Advertisement
E-Paper

বিধায়কের বাড়িতে কেন পুলিশি হানা

সোনামুখীর সিপিএম বিধায়ক অজিত রায়ের ভাইয়ের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিতর্কে জড়াল পুলিশ। পুলিশের দাবি, বিধায়কের ভাইয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ মদের ব্যবসার অভিযোগ পেয়েই তারা বাড়িতে গিয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৬ ০০:৫৮
দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে পথে অজিতবাবু। শনিবার শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে পথে অজিতবাবু। শনিবার শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

সোনামুখীর সিপিএম বিধায়ক অজিত রায়ের ভাইয়ের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিতর্কে জড়াল পুলিশ। পুলিশের দাবি, বিধায়কের ভাইয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ মদের ব্যবসার অভিযোগ পেয়েই তারা বাড়িতে গিয়েছিল। যদিও অজিতবাবু ও তাঁর ভাই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। শুক্রবার রাতে সোনামুখী থানার ইছারিয়া গ্রামের ওই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও।

পুলিশি তল্লাশির প্রতিবাদে শনিবার সকালে সোনামুখী থানায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখালেন কয়েকশো সিপিএম কর্মী। বিক্ষোভে দলের জোনাল কমিটির সম্পাদক মনোজ চক্রবর্তীর সঙ্গে ছিলেন বিধায়কও। বিক্ষোভকারীদের হাতের প্ল্যাকার্ডে ‘বিধায়কের বাড়িতে পুলিশ অযথা তল্লাশি’ চালিয়েছে, এই মর্মে অভিযোগ ছিল। মাইকে পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে থানা চত্বরে ওই পুলিশের ভূমিকার নিন্দা করেন বিক্ষোভকারীরা।

থানা চত্বরে দাঁড়িয়েই বিধায়ক অজিতবাবু এই ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে অভিযোগ করেছেন, শাসক দলের নির্দেশ মতোই পুলিশ তাঁর বাড়িতে তল্লাশি করতে যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কিছু দিন ধরেই শাসকদলের তরফে আমাকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য চাপাচাপি করা হচ্ছে। কিছু পুলিশকর্মীও আমাকে তৃণমূলে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। মনে হচ্ছে, শাসকদল ও পুলিশ একযোগে বিরোধী দলের বিধায়ক টানতে মাঠে নেমে পড়েছে।’’ ক’দিন আগে একই অভিযোগ তুলে মুর্শিদাবাদে সরব হয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও।

অজিতবাবু জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ জনা ছয়েক পুলিশকর্মী তাঁর বাড়িতে যান। ঘরে ঢুকেই গিয়েই ওই পুলিশকর্মীরা তাঁর ভাই তপন রায়কে ডেকে বেআইনি মদ বিক্রির অভিযোগ তোলেন। বাড়িতে এই ভাবে পুলিশ তল্লাশিতে আসায় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠেন পরিবারের লোকজন। তপনবাবুর স্ত্রী মঞ্জুদেবী ও তাঁর দুই শিশুসন্তান কান্নাকাটি শুরু করেন। পড়শিরাও জড়ো হয়ে যান ঘরের সামনে। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, তপনবাবু পুলিশের কাছে দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা। এই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাঁর তর্কাতর্কি শুরু হয়। এই সব দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এলাকার মানুষ। তাঁরাও পুলিশের সঙ্গে বচসা জুড়ে দেন। ঘটনার সময় অজিতবাবু বাড়িতে ছিলেন না। তাঁকে ফোন করে সব কথা জানান মঞ্জুদেবী। অজিতবাবু দ্রুত মোটরবাইকে বাড়ি ফিরে এসে দেখেন পুলিশকর্মীদের সঙ্গে পড়শি ও তাঁর আত্মীয়দের বচসা চলছে। অজিতবাবুর কথায়, ‘‘আমি দু’পক্ষকে শান্ত করে পুলিশকে ঘরে তল্লাশি চালাতে বলি। যদিও পুলি কর্মীরা এর পর আর ঘরে না ঢুকেই ফিরে যান।’’

এই ঘটনার নিন্দা করে সিপিএমের জোনাল সম্পাদক মনোজবাবুর অভিযোগ, ‘‘বিধায়ক এলাকার সর্বোচ্চ জন প্রতিনিধি। শাসকদলের রাজনৈতিক স্বার্থ সফল করার জন্য মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করেছে পুলিশ। এটা নিন্দনীয় কাজ।’’

তৃণমূল অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি তৃণমূলের তরফে অজিতবাবুকে কোনও প্রস্তাব দেওয়া হয়নি বলেও দাবি করেছেন দলের জেলা কমিটির সদস্য তথা সোনামুখীর পুরপ্রধান সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আমাদের দলে কি বিধায়কের অভাব রয়েছে? যাঁরা আসছেন,তাঁরা দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে আসছেন। মাস দুয়েক ধরে বরং শুনছি, উনি (অজিতবাবু) নিজেই আমাদের দলে আসার জন্য লাফালাফি করছেন!’’ সুরজিৎবাবুর আরও দাবি, ‘‘বিধায়কের ভাই বেআইনি মদের কারবারে যুক্ত, তা এলাকার অনেকেই জানেন। পুলিশ এমন খবর পেয়ে রেড করেছে শুনেছি। এতে বিক্ষোভের কী আছে বুঝতে পারছি না।’’

এ কথা শুনে অজিতবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমার ভাই জনমজুরি করে খায়। আমার পরিবারেই থাকে। রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূল আমাকে হারাতে পারেনি বলে এ বার আমার পরিবারকে নিশানা করছে ওরা।’’ তাঁর ভাই তপনবাবুও বলেন, ‘‘সবটাই মিথ্যে। আমাদের যৌথ পরিবার। আমি জন মজুরি করে সংসারে কিছু টাকা দিই। দাদাকে ফাঁসানোর জন্য মদের কারবারের কথা উত্থাপন করা হচ্ছে।’’ এসডিপিও(বিষ্ণুপুর) লাল্টু হালদার আবার জানিয়েছেন, সোনামুখী থানায় বিধায়কের ভাইয়ের বিরুদ্ধে স্থানীয় কিছু মানুষ মদের কারবারের অভিযোগ এনে বিভ্রান্ত করেছেন। বিষয়টি বিধায়ককে জানানো হয়েছে।

Police MLA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy