Advertisement
E-Paper

নাক থেকে পুঁজ-রক্ত, তিন বছর গেঁথে সেফটিপিন!

কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেই মেয়েকে কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়ায় চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞ ওই কিশোরীর পরিবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:৪৮
অস্ত্রোপচারের পরে। নিজস্ব চিত্র

অস্ত্রোপচারের পরে। নিজস্ব চিত্র

মানসিক বিকাশে পিছিয়ে থাকা এক কিশোরীর নাকের মধ্যে তিন বছরে ধরে গেঁথে ছিল সেফটিপিন। অস্ত্রোপচারে সেই সেফটিপিন বের করে ওই কিশোরীর যন্ত্রণা-মুক্তি ঘটালেন চিকিৎসকেরা। শনিবার রাতে ঘন্টাদেড়েকের চেষ্টায় এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন সিউড়ি জেলা হাসপাতালের ইএনটি সার্জন শুভেন্দু ভট্টাচার্য। সঙ্গী ছিলেন অ্যানাস্থেটিস্ট দেবজ্যোতি চক্রবর্তী। সিউড়ি হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৌসুমী মাহারা নামে বছর পনেরোর কিশোরী এখন সুস্থ। কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেই মেয়েকে কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়ায় চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞ ওই কিশোরীর পরিবার।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কিশোরীর বাড়ি সিউড়ি ১ ব্লকের মল্লিকপুর পঞ্চায়েতের চাঙ্গুরিয়া গ্রামে। আড্ডা সত্যপ্রসন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এই ছাত্রী তিন বছর ধরেই নাকের সমস্যায় ভুগছিল। মানসিক বিকাশে কিছুটা পিছিয়ে মেয়েটির

নাকের বাঁ দিকের ফুটো দিয়ে সর্দি ঝরতেই থাকত। মাঝে মধ্যেই দুর্গন্ধ যুক্ত পুঁজ ও রক্ত বের হচ্ছিল। গত কয়েক দিন নাক দিয়ে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। মল্লিকাকে শুভেন্দুবাবুর কাছে নিয়ে আসেন তার মা। তিনি চিকিৎসককে

জানান, বছর তিনেক খেলার সময় মল্লিকা নাকে সেফটিপিন ঢুকিয়ে ফেলেছিল। পরে স্থানীয় চিকিৎসক দেখানো হলে তিনি জানিয়েছিলেন, নাকের মধ্যে কিছু নেই।

কিন্তু, খটকা লাগে জেলা হাসপাতালের ওই শল্য চিকিৎসকের। প্রাথমিক ভাবে কিশোরীর নাকে রক্ত বন্ধ করে প্রথমে তার এক্সে-রে ও পরে সিটিস্ক্যান করান। তাতেই ধরা পড়ে মেয়েটির নাকের বাঁ দিকের শেষ প্রান্তে তখনও আটকে রয়েছে সেফটিপিন। অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন শুভেন্দুবাবু। তিনি বলেন, ‘‘রবিরার রাতে অস্ত্রোপচার করি। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও পরবর্তীতে যন্ত্রণা এড়াতে আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা এন্ডোস্কোপি করার উপকরণ কাজে লাগাই। মেয়েটিকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করেই এ কাজ করতে হয়েছে, সেটাও ঝুঁকির। কাজটি করেছেন অ্যানাস্থেটিস্ট দেবজ্যোতি চক্রবর্তী।’’

কিশোরীকে রবিবার রাতে অপারেশন পরবর্তী সময় সিসিইউতে রাখা হয়েছিল। সোমবার সকালে অনেকটাই সুস্থ। জেনারেল বেডে দেওয়া হয়েছে। নাকের প্যাকও খুলে দেওয়া হয়েছে। তাতেই আপ্লুত মৌসুমার মা চিন্তা ও বাবা অনিল মাহাডরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘আমরা অত্যন্ত গরিব। মেয়েকে নিয়ে কোথাও বাইরে যাওয়া সম্ভব ছিল না। ভাগ্যিস ডাক্তারবাবু ছিলেন।’’ বিরল না হলেও ওই অস্ত্রোপচারে ঝুঁকি ছিল মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। তাঁরা বলছেন, সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে নানা অভিযোগ হয়তো বিভিন্ন সময় উঠে। এমন উদাহরণে সরকারি হাসপাতালের উপরে সাধারণ মানুষের আস্থা আরও বাড়বে। চিকিৎসক শুভেন্দুবাবুকে অবশ্য অবাক করেছে গত তিন বছর ধরে এত যন্ত্রণা কী ভাবে সহ্য করল মল্লিকা, সেই বিষয়টাই।

Safety Pin Specially Abled Girl
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy