Advertisement
০৬ মে ২০২৪

জমানো কয়েনে আতান্তরে পুজো কমিটি

এভাবেই সকলের সমান যোগদানে অত্যন্ত আন্তরিকাতর সঙ্গে দুর্গাপুজো হয়ে আসছিল গ্রামটিতে। পুজোর আনন্দ তো ছিলই সঙ্গে নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মিলিয়ে এক হৈ হৈ কাণ্ড। এ বারও প্রস্তুতি চূড়ান্ত। তবে কয়েন বিভ্রাট সেই প্রস্তুতি কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে!

গ্রামের এক মহিলা। নিজস্ব চিত্র

গ্রামের এক মহিলা। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:২০
Share: Save:

গ্রামের প্রতিটি পরিবার লক্ষ্মীর ভাঁড়ে প্রতিদিন ১ টাকা করে জমান। দুর্গাপুজোর ঠিক আগে সেই ভাঁড় ভেঙে সঞ্চিত টাকায় চালানো হয় গ্রামের এক মাত্র দুর্গাপুজোর খরচ। বিগত বছরগুলিতে কোনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু এ বার যে কয়েন কার্যত ‘অচল’। আর তাতেই মাথায় হাত খয়রাশোলের কমলপুরগ্রামের দুর্গাপুজো কমিটির!

কমিটির সদস্য সুদীপ পাল, ব্রজগোপাল ডোমরা বলছেন, ‘‘কেউ এখন কয়েন নিচ্ছে না। প্রতিমা থেকে পুজোর সামগ্রী, ঢাক মণ্ডপ থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কী ভাবে সব পেমেন্ট করব কিছুই মাথায় ঢুকছে না। সবচেয়ে সমস্যার ব্যাঙ্কও যে খুচরো নিতে চাইছে না।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খয়রাশোলের লোকপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শালনদী ঘেঁষা গ্রামেটিতে রয়েছে ৮১টি পরিবার। গ্রামের মানুষ হয় কৃষিজীবী না হয় দিনমজুর। কৃষি প্রধান হওয়ায় গ্রামে অন্নপূর্ণা পুজো হয়। রয়েছে অন্নপূর্ণা মন্দিরও। কিন্তু গ্রামে কোনও দুর্গাপুজো ছিল না। গ্রামের বাচ্চা থেকে বড় সকলেই পুজোর ওই কটা দিন খুব খারাপ লাগত। সমাধান সূত্র খুঁজতে ২০১১ সালে কালীপুজোর পরে বৈঠক করে দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত নেন মানুষ। কিন্তু দুর্গাপুজো বলে কথা। এত টাকা উঠবে কী ভাবে? সেই সমস্যারও সমাধান সূত্র বের হয়ে যায়। গ্রামবাসীদের কথায়, ঠিক করা হয় গ্রামের প্রত্যেক পরিবারের হতে একটি করে লক্ষ্মীর ভাঁড় দেওয়া হবে। প্রত্যেকটি পরিবার দিনে এক টাকা করে তাতে জমাবেন। কথা মতো খয়রাশোলের লোকপুর থেকে অর্ডার দিয়ে ভাঁড়গুলি আনিয়ে তাতে নম্বর বসিয়ে গ্রামের প্রত্যেক পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এভাবেই সকলের সমান যোগদানে অত্যন্ত আন্তরিকাতর সঙ্গে দুর্গাপুজো হয়ে আসছিল গ্রামটিতে। পুজোর আনন্দ তো ছিলই সঙ্গে নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মিলিয়ে এক হৈ হৈ কাণ্ড। এ বারও প্রস্তুতি চূড়ান্ত। তবে কয়েন বিভ্রাট সেই প্রস্তুতি কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে!

পুজো কমিটির কথায়, ‘‘৮১টি পরিবার ৩৬৫ টাকা করে জমিয়ে থাকেন, অঙ্কটা দাঁড়ায় প্রায় ৩০ হাজার টাকার কয়েন। কে নেবে, কাকে দেব বলতে পারেন! চেষ্টা করা হচ্ছে, যে যে পরিবার পারবে কয়েন নিজের কাছে রেখে সমপরিমাণ টাকা পুজোর খরচ হিসাবে দিতে। কিছু পরিবার হয়তো শুনেছে কিন্তু অধিকাংশ প্রান্তিক পরিবার কী ভাবে টাকা দেবে।’’ গ্রামের বধূ অর্চনা ডোম, সরলী ডোম বা ছোটখাট মনোহারি দ্রব্য ফেরি করা মহাদেব দত্তরা বলছেন, ‘‘দিনে ১ টাকা করে জমানো হয় বলে আমাদের মতো দরিদ্র পরিবারগুলি পুজোয় সমান আনন্দ করতে পারি। কিন্তু কয়েনের বদলে টাকা করে পুজোর খরচ দেওয়া আমাদের ক্ষমতার বাইরে।’’ প্রবীণ নাগরিক হারাধন পাল বলছেন, পরের বার থেকে আমরা ভিন্ন ভাবনা ভাবতে হবে কিন্তু এ বার কী করে সব দিক সামাল দেওয়া হবে সত্যিই মাথায় আসছে না।

জেলার লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার দীপ্তেন্দ্রনারায়ণ ঠাকুর বলছেন, ‘‘কয়েন অচল হয়ে পড়েছে তা তো নয়। কিন্তু কেউ নিতে চাইছেন না। সত্যি কথা বলতে কী রিজার্ভ ব্যাঙ্কও কয়েন নিচ্ছে না। ব্যাঙ্কের পক্ষে কয়েন গুনে নেওয়া সত্যিই সম্ভব নয়।’’ তা হলে উপায়?

লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বলছেন, বুধবারই জেলাপ্রশাসন বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও রিজার্ভব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে কয়েন প্রসঙ্গ উঠেছে। আমি এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) রঞ্জন কুমার ঝা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের কয়েন ফেরত নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি। প্রয়োজন সচেতনতা প্রচার। একদিন ৫০০ টাকার কয়েন ব্যাঙ্কগুলিকে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

তাতে কী দুর্ভোগ কাটাবে? উত্তর অজানা কমলপুর গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে। তবে কয়েন সচল না অচল সেসব না ভেবে পুজোয় দেদার আনন্দের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে দিব্যজ্যোতি, সমাপ্তি, রিম্পার মতো কচি কাঁচারা। ঠাকুরের গায়েও খড়িমাটির প্রলেপ পড়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE