ঝুঁকি: বাঁকুড়ার সুভাষ রোডের হাল এখন এমন। নিজস্ব চিত্র
নালার উপর আধ ভাঙা সরু চাতাল, কোথাও কোথাও আবার অস্থায়ী ভাবে বসানো কাঠের পাটা। তার উপর দিয়েই নালা ডিঙিয়ে উঠতে হচ্ছে দোকানে। একটু অসাবধান হলেই সোজা নালায়। মাস দেড়েক ধরে এ ভাবেই ঝুঁকি নিয়ে বাঁকুড়ার সুভাষ রোড এলাকায় বাজারে কেনাকাটা করতে হচ্ছে লোকজনকে। এ নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। অসন্তুষ্ট ক্রেতারাও।
লালবাজার মোড় থেকে মাচানতলা মোড় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশ বহু বছর ধরেই বেদখল করে রাখার অভিযোগ। মাসখানেক আগে প্রশাসন ওই রাস্তা দখল মুক্ত করতে নির্দেশ দেয়। অবৈধ নির্মাণ চিহ্নিত করে তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীরা নিজেরাই দখলমুক্ত করতে নামেন। ব্যবসায়ীরা ভেবেছিলেন, এ বার প্রশাসন ওই এলাকায় উন্নয়ন করবে। কিন্তু তার পর থেকে প্রশাসনের আর হেলদোল নেই!
এতে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ। প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন তাঁরা। বাঁকুড়া শহর ব্যবসায়ী সমিতি ও চকবাজার ব্যবসায়ী উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক করুনাময় চন্দ বলেন, “ব্যবসায়ীরা প্রশাসনকে সহায়তা করল। নিজেরাই তাঁরা অবৈধ বলে চিহ্নিত হওয়া নির্মাণ ভেঙে ফেলেছেন। অথচ এর পরেও প্রশাসন বাকি কাজ শেষ করেনি।”
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাঁকুড়ার ব্যবসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এই চকবাজারের দীর্ঘদিন ধরে কোনও উন্নয়ন হয়নি। এখানে শৌচাগার নেই, পানীয় জলেরও ব্যবস্থাও ভাল নয়। যানবাহন রাখার মতো জায়গারও অভাব রয়েছে। ফলে রাস্তার উপরেই সাইকেল, মোটরবাইক রেখে কেনাকাটা করতে হয় সাধারণ মানুষকে। এর ফলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। নাকাল হন ব্যবসায়ী থেকে ক্রেতা সকলেই।
ব্যবসায়ীদের দাবি, অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে নামার আগে প্রশাসনের তরফে ব্যবসায়ীদের চকবাজারের সার্বিক উন্নয়ন করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। ফুটপাথ তৈরি করা, গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করা থেকে চকবাজারকে প্রশাসন সাজিয়ে দেওয়ার কথাও বলেছিল। চকবাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী কাশীনাথ কুণ্ডুর কথায়, “এত বড় বাজারে ন্যূনতম পরিকাঠামো পর্যন্ত নেই। আমরা আশা করেছিলাম, প্রশাসন নতুন করে এই বাজারকে গড়ে তুলবে। তাই উন্নয়নের স্বার্থেই আমরা প্রশাসনের ডাকে সাড়া দিয়ে অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দিয়েছি। কিন্তু কাজ তো কিছুই দেখছি না।”
এলাকার রেডিমেড জামা কাপড়ের ব্যবসায়ী দেবাশিস কর্মকার, বিজয় দে, অরূপ দত্তরা বলছেন, ‘‘নয়ের দশক থেকে এখনও পর্যন্ত অন্তত বার তিনেক প্রশাসন সুভাষ রোড দখল মুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিবারই ব্যবসায়ীরা সদর্থক ভূমিকা নিলেও কোনও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন আর এগোয়নি।’’
এ বারও কি আগের মতো একই ঘটনাই ঘটবে, না কি সত্যি সত্যিই চকবাজারের উন্নয়ন হবে, সেই প্রশ্ন ঘুরে বেরাচ্ছে ব্যবসায়ীদের মুখে মুখে।
মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা অবশ্য বলছেন, “উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কিছু কাজকর্মের জন্য চকবাজারে কাজ শুরু করা যায়নি। তবে এ বার ধাপে ধাপে চকবাজার এলাকায় উন্নয়নের কাজ শুরু হবে।”
তিনি জানিয়েছেন, ওই রাস্তায় ফুটপাথ তৈরি করতে পূর্ত (সিভিল) বিভাগ এক কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে রাজ্য সরকারের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে। টাকা বরাদ্দ হলেই কাজ শুরু হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy