ইন্টারনেটে পুরনো মোবাইল কিনতে গিয়ে নগদ টাকা বিক্রেতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করেছিলেন উত্তরপ্রদেশের এক ব্যক্তি। তবে টাকা জমা দেওয়ার পরেও বাড়িতে মোবাইল আসেনি। দেরি না করে ঘটনাটি সরাসরি বিষ্ণুপুরের এসডিপিও-র মোবাইলে এসএমএস করে জানান ওই ব্যক্তি। প্রতারণার অভিযোগ পেয়েই তদন্তে নেমে এক যুবককে ধরল পুলিশ।
ধৃত বুবাই ঘোষ সোনামুখীর পাথরমোড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বিষ্ণুপুরের ভড়া কলেজের বাংলা অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্র। পুলিশ জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর এলাকার বাসিন্দা শিবমজী ইন্টারনেটে পুরনো মালপত্র কেনাবেচা করে এমন একটি ওয়েবসাইটে ১৪ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোবাইল ফোন দেখে তা কেনার সিদ্ধান্ত নেন। এর পরেই ওই ফোনের মালিক হিসেবে উল্লেখ থাকা পাত্রসায়রের নারায়ণপুরের বাসিন্দা শক্তি বাগদির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ওই টাকা পাঠিয়ে দেন। কথা ছিল, সাত দিনের মধ্যেই ওই মোবাইল সেট বাড়িতে পাঠানো হবে। অভিযোগ, নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও ওই মোবাইল তাঁর বাড়িতে পাঠানো হয়নি। শিবমজী খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন পাত্রসায়র এলাকাটি বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর মহকুমার মধ্যে। এর পরই এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) লাল্টু হালদারের মোবাইল নম্বর জোগাড় করে এসএমএসের মাধ্যমে গত ২০ অগস্ট বিষয়টি জানান তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, এসএমএস পেয়েই ব্যাঙ্ক থেকে খোঁজখবর নিয়ে এসডিপিও জানতে পারেন, ওই অ্যাকাউন্টের মালিক শক্তিবাবু পাত্রসায়রের নন, সোনামুখীর পাথরমোড়ার বাসিন্দা। পুলিশ শক্তিপদবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে ধৃত বুবাই শক্তিবাবুকে ব্যাঙ্কে নিয়ে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের জনধন যোজনা প্রকল্পে জিরো ব্যালান্সে অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে ছিল। শক্তিবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেনের তথ্য খতিয়ে দেখে পুলিশ জানতে পেরেছে, শিবমজীর পাঠানো ১৪ হাজার টাকা উইথড্রয়াল স্লিপের মাধ্যমে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে শক্তিবাবু নিজে ওই টাকা তুলে না থাকলে টিপছাপ দিয়ে কী ভাবে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য কোনও ব্যক্তি টাকা তুলল।
এসডিপিও বলেন, “এ বিষয়ে এখনই বলতে পারব না। তদন্ত সবে শুরু হয়েছে। ধাপে ধাপে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, বুবাই বছর খানেক আগেও একই রকম ভাবে ইন্টারনেটে পুরনো মাল বিক্রির নামে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে অবশ্য জামিন পান। লাল্টুবাবু বলেন, “এই ঘটনার ক্ষেত্রেও শক্তিপদবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বুবাইয়ের নাম উঠে আসে। বেশ কিছু তথ্য খতিয়ে দেখে এই ঘটনায় আমরা বুবাইয়ের যোগ পেয়েছি। শুধু উত্তরপ্রদেশের ওই ব্যক্তিকেই নয়, বুবাই এ ভাবে বহু মানুষকে প্রতারণা করে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়েছে বলে আমরা তদন্তে জানতে পেরেছি।’’
বুধবার রাতে বুবাইয়ের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে অবাক হন পুলিশকর্মীরা। পাথরমোড়ার মতো গ্রামে বুবাইয়ের বড়সড় বাড়ি বেশ বেমানান। ঝাঁ চকচকে, দামি টাইলস লাগানো বাড়ির চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো। বুবাইয়ের বাড়ি থেকে বিভিন্ন ক্যুরিয়ার কোম্পানির স্ট্যাম্পও উদ্ধার করে পুলিশ। যা দেখে তদন্তকারীদের অনুমান, পুরনো মালপত্র বিক্রির লোভ দেখিয়ে লোক ঠকানো ছাড়াও আরও বেশ কিছু প্রতারণার সঙ্গে বুবাই যুক্ত থাকতে পারে। বুধবার বুবাইকে বাড়ি থেকে আটক করে জেরার করার পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।
বৃহস্পতিবার বিষ্ণুপুর আদালতে তোলা হলে ধৃতের ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতে হয়। আদালত চত্বরে উপস্থিত সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের এড়াতে বুবাই হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢাকার চেষ্টা করছিলেন। প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “আগেও আমাকে পুলিশ ধরেছিস। তখনও ছাড়া পেয়েছিলাম, এ বারও পাব।’’
বুবাই-এর বাবা বা মায়ের সঙ্গে এ দিন চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। পাথরমোড়া এলাকায় বুবাইয়ের পড়শিরা জানাচ্ছেন, বুবাইয়ের বাবা পারিবারিক জমিতে চাষবাস করেন। অথচ সেই পরিবারের এত বড় বাড়ি কী করে হল, তা অজানা গ্রামের লোকের। বুবাইকে দিনের বেলায় বাড়ি থেকে বের হতে দেখা যায় না। রাতে নিজের দামি মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বুবাই। কোথায় যান, কী করেন, তা-ও এলাকাবাসীদের অজানা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বুবাইয়ের এক পড়শি বলেন, “গ্রামের কারও সঙ্গে সেভাবে মেশে না বুবাই। তবে ওর জীবনযাত্রা খুবই বিলাসবহুল। এক সময় বুদ্ধিমান ছাত্র হিসেবে এলাকায় নাম ছিল তার।’’ সেই বুবাই-ই কী ভাবে লোক ঠকানো কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ল তা ভেবে অনেকেই অবাক হচ্ছেন।
অ্যাবেকার প্রতিবাদ। বিদ্যুতের মাসুল বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং পরিষেবা মানোন্নয়নের দাবিতে প্রতীকী পথ অবরোধ করল অ্যাবেকা। বুধবার বাঁকুড়ার লালবাজার এলাকায় ওই অবরোধের পরে লালবাজারের বিদ্যুৎ দফতরে বিক্ষোভও দেখান সংগঠনের সদস্যেরা। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের জেলা সম্পাদক স্বপন নাগ। তিনি বলেন, “বিদ্যুতের ইউনিট পিছু ২৩ পয়সা মাসুল বাড়িয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম। দেশের মধ্যে এ রাজ্যেই বিদ্যুতের দাম সবচেয়ে বেশি। কিন্তু পরিষেবার মান অত্যন্ত খারাপ। আমরা তার প্রতিবাদ করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy