Advertisement
E-Paper

মেলা নিয়ে জট কাটালো নারকেল

 আমন্ত্রণপত্র-বিতর্কে জল ঢালল নারকেল। ঠিক হয়েছে, বিষ্ণুপুর মেলার সূচনায় ফিতে কাটবেন পুরপ্রধান আর নারকেল ফাটাবেন বিধায়ক। এই ঐতিহ্যবাহী মেলাকে ঘিরে তৈরি হওয়া অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কমিটি এ ভাবেই শ্যাম রাখল, তুষারকেও রাখল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৪৭
আস্তে: কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা উপ পুরপ্রধানের। নিজস্ব চিত্র

আস্তে: কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা উপ পুরপ্রধানের। নিজস্ব চিত্র

আমন্ত্রণপত্র-বিতর্কে জল ঢালল নারকেল। ঠিক হয়েছে, বিষ্ণুপুর মেলার সূচনায় ফিতে কাটবেন পুরপ্রধান আর নারকেল ফাটাবেন বিধায়ক। এই ঐতিহ্যবাহী মেলাকে ঘিরে তৈরি হওয়া অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কমিটি এ ভাবেই শ্যাম রাখল, তুষারকেও রাখল।

বৃহস্পতিবার বিষ্ণুপুর মেলা কমিটির বৈঠকের গোড়ায় বিতণ্ডা শুরু হয়। তবে পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন কমিটির কর্মকর্তারা। জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা মেলা কমিটির সভাপতি অরূপ চক্রবর্তী ঘোষণা করেন, ‘‘পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় মঞ্চের ফিতে কাটবেন। তারপরে নারকেল ফাটিয়ে পদযাত্রার সূচনা করবেন বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য। সেখানে আমরা সবাই থাকব।’’ এরপরেই পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের কথা জানান বিধায়ক।

শনিবার শুরু হচ্ছে ৩০তম বিষ্ণুপুর মেলা। কিন্তু তার ক’দিন আগে থেকেই আমন্ত্রণপত্র নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে যায় এই মন্দিরনগরীতে। বিলি করা আমন্ত্রণপত্রে বাঁকুড়ার সাংসদ মুনমুন সেন প্রদীপ জ্বালিয়ে মেলার সূচনা করবেন এবং বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠান মঞ্চের ফিতে কাটবেন বলে উল্লেখ করা হয়। অথচ মেলা কমিটির সহ-সভাপতি তথা বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্যের নাম রয়েছে কয়েক জনের পরে।

গত কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে শাসকদলে শ্যামবাবু যেমন কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন, তেমনই কংগ্রেস বিধায়ক হয়েও তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখা তুষারবাবুর প্রতিপত্তি বেড়ে গিয়েছিল।

এরই মধ্যে গত সপ্তাহে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় এসে শ্যামবাবুকে তুলে এনে জেলা চেয়ারম্যানের পদ দেওয়ার পরেই ছবিটা বদলাতে শুরু করে। মেলা কমিটিতে কোণঠাসা থাকা শ্যামবাবু সটান প্রধান অতিথির পদ পেয়ে যান। তাঁর অনুগামীদের দাবি, এতেই বিধায়ক ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের গোসা হয়। তারা দলবল মিলে বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক তথা মেলা কমিটির সদস্য সচিবের সঙ্গে দেখা করে মেলা কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন।

বৃহস্পতিবার সে খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতেই হইচই শুরু হয়। এ দিন মহকুমাশাসকের অফিসে মেলা কমিটির বৈঠকেও সদস্যদের মধ্যে এ নিয়ে বিতণ্ডা শুরু হয়। বিধায়কের অনুগামী সদস্যেরা মঞ্চের সামনে গিয়ে আমন্ত্রণপত্রে কেন শ্যামবাবুকে প্রধান অতিথি করা হয়েছে তা নিয়ে রীতিমতো লাফালাফি শুরু করে দেন। মঞ্চে তখন বিধায়ক তুষারবাবু ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বিষ্ণুপুরের উপপুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে বসেছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা মেলা কমিটির সভাপতি অরূপ চক্রবর্তী। ছিলেন মহকুমাশাসক ময়ূরী ভাসু, মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক রামশঙ্কর মণ্ডল প্রমুখ।

বিক্ষুব্ধ সদস্যেরা বলতে থাকেন, ‘‘আমন্ত্রণপত্র কেন হোর্ডিং করে শহরের বিভিন্ন জায়গায় টাঙানো হয়েছে?’’ অরূপবাবু তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন— ‘‘কেউ যদি নিজের টাকায় বোর্ড টাঙায়, আমার বলার কী থাকতে পারে?’’ ঘটনাচক্রে যিনি বিতর্কের কেন্দ্রে, সেই শ্যামবাবু এ দিন বৈঠকে হাজির ছিলেন না। বিক্ষুব্ধদের হইচই মাত্রাছাড়া হওয়ায় শেষে বুদ্ধদেববাবুকে মঞ্চ থেকে নেমে ধমক দিয়ে তাঁদের সামলাতে হয়। বৈঠক শেষে অরূপবাবু বলেন, ‘‘পদযাত্রার সূচনায় তুষারবাবু যখন নারকেল ফাটাবেন, তাঁর পাশে থাকবেন বুদ্ধবাবু। আমরাও থাকব।’’ এরপরেই তাঁর সংযোজন— ‘‘ফিতে কেটে উদ্বোধন না হতে পারে নারকেল ফাটানো তো হবে।’’

শ্যামবাবু জানিয়েছেন অন্য একটি বৈঠকে শহরের বাইরে ছিলেন বলে মেলার বৈঠকে আসতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘‘বিধায়ক পদযাত্রার উদ্বোধন করছেন শুনে ভাল লাগছে। আমিও পদযাত্রায় থাকব।’’

আর তুষারবাবু দাবি করেছেন, ‘‘বুধবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয়। তাঁর কথা শুনেই পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে সবাই মিলে মেলার বৈঠকে এসেছি।’’

বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এত দিন শুধু প্রদীপ জ্বালিয়েই মেলার উদ্বোধনই হত। এ বার মঞ্চের ফিতে কাটা থেকে নারকেল ফাটিয়ে পদযাত্রার সূচনা পর্বও যোগ হল। গোসা ভাঙাতে আরও কত কী হবে, কে জানে?

Inauguration Fair
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy