Advertisement
E-Paper

রবিবারে বাজারমুখো ব্যাঙ্কের লাইন

সারা সপ্তাহ ব্যাঙ্ক আর এটিএমের সামনে হত্যে দিয়ে অচল নোটের ধাক্কা কিছুটা কাটিয়ে উঠেছেন অধিকাংশ গৃহস্থ। রোববার। অফিস কাছারি নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০১:০৭
পুরুলিয়ার বড়হাটে বিকিকিনি। বিষ্ণুপুরের চক বাজারে বেশি কেনাকাটা হচ্ছে খুচরো নোটেই। —নিজস্ব চিত্র।

পুরুলিয়ার বড়হাটে বিকিকিনি। বিষ্ণুপুরের চক বাজারে বেশি কেনাকাটা হচ্ছে খুচরো নোটেই। —নিজস্ব চিত্র।

সারা সপ্তাহ ব্যাঙ্ক আর এটিএমের সামনে হত্যে দিয়ে অচল নোটের ধাক্কা কিছুটা কাটিয়ে উঠেছেন অধিকাংশ গৃহস্থ। রোববার। অফিস কাছারি নেই। ব্যাঙ্কও বন্ধ। বেশ কিছু দিন পরে ফের লাইন পড়ল মাংসের দোকানে। তবে কোথাও কেনাকাটা হল খুচরো টাকায়, কোথাও আবার এক হাতে বাজারের ব্যাগ, অন্য হাতে দু’হাজার টাকার নোট নিয়ে হোঁচট খেলেন ক্রেতারা।

মোটের উপরে, দুই জেলার সাধারণ মানুষ এবং বিক্রেতাদের একাংশ দাবি করছেন, ধীরে ধীরে চেনা ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে বাজারহাট। রবিবার সকাল থেকেই বাঁকুড়া শহরের লালবাজার, দোলতলা, রামপুরের মতো বাজারগুলি ছিল জমজমাট। দোলতলার সব্জি বিক্রেতা সঞ্জীব গড়াই, শম্ভুনাথ মাঝি বা বিষ্ণুপুরের চকবাজার এলাকার সব্জি বিক্রেতা সুশান্ত পালেরা জানান, নোটবাতিলের পরে শুক্রবার পর্যন্ত ব্যবসা বেশ মার খেয়েছে। শনিবার থেকই ছবিটা একটু একটু করে বদলাতে শুরু করেছিল। তাঁদের কথায়, “রবিবার অনেকে সারা সপ্তাহের সব্জি এক সঙ্গে কিনতে আসেন। এ বারে কী হয় ভেবে বেশ চিন্তায় ছিলাম। তবে শেষটা ভালই হল।’’ বাঁকুড়ার কালীতলা এলাকার খাসির মাংসের দোকানদার স্বপন দাস, মুরগির মাংস বিক্রেতা নরেশ দাস, রা জানান, গত ক’দিনের লোকসানের কিছুটা পুষিয়ে গিয়েছে রবিবারের বিক্রিবাটায়। মুখে হাসি ফুটেছে লালবাজারের মাছ ব্যবসায়ী পণ্ডা ধীবর বা রামপুর বাজারের রাজু ধীবরদেরও।

পুরশহর বিষ্ণুপুরের সাইকেল হসপিটাল মোড় এলাকায় একটি দোকান থেকে খাসির মাংস কিনছিলেন সিদ্ধার্থ গুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘‘রোববার মাংস না হলে ঠিক জমে না। অনেক ঝকমারি করে টাকা তুলেছি। সকাল সকাল বাজারটাও সেরে নিলাম।’’ বেশ কিছুদিন পরে আবার হাত খুলে বাজার করেছেন বলে জানান পাঠকপাড়ার বাসিন্দা শুধাংশু শেখর অধূর্য। ফাঁসিডাঙার ভোলানাথ দাস, শুভাশিস পাঠকেরা অবশ্য জানালেন, খুচরোর অভাবে সারা সপ্তাহ বাজার করতে এসে শাকসব্জির দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলেও মুদির দোকানে বাকির খাতায় লিখে পোস্তটা তাঁরা কিনেছেনই।

তবে এখনও কিছুটা মুষড়ে রয়েছে পুরুলিয়ার বাজার। বাঁকুড়ার বাজারগুলিতে এ দিন অধিকাংশ লেনদেনই হয়েছে খুচরো টাকার নোটে। পুরুলিয়ার ব্যাঙ্ক বা এটিএমগুলি থেকে বেশি পাওয়া যাচ্ছে গোলাপি রঙের ভারিক্কি নোট। দু’হাজার টাকার সেই নোট নিয়েই সমস্যায় পড়ছেন বাজার করতে আসা গৃহস্থ পুরুলিয়া শহরের দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়, রঘুনাথপুরের সুব্রত রায়, স্বপন দত্তরা। মাছ, মাংস, সব্জি— কিছু কিনতে গিয়েই দু’হাজার টাকা ভাঙাতে পারছেন না। ক্রেতা-বিক্রেতাদের একাংশের দাবি, পাঁচশো টাকার নতুন নোট না আসা হওয়া ইস্তক এই সমস্যা থেকে মুক্তি নেই।

পুরুলিয়া শহরের খাসির মাংস বিক্রেতা বীরু গড়াই এবং কৃষ্ণপদ গড়াই জানান, বাজার খারাপ থাকায় বাধ্য হয়ে মাসের দাম প্রতি কেজিতে কুড়ি টাকা কমিয়ে দিয়েছেন। গত দু’সপ্তাহের তুলনায় এই রবিবার বিক্রি কিছুটা বেড়েছে বটে, তবে মন্দা কাটেনি বলে তাঁদের দাবি। কৃষ্ণপদ বলেন, ‘‘অনেকে এক কেজি মাংস কিনে দু’হাজার টাকার নোট ধরিয়ে দিচ্ছেন। প্রায় হাজার দেড়েক টাকা ভাঙানি আমরা দেব কোথা থেকে! চেনাজানা লোকজনকে এখনও ধারে মাংস দিচ্ছি।’’ মাংস বিক্রেতারা জানান, এতদিন বিভিন্ন হাট থেকে ছাগল বা পাঁঠা কিনতেন বড় নোটেই। এই পরিস্থিতিতে কেউ সেই নোট নিতে চাইছেন না। ব্যাঙ্ক থেকেও বেশি টাকা তোলা যাচ্ছে না। ফলে পুঁজিতেও টান পড়েছে তাঁদের। সব্জির ব্যবসায় খুচরো নিয়ে একই সমস্যায় পড়েছেন রঘুনাথপুর হাটতলা এলাকার ফাল্গুনী সাউ। এ দিনও বাধ্য হয়ে বেশ কিছু ক্রেতাকে ফিরিয়েছেন তিনি। পাঁচশো টাকার নতুন নোটের পথ চেয়ে রয়েছেন ফাল্গুনীবাবু।

সেই নোটের দেখা কবে মিলবে— পুরুলিয়ার হাটেবাজারে এখন মূল আলোচনার বিষয় সেটিই।

Public Market
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy