হয়েছিল বান্দোয়ানের নতুনডির জঙ্গলে। লোকালয়ের কাছে ইতিমধ্যেই জখম ছ’টি হরিণকে উদ্ধার করেছেন গ্রামবাসী। পিছন থেকে মাংস খুবলে নেওয়ায় তিনটি হরিণের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে পাহাড়পুর আর নতুনডি গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ দল বেঁধে লাঠিসোটা হাতে পাহারা দিচ্ছেন। যাতে হরিণ জল খেয়ে নিরাপদে ফিরে যেতে পারে লোকালয় থেকে।

এমন একটা পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীর কাজে আশার আলো দেখছে বন দফতর। কেউ কেউ বলছেন সাঁতুড়ি ব্লকের দণ্ডহিত গ্রামের কথা। বেশ কয়েক বছর আগে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিল ওই গ্রামটিও। লাগোয়া পাহাড়ের জঙ্গল থেকে সেখানে নেমে আসত হরিণের পাল। তার মধ্যে একটি হরিণকে জখম করেছিল কুকুর। গ্রামবাসীই উদ্ধার করে, চিকিৎসা করিয়ে জঙ্গলে ফেরানোর বন্দোবস্ত করেছিলেন।

বান্দোয়ানের এই গ্রামগুলিকে আরও কঠিন একটা পরিস্থিতিতে পাশে পেয়েছে বন দফতর। দীর্ঘ দিনের প্রস্তুতির পরে, সাতপাঁচ চিন্তা করেই হরিণগুলিকে ছাড়া হয়েছিল। তার পরেও যে এমনটা হতে পারে, সেই আশঙ্কা তাঁরা করেননি বলেই বন দফতরের কর্তারা এক প্রকার মেনে নিচ্ছেন। হরিণ বাঁচাতে পাহারা দিচ্ছেন বন দফতরের কর্মীরা। বান্দোয়ানের যমুনা বনাঞ্চলের আধিকারিক হীরককুমার সিংহ জানান, নতুনডি আর পাহাড়পুরের মানুষজনকে নজরদারি চালানোর জন্য বলা হয়েছে। এর পারিশ্রমিকও মিলবে।

তবে হরিণগুলি আক্রান্ত হওয়ার পরে প্রথম থেকেই উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে ওই গ্রামগুলির বাসিন্দাদের। রাতবিরেতে তাঁরা ছুটে গিয়েছেন লাঠি হাতে কুকুর তাড়াতে। পুকুরে পড়ে যাওয়া হরিণকে উদ্ধার করতে নেমেছেন জলে— এমন নানা নজিরই তৈরি হয়েছে এই কয়েক দিনে। বৃহস্পতিবার থেকে দু’টি দলে ভাগ হয়ে পাহাড়পুর ও নতুনডির দশ জন করে বাসিন্দা সকাল-সন্ধ্যা পাহারা দিচ্ছেন।

নতুনডির বাসিন্দা শ্রীমন্ত সোরেন, সাধন হাঁসদারা জানাচ্ছেন, জল খেতে হরিণগুলি পুকুরে আসছিল। আর তখনই হামলা চালাচ্ছিল সাত-আটটি কুকুর। তাঁরা টহল দেওয়ার সময়ে বেশ কয়েক বার এমনটা দেখেছেন। লাঠি নিয়ে তাড়া করে কুকুরগুলিকে খেদিয়ে দিয়েছেন গ্রামের দিকে। আর হরিণদের নিরাপদে বনে ফেরা পর্যন্ত ঠায় অপেক্ষা করেছেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বৃহস্পতিবার সকালে যখন লাঠিসোটা নিয়ে বেরিয়েছেন, দেখেছিলেন কুকড়ুডাবর গ্রামের পথে পুকুরের ধারে একটি জখম হরিণ পড়ে রয়েছে। তার পরে আর কোনও হরিণের গায়ে আঁচড় পড়েনি। বন দফতর জানাচ্ছে, হরিণগুলিতে ধাতস্থ করে তুলতে আরও অন্তত সাত-আট দিন পাহারা থাকবে। তার পরে অবস্থা বুঝে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিএফও (পুরুলিয়া দক্ষিণ) অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কুকুরের দল আবার যাতে হরিণের উপরে হামলা চালাতে না পারে, সে জন্য সব রকম ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE