Advertisement
১১ মে ২০২৪

মিনিট ক্যামেরা থেকে ডিজিটাল

১৯২৯ সালে বাংলাদেশের বরিশালের স্বরূপকাঠিতে জন্ম। বাবা ছিলেন সরকারি চিকিৎসক। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই ওঁকে হারাই। সংসারে অনটন শুরু হয়। পাড়াশোনায় ইতি পড়ে যায় ক্লাস নাইনেই।

বিনয় গুহ (বিশিষ্ট ফোটোগ্রাফার)
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৫ ০০:৪০
Share: Save:

১৯২৯ সালে বাংলাদেশের বরিশালের স্বরূপকাঠিতে জন্ম। বাবা ছিলেন সরকারি চিকিৎসক। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই ওঁকে হারাই। সংসারে অনটন শুরু হয়। পাড়াশোনায় ইতি পড়ে যায় ক্লাস নাইনেই। সুপারির ব্যবসা, বিস্কুটের দোকান, রেশনের দোকানে কাজ করার পরে কাজ পাই একটি চা কোম্পানিতে। মাইনে ৪৫ টাকা। ওই কাজের জন্য লখনউ, নাগপুর, রায়পুরে গিয়েছি। তখনই দেখা হয় এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের সঙ্গে। তিনিই কোনও কারিগরি বিদ্যা শেখার পরামর্শ দেন। ওঁকে জানাই, আমার এক দাদু আমাকে ফোটোগ্রাফি শেখার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু, আমি রাজি হইনি। শুনেই ওই বিচারকের প্রতিক্রিয়া ছিল— “ওহ! আইডিয়াল।” কী যে ছিল তাঁর ওই কথায়। আমি রোমাঞ্চিত হই। আর ভাবিনি। ১৯৪৫ সালে খুলনায় গিয়ে সেই দাদু প্রসন্নকুমার দাসের কাছে ছবি তোলা শিখি। মায়ের গয়না বেচে ৬০ টাকা দিয়ে কিনি একটা ‘মিনিট ক্যামেরা’। ওই বছরই কলকাতায় এসে একটি স্টুডিওয় কাজে যোগ দিই। এক দিকে স্টুডিও-র কাজ, অন্য দিকে ছবি তোলা, দুই-ই চলছিল। মিনিট ক্যামেরা নিয়েই দু’বার গঙ্গাসাগর মেলায় গিয়ে বন্ধুদের ও অন্যান্যদের ছবি তুলে পরিচিতি পাই। মনে আছে, স্বাধীনতার ঠিক আগে নেতাজির স্যাল্যুট দেওয়ার ছবির চাহিদা ছিল আকাশছোঁয়া। বি-২ সাইজের ১০০টা ছবি প্রিন্ট করে দিতে পারলে মিলত অতিরিক্ত ১ টাকা। স্টুডিও-র বাইরে সেই কাজ করতে থাকি। আয়ের টাকা জমিয়ে ১৯৪৭ সালে ৬০০ টাকা দিয়ে কিনি আমার প্রথম প্লেট ক্যামেরা (Voigtander)। সেই বছরই সিউড়িতে মাসির বাড়িতে আসি। এই শহরে তখনও কোনও স্টুডিও ছিল না। টিনবাজারে একটা দোতলা ঘর ভাড়া নিয়ে স্টুডিও গড়ে পাকাপাকি ভাবে সিউড়িতে চলে আসা। তবে, প্রথমেই পসার জমেনি। তাই মাঝে মধ্যেই দু’চার মাস বাঁকুড়ায় মামার কাছে গিয়ে ওখানকার গ্রামে ছবি তুলতাম। এখানে পসার না জমার পিছনে সব চেয়ে বড় কারণ ছিল বিদ্যুৎ না থাকা। ১৯৪৯ সালে কষ্ট করে প্রিন্ট করার সমস্যা মিটল। সিউড়িতে বিদ্যুৎ এল। কিনলাম এনলার্জার।

ক্যামেরার প্রযুক্তি বদলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়েছি। প্লেট ক্যামেরা পর এল ১২০, ৩৫ ফিল্ম ক্যামেরা। রোলিফ্যাক্স, রোলিকট, ইয়াসিকা ৬৩৫-সহ একাধিক ক্যামেরা। ভাগ্যের সাহায্যও পেয়েছি। নরওয়ে থেকে বক্রেশ্বরে গবেষণা করতে আসা এক সাহেবের লাইকা ক্যামেরার শাটারলক হয়েছিল। সময়টা ১৯৬০-’৬১ হবে। উনি আমাকে ক্যামেরাটা সারাতে দিয়েছিলেন। ডার্করুমে গিয়ে একটু নাড়াচাড়া করতেই খুলে গিয়েছিল লক। আপ্লুত হয়ে পরে উনি আমাকে একাধিক ক্যামেরা, ফ্ল্যাস, এক্সপোজার মিটার উপহার দেন। ফোটোগ্রাফার হিসেবে সিউড়িতে নামডাকও হচ্ছিল। আমার তোলা এক ছবিতে মেয়েদের বিয়ে হয়, এমন একটা মিথ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। শহরের এমন কোনও বনেদি বাড়ি নেই, যেখানে আমার তোলা ছবি পাওয়া যাবে না। সত্তরের দশকের গোড়ায় জেলা প্রশাসন আমাকে ‘পাবলিসিটি ফোটোগ্রাফারে’র মর্যাদা দেয়। ওই সময় ইন্দিরা গাঁধী, লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মতো বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির ছবি তুলেছি। রঙিন ফিল্ম ও প্রিন্টের পরে যখন ডিজিটাল টেকনোলজি এল, সিউড়িতে আমিই প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা ও কম্পিউটার ব্যবহার করে পাসপোর্ট ছবি করা শুরু করি। আধুনিক যুগের নিকনের একটা ডিজিটাল ক্যামেরা কিনেছি। ওটা দিয়ে মাঝেমধ্যেই ছবি তুলি। কিন্তু, প্রথম দিন থেকে সঙ্গী পুরনো ক্যামেরাগুলিই আমার প্রাণ। ২০০৪ সালে স্টুডিও যাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু, ক্যামেরা ছাড়িনি।

এই সংক্রান্ত আরও খবর:

পুরনো দিনের ছবি

পুরনো দিনের বিভিন্ন ক্যামেরা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Photographer Binay Guha camera Suri birbhum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE