Advertisement
০৭ মে ২০২৪
BJP

acquitted: বেকসুর খালাস ‘বন্দি’ শুভজিৎ

অভিযোগ ওঠে, তৎকালীন বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ সুরজিৎ মাহাতোর ভাই শুভজিৎকে রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।

এত দিন পরে ছেলেকে কাছে পেয়ে কান্না শুভজিতের মায়ের।

এত দিন পরে ছেলেকে কাছে পেয়ে কান্না শুভজিতের মায়ের। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:২৩
Share: Save:

গাঁজা পাচারের অভিযোগে প্রায় চার বছর জেল খাটার পরে বেকসুর খালাস পেলেন পুরুলিয়ার এক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক শুভজিৎ মাহাতো। মঙ্গলবার এই রায় দেন পুরুলিয়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (দ্বিতীয় আদালত) রমেশকুমার প্রধান। পুলিশের দাবি ছিল, ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর পুরুলিয়ার রাঁচী রোডে নাকা চেকিংয়ে মোটরবাইকে থাকা শুভজিৎ ও উমেশকে আটক করে ২৩ কেজি ৪০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছিল। সে সময়ে অভিযোগ ওঠে, তৎকালীন বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ সুরজিৎ মাহাতোর ভাই শুভজিৎকে রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। খবর ছড়াতেই শুভজিতের স্কুলের পড়ুয়া থেকে এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতিবাদে শামিল হন। বিভিন্ন সংগঠন পুরুলিয়া শহরে প্রতিবাদ-মিছিল ও সভা করে। বিজেপি নেতৃত্বও দাবি করেন, শুভজিৎকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

শুভজিতের আইনজীবী শেখর বসু বলেন, ‘‘গাঁজা পাচারের এই মামলায় অভিযুক্ত শুভজিৎ মাহাতো ও ধানবাদের বাসিন্দা উমেশ মাহাতোকে এ দিন আদালত বেকসুর খালাস বলে ঘোষণা করেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, সরকারি আইনজীবী তা প্রমাণ করতে পারেননি।’’ ওই মামলার সরকারি আইনজীবী পার্থসারথি রায় দাবি করেন, ‘‘এই মামলায় যাঁরা সাক্ষী ছিলেন, তাঁরা ঠিকঠাক সাক্ষ্য দিতে না পারায় অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। তবে রায়ের কপি পড়ার পরেই বিশদে জানাতে পারব।’’ এ দিন বিকেলে জেল থেকে বেরিয়ে বছর চব্বিশের শুভজিৎ অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি।

শুভজিৎকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘শুভজিতের মুক্তিতে আমরা খুশি। তাঁর বাবার সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছিল। মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য আমরা চেষ্টা করেছি।’’ জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগনের মন্তব্য, ‘‘এটা বিচার বিভাগের বিষয়। পুলিশ যা করার, করেছে।’’

শুভজিতের বাবা সুবোধ মাহাতো দাবি করেছিলেন, স্কুলে মিড-ডে মিলের চাল চুরি হয়েছে দাবি করে পুলিশ কিছু তথ্য সংগ্রহের জন্য ২৯ নভেম্বর রাতে বাড়ি থেকে শুভজিৎকে ডেকে নিয়ে যায়। পরদিন থানায় গিয়ে তিনি জানতে পারেন, গাঁজা পাচারের অভিযোগে পুলিশ শুভজিৎকে গ্রেফতার করেছে। এ দিন সুবোধ বলেন, ‘‘আইনের প্রতি আস্থা ছিল। ভাল লাগছে এ দিন শুভজিৎ বেকসুর খালাস পেয়েছে। অভিযোগ যে মিথ্যা ছিল, তা-ও প্রমাণিত হয়েছে।’’

মাসখানেক আগে মুকুলবাবু তৃণমূলে ফিরেছেন। সুবোধের এ দিন অভিযোগ, ‘‘শুভজিতের বন্দি হওয়ার ঘটনাটিকে বিজেপি রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করলেও, ওই দলের কোনও নেতা জেলে এক দিনও ওর সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করেনি। আমার বাড়ি থেকে রাজনৈতিক প্রচার শুরু করেছেন ওঁরা। কিন্তু মাঝের এই সময়ে তাঁদের কোনও সহায়তা আমি পাইনি।’’

বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘অভিযোগ ঠিক নয়। আমি শুভজিতের বাড়িতে গিয়েছি। সংশোধনাগারেও তাঁর খোঁজ নিয়েছি।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘আজ প্রমাণিত হল, শুভজিৎকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। এত বছর ছেলেটাকে জেলে কাটাতে হল, এর দায় কার?’’ সে সময় পথে নামা ‘আদিবাসী কুড়মি সমাজ’-এর মূল মানতা অজিত মাহাতোও বলেন, ‘‘আমরা আগেও বলেছিলাম, শুভজিৎকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আজ আদালতের রায়ে সেটাই প্রমাণিত হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE