মুখে ছৌয়ের মুখোশ। পরনে গাছ-কোমর ঢঙে পরা আটপৌরে শাড়ি। মাথা, গলা, বাজুবন্ধে, কোমরে পলাশ ফুলের সাজ। পায়ে হাওয়াই চটি। ঘুঙুরের স্থানও নিয়েছে কিংশুকগুচ্ছ। ঠিক এমন বেশে ঝালদা থেকে হুড়া, বাঘমুণ্ডি থেকে সাঁতুড়ি, জেলার এক থেকে আর এক প্রান্ত চষে বেড়াচ্ছে ‘পলাশমণি’—আগামী লোকসভা ভোটে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের ‘ম্যাসকট’। বাঁ হাতের তর্জনীতে তার ভোটের কালির চিহ্ন। বীররসের নাচ ছৌ, শরীরী ভাষায় তাই নির্ভয়ে ভোটদানেরই যেন আহ্বান।
ভোটদান-সংক্রান্ত নানা বিষয়ে এমন উদ্ভাবনমূলক সচেতনতা প্রচারের সৌজন্যে রাজ্য নির্বাচন দফতরের পুরস্কার জিতেছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। আগামী ২৫ জানুয়ারি জাতীয় ভোটার দিবসে কলকাতার আলিপুরে জাতীয় গ্রন্থাগারে পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দা জেলার হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করবেন।
জেলাশাসক জানান, ভোট প্রক্রিয়ায় যোগদান ও অবাধে ভোটাদান সম্পর্কে একেবারে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে বিভিন্ন ভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে। স্কুল-কলেজে ‘ইলেক্টোরাল লিটারেসি ক্লাব’ গড়ে তোলা, ট্যাবলোর মাধ্যমে ইভিএমে ভোটদান সংক্রান্ত প্রক্রিয়া মানুষকে দেখানোর সঙ্গে তাঁদের কোনও প্রশ্ন থাকলে তারও উত্তর দেওয়া হচ্ছে। জেলা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তীর কথায়, “পলাশমণি এ বারের ভোটে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের ম্যাসকট। পলাশ পুরুলিয়ার ‘সিগনেচার টিউন’। আর ফসলের লৌকিক দেবী টুসুকে ঘিরে জেলার প্রাণের উৎসব মকর সংক্রান্তি। টুসুকে আদর করে তামাম মানভূম ‘টুসুমণি’ বলে সম্বোধন করে। পলাশ আর মণি জুড়ে তাই ‘পলাশমণি’।
সচেতনতা প্রচারের পরিকল্পনার অন্যতম শরিক জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক পূর্বিতা চট্টোপাধ্যায় জানান, লুপ্তপ্রায় বিরহোড় সম্প্রদায়, এখনও যাঁদের অনেকে জঙ্গলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাঁদের সকলের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা, ভোটদান সম্পর্কে তাঁদের বোঝানো বা শবর টোলাগুলিতে ওই সম্প্রদায়ের মানুষজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের সচেতন করা, স্কুল-কলেজগুলিতে ইলেক্টোরাল লিটারেসি ক্লাব গড়ে তুলে সচেতনতা প্রচারের পাশাপাশি ওই ক্লাবের সদস্যদের মাধ্যমে নির্ভয়ে ভোটদানের এই প্রচার একেবারে নিচুতলা পর্যন্ত পৌঁছনোর কাজ প্রশাসন করছে।
এ ছাড়া, লোকগান, পথনাটিকা বা সমাজমাধ্যমকে ব্যবহার করে জেলার প্রতিটি ব্লক, পুরএলাকায় প্রচার চলছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)