মেরে কেটে জনা ষাটেক গ্রামবাসী শহরের বুকে পথ অবরোধে নেমেছিলেন। তবে সেই আন্দোলনে দেখতে ভিড় করলেন শ’দুয়েক মানুষ! সব মিলিয়ে রাস্তায় ঠাসা ভিড়ে বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ায় বেশ কিছুক্ষণ যান চলাচল ব্যাহত হল।
মাথায় বাঁশ দিয়ে আঘাত করে এক শ্রমিককে মেরে ফেলায় অভিযুক্ত ডাক্তারকে পুলিশ এখনও না ধরাতেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এ দিনের অবরোধ। ঘটনার পরে সাতদিন পার হয়ে গেলেও বাঁকুড়া মেডিক্যালের ওই ডাক্তার এখনও অধরা। পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে ঢিলেমির অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বাঁকুড়ার কাটজুড়িডাঙা মোড়ে পথ অবরোধে নেমেছিলেন নিহত শ্রমিক প্রশান্ত দেওঘরিয়ার (৪০) পরিবার ও তাঁর গ্রাম কুলপোত এলাকার বাসিন্দারা। হঠাৎ এলাকার ব্যস্ততম মোড়ে পথ অবরোধের কারণ জানতে জড়ো হয়েছিলেন কাঠজুড়িডাঙা এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের অনেকে ক্ষোভের কারণ জেনে সহমর্মিতায় আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ান।
গত ১৪ জুলাই সন্ধ্যায় বাঁকুড়া মেডিক্যালের আবাসনে ইলেক্ট্রিক খুঁটিতে রং করছিলেন প্রশান্ত। সেই রঙের কয়েক ফোঁটা নীচে রাখা বাঁকুড়া মেডিক্যালের শিক্ষক চিকিৎসক দেবল সোরেনের গাড়ির উপরে পড়ে। অভিযোগ, তা জানতে পেরে একটি বাঁশ নিয়ে ওই ডাক্তার প্রশান্তবাবুকে ব্যাপক মারধর করেন। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ও পরে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
ঘটনার পরেই স্বাস্থ্যভবন এবং মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানই নিয়েছে। অথচ বাঁকুড়া পুলিশ দাবি করছে, তাঁরা ওই ডাক্তারের কোনও হদিসই খুঁজে পাচ্ছে না। পুলিশের দাবি, ওই ডাক্তার ফেরার। ঘটনার পরে তাঁর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা থানার ঢেকিনেজা গ্রামে তল্লাশি চালায় বাঁকুড়া পুলিশ। কিন্তু সেখানেও তাঁর কোনও খোঁজ মেলেনি। বাঁকুড়া শহর ও দুর্গাপুরে তাঁর কিছু পরিচিত ব্যক্তিদের বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। কিন্তু কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন। ফলে পুলিশ তাঁর অবস্থান নিয়েও নিশ্চিত হতে পারছে না। জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হিরার বক্তব্য, “আমরা অভিযুক্তকে ধরতে চেষ্টা চালাচ্ছি। বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলছে। এখনও তিনি অধরা। তবে শীঘ্রই তাঁকে আমরা নাগালে পাব বলে আশাবাদী।’’
মৃত শ্রমিক প্রশান্তর পরিবারের তরফে অবশ্য তদন্তে গাফিলতির অভিযোগই তোলা হচ্ছে। প্রশান্তর বৌদি তথা জুনবেদিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যা মণিকা দেওঘরিয়ার বক্তব্য, “ও তো দাগী অপরাধী নয়। একজন ডাক্তার, তাহলে পুলিশ কেন তাকে ধরতে পারছে না? পুলিশের যুক্তি বিশ্বাসযোগ্য নয়। আসলে ওই ব্যক্তিকে ধরার আদৌ কোনও মানসিকতা পুলিশের নেই।’’ নিহতের মামা কার্তিক অধিকারীরও ক্ষোভ, “প্রশান্তকে যে দিন মারধর করেছিল ওই ডাক্তার, সে দিনই পুলিশের তাকে আটক করা উচিত ছিল। আসলে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করে আখেরে ওই ডাক্তারকে পালানোর সুযোগ করে দিয়েছে।”
এ দিন আন্দোলনে সামিল শহরের বাসিন্দারা ঘটনাটিকে অমানবিক বলে উল্লেখ করেছেন। পুলিশ যাতে অভিযুক্ত চিকিৎসককে দ্রুত গ্রেফতার করে সেই দাবিও তুলেছেন তাঁরা। কাটজুড়িডাঙার বাসিন্দা তথা বাঁকুড়া জেলা কাবাডি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দেবাশিস মজুমদার বলেন, “ঘটনাটি শোনার পরে আমরা স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। ওই শ্রমিকের পরিবারের প্রতি আমাদের সবার সমবেদনা রয়েছে। তাই এ দিন আমরা এলাকার লোকজনও ওই অবরোধে সামিল হই।” রাত পর্যন্ত পাওয়া খবরে অবরোধ ওঠেনি।