পুলিশি-তদন্তে স্বচ্ছতার স্বার্থে সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে কোনও থানায় এফআইআর দায়ের হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা সরকারি ওয়েবসাইটে তুলে দিতে হবে। নভেম্বর থেকেই তা কার্যকরও করতে হবে। এই আবহে নির্দেশ মানতে কতটা তৈরি বীরভূম জেলা পুলিশ? পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার দাবি করছেন, ‘‘কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আমরা তৈরি।’’
পুলিশ সূত্রের দাবি, প্রাক্তন পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার সময় থেকেই পুলিশের ওয়েবসাইটকে ‘স্মার্ট’ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরে ‘টেক স্যাভি’ পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের সময়ে তা আরও ঝকঝকে হয়। রইল বাকি থানা থেকে এফআইআর আপলোডের প্রশ্ন— পুলিশ কর্তারা জানাচ্ছেন, বর্তমানে যেখানে বিদ্যুৎ গতির নেট পরিষেবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বিভিন্ন টেলি নেটওয়ার্ক সংস্থা। সেখানে একটা এফআইআরের ছবি তুলে ওয়েবসাইটে আপলোড করা খুব একটা বড় বিষয় মোটেই নয়। স্মার্ট ফোনও হাতে হাতে। হোয়াটস্অ্যাপ তো রইলই।
নিজেদের ওয়েবসাইটের ভাল দিক তুলে ধরে পুলিশ কর্তাদের ব্যাখ্যা, নেট সর্বস্ব যুগে সাইটটি এমন ভাবে বানানো যে থানায় যাওয়ার প্রয়োজনটুকুও নেই। ইভটিজিং, র্যাগিং, নারী পাচারের অভিযোগই হোক আর সম্পত্তি হারানো অভিযোগ— সরাসরি জেলা পুলিশের বর্তমান ওয়েবসাইট ‘birbhumpolice.org’তে জানানো যায়। পুলিশের ওয়েবসাইট থেকেই জানা যায়, জেলার ম্যাপ থেকে ট্যুরিস্ট স্পষ্টের হদিশ। ১৯৪১ সাল থেকে পুলিশ সুপারের পদে আসীন থাকা কর্তাদের নাম হতে শুরু করে জেলায় কর্মরত সমস্ত পুলিশ আধিকারিকের যোগযোগের নম্বর, সবটাই একেবারে হাতের কাছে!
সত্যিই কি তাই?
জেলা পুলিশেরই একটি সূত্র ধরিয়ে দিচ্ছে, বাস্তব হল বীরভূম পুলিশের সাইটে অনেক খামতি। এর সঙ্গে সহমত নেট স্যাভি তরুণ প্রজন্মের অনেকেই। এঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘বীরভূম পুলিশের ওয়েবসাইটের থেকে অনেক উন্নত বর্ধমান পুলিশের ওয়েবসাইট। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের সাইট তো আরও উন্নত।’’
সিউড়ির এক গবেষক-ছাত্রের আবার অনুযোগ, ‘‘বীরভূম জেলা পুলিশের ওয়েবসাইটের অধিকাংশ অপশনই অভিযোগ জানানোর জন্যে। সেই অভিযোগ কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে, বা আদৌ দেখা হবে কিনা তার কোনও উত্তর জানার উপায় নেই! কার্যত একমুখী ব্যবস্থা।’’ আবার ফেসবুক নামে যে অপশন সাইটে রয়েছে, যেটার মাধ্যমে ‘টু-ওয়ে কমিউনিকেশন’ বা মতের আদান প্রাদান হতে পারত, সেই লিঙ্কটি কাজ করছে না। শুধু তাই নয়— ওয়ান্টেড পার্সন থেকে নোটিফিকেশন, প্রেস রিলিজ-সহ একাধিক অপশনে হয় কোনও তথ্যই নেই, না হয় বহু আগে এক-আধবার আপডেট করা হয়েছিল। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ জেলা পুলিশের ওয়েবসাইটে থাকা ‘গুড ওয়ার্ক ডান’ বা ভাল কাজের নমুনা। সেখানে শেষ আপডেট হয়েছে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর। এক পুলিশ কর্মীর টিপ্পনি, ‘‘এর মানেটা তো দাঁড়ায় তারপর আর কোনও ভাল কাজ জেলা পুলিশ করেনি।’’
নেট ব্যবহারকারীদের আরও পর্যবেক্ষণ, কেউ বীরভূম পুলিশ গুগলে টাইপ করলে একটি নয় জেলা পুলিশের একাধিক ওয়েবসাইট খুলে যায়। যেমন— ‘বীরভূম ডিস্ট্রিক্ট পুলিশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’, ‘পুলিশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কন্টাক্ট লিস্ট’। এই দুটি সাইট এখনও থেকে গিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, এগুলি তৈরি করিয়েছিলেন প্রাক্তন দুই পুলিশ সুপার। প্রথম জন ২০১২ সালে লোবা-কাণ্ডের পরে নভেম্বরের ৭ তারিখ থেকে বছর খানেকের জন্যে পুলিশ সুপারের দায়িত্বে আসা মুরলীধর শর্মা। অন্য জন ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে দায়িত্বে আসা নিশাদ পারভেজ। মজার কথা হল, দুটি সাইটের হোমে গিয়ে টাইপ করলে এখনও জেলা প্রশাসনের বর্তমান ওয়েবসাইটে দিব্যি ঢুকে যাওয়া যাচ্ছে। বিভ্রান্তি সেখানেও।
কেউ যদি পুরনো সাইটে ঢুকে পড়ে, তা হলে তিনি তো বিভ্রান্ত হয়ে পড়বেন। প্রয়োজনের সময়ে পুলিশ সুপার বা জেলার অন্য আধিকারিকদের সঙ্গে যোগযোগও করতে পারবেন না! একাধিক সাইট নেটে থাকলে যে সমস্যা— তার সত্যতা মেনে নিয়েছেন জেলা পুলিশের অনেকেই।
কবে সমাধান হবে?
পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলছেন, ‘‘বিষয়টা জানা নেই। তবে দেখছি।’’ জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগের ওয়েবসাইটটি ‘পাসওয়ার্ড প্রটেক্টেড’ ছিল। সেটা ভুলে যাওয়ার কারণেই নতুন করে বানাতে হয়েছে সাইট। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে সমধান সূত্র খোঁজা হবে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের এক কর্তা।
এফআইআরের কপি আপলোড করা শুরু হওয়ার আগেই জরুরি সেই সংশোধন করা হয়ে যাবে তো, প্রশ্ন ঘুরতে শুরু করেছে জেলা পুলিশেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy