চোরাই ফোনের সূত্রেই বাঁকুড়ায় ধৃত নয় দুষ্কৃতী।—নিজস্ব চিত্র।
লেপ-কম্বল কাঁধে নিয়ে জেলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে চষে বেরাত কয়েকটা লোক। একটা চোরাই ফোনের সূত্র ধরে বাঁকুড়া শহরে সেই কম্বলওয়ালাদের ভাড়া বাড়ির দরজার কড়া নেড়েই তাজ্জব পুলিশ কর্মীরা! ঘরময় চোরাই মোবাইল, গয়না, এমনকী এলইডি টেলিভিশন সেট পর্যন্ত রয়েছে। এ সবই কয়েকদিন আগে তালড্যাংরায় দু’টি গয়নার দোকান থেকে চুরি গিয়েছিল। একে একে ওই দলের ন’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই দলের বিষ্ণুপুরে ভাড়া নেওয়া আরও একটি বাড়ি থেকে আরও কিছু চোলাই মালপত্র উদ্ধার হয়।
তবে ওই দলের আরও দু’জনকে এখনও নাগালে পায়নি পুলিশ। তাদের ধরতে শনিবার উত্তরপ্রদেশ পাড়ি দিল বাঁকুড়া জেলা পুলিশের একটি দল। ধৃতদের কাছ থেকে প্রায় ৯৫ হাজার টাকা, ১০টি মোবাইল ফোন, একটি এলইডি টিভি সেট ও বেশ কয়েক ভরি সোনা ও রুপোর গয়না। সেই সঙ্গে কিছু ধারালো অস্ত্র উদ্ধার হয়।
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘জেলার বেশ কয়েকটি চুরি ও ডাকাতির চেষ্টার ঘটনায় ধৃতেরা জড়িত বলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি। এরা এ রাজ্য তো বটেই, দেশের অন্যান্য রাজ্যেও ওই দলটি বেশ কিছু অপরাধমূলক কাজে যুক্ত বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। দলের বাকিদেরও ধরার চেষ্টা চলছে।’’ এ দিন ওই দলের ৯ জনকে খাতড়া আদালতে তোলা হয়। বিচারক সবাইকে চার দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
বস্তুত চুরি যাওয়া মোবাইল ফোনই পুলিশকে পৌঁছে দেয় দুষ্কৃ়তীদের কাছে। পুলিশ সূত্রে খবর, মাসখানেক আগে গঙ্গাজলঘাটি থানার দুর্লভপুর মোড়ে একটি গ্রামীণ ব্যাঙ্কে ডাকাতির চেষ্টা হয়। কিন্তু বাড়ি মালিকের ঘুম ভেঙে যাওয়ায় তারা ব্যাঙ্কের ভিচরে ঢুকতে পারেনি। বোমা মেরে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভয় দেখিয়ে পালায়। সম্প্রতি তালড্যারা থানা এলাকায় দু’টি গয়নার দোকানেও চুরি হয়। সেখান থেকেই টিভি সেট, মোবাইল ফোন, গয়না ও টাকা চুরি যায়। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, দু’টি ঘটনাতেই একই দল যুক্ত।
পুলিশ চুরি যাওয়া মোবাইল ফোনগুলির সূত্রে ধরে দুষ্কৃতীদের তল্লাশি শুরু করে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, দুষ্কৃতীরা একটি মোবাইলের সিম কার্ড ফেলে নতুন সিম ভরে তা ব্যবহার করছে। সেই ফোনের আইএমইআই নম্বরের সূত্র ধরে পুলিশ দুষ্কৃতীদের গতিবিধি ধরে ফেলে। বাঁকুড়া জেলা থেকেই গ্রেফতার করা হয় প্রকাশ চৌহান নামে ওই দলের একজনকে। পরে ধরা পড়ে ভূপরাম চৌহান, শিশুপাল ভাটি, রাজকুমার সিং, মান সিং, চন্দ্র পাল, তারাচাঁদ চৌহান, ধারা সিং, ধারা সিং চৌহান। সকলেই উত্তরপ্রদেশের বঁদায়ু জেলার বাসিন্দা।
পুলিশের দাবি, প্রকাশকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, চুরি-ডাকাতির উদ্দেশ্যে গোটা জেলাতেই তারা ছক কষে চুরি-ডাকাতি চালাচ্ছিল। আরও বেশ কিছু এলাকায় তাদের চুরির পরিকল্পনা ছিল।
বাঁকুড়া শহরের গোবিন্দনগরে একটি ভাড়া বাড়িতে চারটি ঘর নিয়ে ওই দলের ন’জন মাসখানেক আগে উঠেছিল। তাদের আরও একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল বিষ্ণুপুরের রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়। লেপ, কম্বল ইত্যাদি শীতবস্ত্র নিয়ে তারা বিভিন্ন এলাকায় ফেরি করলে বেরিয়ে ডাকাতির ‘রেকি’ করে আসত। তারপর রাতে সেখানে হানা দিত। বাঁকুড়ার বাড়ি থেকে বাকি আটজনকে কিছুদিন আগে ধরে পুলিশ। সেখান থেকেই চোরাই কিছু মালপত্র উদ্ধার হয়। বিষ্ণুপুরের ভাড়া বাড়ি থেকেও আরও কিছু মালপত্র মেলে। পুলিশ পুরো অপারেশন অত্যন্ত গোপনে চালিয়েছে।
সেপ্টেম্বরে খাতড়ায় একটি এটিএম মেশিন তুলে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। টাকা নিয়ে মেশিনটি মাঠে ফেলে যায়। সেই ঘটনার সঙ্গেও এই দলের যোগ আছে কি না তা দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের এক কর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy