Advertisement
E-Paper

কেন সরলেন বিকাশ, জল্পনা শুরু তৃণমূলে

এই সিদ্ধান্তের পরে দলে প্রশ্ন উঠেছে, লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে সব চেয়ে খারাপ ফল বীরভূমের যে ব্লকে, সেই খয়রাশোল থেকে বিকাশবাবুর মতো ‘হেভিওয়েট’ নেতাকে সরিয়ে কেন ধারে ও ভারে  ‘কম গুরুত্বপূর্ণ’ এক জনকে দায়িত্ব  দেওয়া হল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০২
খয়রাশোলে নতুন পর্যবেক্ষক।

খয়রাশোলে নতুন পর্যবেক্ষক।

ব্লক সভাপতিহীন খয়রাশোলের পর্যবেক্ষক পদ থেকে আচমকাই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা তৃণমূলের শীর্ষ নেতা বিকাশ রায়চৌধুরীকে। সপ্তাহ খানেক আগে বোলপুরে দলের জেলা কমিটির বৈঠকে বিকাশবাবুকে সরিয়ে খয়রাশোল ব্লকের দায়িত্ব দেওয়া হয় ওই ব্লকের সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকা নেতা অরুণ চক্রবর্তীকে। তাঁকে সাহায্যের জন্য রয়েছেন দুবরাজপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান পীষূষ পাণ্ডে।

এই সিদ্ধান্তের পরে দলে প্রশ্ন উঠেছে, লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে সব চেয়ে খারাপ ফল বীরভূমের যে ব্লকে, সেই খয়রাশোল থেকে বিকাশবাবুর মতো ‘হেভিওয়েট’ নেতাকে সরিয়ে কেন ধারে ও ভারে ‘কম গুরুত্বপূর্ণ’ এক জনকে দায়িত্ব দেওয়া হল। দলের অন্দরে একটা চর্চা জোরাল হয়েছে— তা হলে কি বিকাশবাবুকে কিছুটা কোণঠাসা করা হল? তা হলে কি দলের শীর্ষ স্তরে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে?

বিকাশবাবু নিজে এবং দলের নেতৃত্ব— দু’পক্ষই এই জল্পনাকে ভিত্তিহীন বলে আখ্যা দিচ্ছেন। দলের তরফে জানানো হয়েছে, বিকাশবাবু প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় খয়রাশোলে তেমন সময় দিতে পারছিলেন না। সংগঠন মজবুত করার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত। বিকাশবাবু বলছেন, ‘‘কাজের চাপে খয়রাশোলকে সে-ভাবে দেখতে পারছিলাম না। নিজেই অব্যাহতি চেয়েছিলাম।’’

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার খয়রাশোলের তৃণমূল নেতারা বলছেন, সংগঠন মজবুত করতে দলের নতুন পর্যবেক্ষক অরুণবাবু কী করতে পারবেন, সময় বলবে। এলাকায় একটা নলকূপ গড়ে দেওয়ার আশ্বাস বা যুযুধান দু’পক্ষের সংঘাতের পরে পুলিশে হেনস্থা এড়াতে সাহায্যের আশ্বাস যে ভাবে দিতেন বিকাশবাবু, তা কি পারবেন নতুন পর্যবেক্ষক? যা জেনে বিকাশবাবুর মন্তব্য, ‘‘খয়রাশোলের পর্যবেক্ষক পদে নেই ঠিকই, কিন্তু জেলা পরিষদ সভাধিপতির পদে তো রয়েছি। সমস্যা হবে কেন!’’

গত বিধানসভা নির্বাচনেও যে ব্লক প্রায় ১৯ হাজার লিড দিয়েছিল, সেই ব্লকেই এ বছর লোকসভা নির্বাচনের ১০টির মধ্যে ৯টি পঞ্চায়েতে বিজেপির থেকে পিছিয়ে রয়েছে শাসকদল। বিপর্যয়ের জন্য ব্লক জুড়ে শাসকদলের দু’টি গোষ্ঠীর নিত্য লড়াইকেই দায়ী করেছিলেন দলের কর্মীরা। সংগঠন মজবুত করে সেই লড়াই কি সামাল দিতে পারবেন অরুণবাবু, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। খয়রাশোলের দায়িত্বে থাকা অন্য দুই নেতা তৃণমূল বিধায়ক নরেশ বাউড়ি এবং দুবরাজপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে সিদ্ধান্ত যে তাঁদের খুব পছন্দের নয়, তা ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন। অরুণবাবু যদিও বলছেন, ‘‘বিভাজন রুখে দলের নতুন-পুরনো সকলকে নিয়ে সংগঠন মজবুত করতে চাই। চাই দলের সিদ্ধান্তের মর্যাদা দিতে।’’

গত বছর অক্টোবরে খুন হন খয়রাশোলের তৃণমূল ব্লক সভাপতি দীপক ঘোষ। নতুন ব্লক সভাপতি নিয়োগ না করে বিকাশবাবুকে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে তাঁর নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছিল। লোকসভা ভোটের পরে খয়রাশোলে খারাপ ফলের জন্য কমিটি ১৪ থেকে বাড়িয়ে করা হয় ১৯ সদস্যের। তাঁকে সরিয়ে অরুণবাবুকে দায়িত্ব দেওয়ার মধ্যে অন্য রকম সমীকরণ খুঁজছেন অনেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, ‘‘দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে নিশ্চয় কোথাও একটা সমন্বয়ের সমস্যা তৈরি হয়েছে বিকাশবাবুর। খয়রাশোলের দায়িত্ব থেকে সরানো তারই ইঙ্গিত। চর্চা শুরু হয়েছে জেলা পরিষদেও।’’

এমন চর্চার কারণ যে খয়রাশোল নিয়ে সিদ্ধান্তই, তা মানছেন তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ। তবে তাঁর দাবি, ‘‘এর কোনও ভিত্তি নেই। জেলা সভাধিপতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ। সিউড়ি ১ ও রাজনগরের দায়িত্বও সভাধিপতির হাতে। সামনেই জেলার ৬টি পুরসভার ভোট। সিউড়িতে যেহেতু দিনের বেশি সময় থাকেন তিনি, সিউড়ি পুরসভার পর্যবেক্ষক হিসাবে তাঁকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তা হলে তিনি সময় পাবেন কোথায়?’’ অভিজিৎবাবুর সংযোজন, খয়রাশোলের পূর্ণ সময়ের একজন নেতার প্রয়োজন ছিল। তাই অরুণবাবুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

Jila Parisha TMC Birbhum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy