Advertisement
০৩ মে ২০২৪
আসন ফাঁকা থাকছে কলেজে

প্রশ্নে নীতি, কমছে অর্থনীতির পড়ুয়া

পড়ুয়াদের আগ্রহ রয়েছে। রয়েছেন শিক্ষকও। তার পরেও দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ স্কুলেই অর্থনীতির ক্লাসে বছরের পর বছর কোনও ছাত্রছাত্রী নেই। এর ফলে জেলার বেশ কিছু স্কুলে ওই বিষয়টিই কার্যত অবলুপ্ত হতে বসেছে।

অর্ঘ্য ঘোষ
য়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৫৯
Share: Save:

পড়ুয়াদের আগ্রহ রয়েছে। রয়েছেন শিক্ষকও। তার পরেও দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ স্কুলেই অর্থনীতির ক্লাসে বছরের পর বছর কোনও ছাত্রছাত্রী নেই। এর ফলে জেলার বেশ কিছু স্কুলে ওই বিষয়টিই কার্যত অবলুপ্ত হতে বসেছে। আর পড়ুয়া না পেয়ে বহু আসন ফাঁকা থেকে যাচ্ছে কলেজগুলিতেও। রাজ্য সরকারের শিক্ষানীতিকেই এই সঙ্কট সৃষ্টির নেপথ্যে দায়ী করছেন শিক্ষাবিদেরা।

শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, একসময় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পছন্দসই যে কোনও বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ ছিল পড়ুয়াদের। বেশি নম্বর তোলা যায় বলে কলা বিভাগের অন্যতম পচ্ছন্দের বিষয় হিসাবে বিবেচিত হয় সংস্কৃত। ভূগোলের সঙ্গে সহযোগী বিষয় হিসাবে অর্থনীতিও পড়ুয়াদের পছন্দের বিষয়। কিন্তু পরিবর্তিত শিক্ষানীতির জেরে গত তিন বছর ধরে তারা একসঙ্গে ওই দু’টি পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে পারছে না বলে অভিযোগ। কারণ, ২০১৪-’১৫ শিক্ষাবর্ষে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কলা বিভাগে একসঙ্গে সংস্কৃত ও অর্থবিদ্যা নিয়ে পড়া যাবে না বলে নিয়ম চালু করেছে রাজ্য শিক্ষা দফতর। তার পর থেকেই স্কুলগুলিতে অর্থনীতির পঠনপাঠন উঠে গিয়েছে বললেই চলে।

মাড়গ্রামের সাহাপুর হাইস্কুলে দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনীতি পড়ানোর অনুমোদন রয়েছে। বরাদ্দ রয়েছেন এক জন শিক্ষকও। স্কুলে একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের পড়ুয়ার সংখ্যা ১৫৮ জন। উচ্চ মাধ্যমিকে বসবে ১৩৩ জন। কিন্তু তাদের কারও পাঠ্যসূচিতে অর্থনীতি নেই। একই অবস্থা ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া হাইস্কুলেও। ওই স্কুলেও বরাদ্দ রয়েছেন এক জন শিক্ষক। কিন্তু কলা বিভাগের একাদশ শ্রেণির ১৬৪ এবং ১১২ জন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে এক জনেরও পাঠ্য বিষয়ে অর্থনীতি নেই। ওই স্কুলের অর্থনীতির শিক্ষক তাপস মণ্ডল, কীর্ণাহার শিবচন্দ্র হাইস্কুলের শিক্ষক পার্থসারথি পাল বলছেন, ‘‘চার বছর আগেও গড়ে প্রতি বছর ২৫-৩০ জন পড়ুয়া পাঠ্যসূচিতে অর্থনীতি রাখত। কিন্তু সংস্কৃতের পাশাপাশি একসঙ্গে পড়া যাবে না বলে অর্থনীতি পড়ার ছাত্রছাত্রী পাওয়াই দুষ্কর হয়ে উঠেছে। এ ভাবে চললে তো ওই বিষয়টিই পাঠ্যক্রম থেকে হারিয়ে যাবে।’’

এই পরিস্থিতিতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ছাত্রছাত্রী মহলে। লোকপাড়া হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী অতসী পাল, সাহাপুরের দিয়া মজুমদারেরা জানায়, ইচ্ছা থাকলেও তারা পাঠ্যসূচিতে সংস্কৃতের পাশাপাশি অর্থনীতি নিতে পারেনি। বাধ্য হয়ে অন্য বিষয় নিতে হয়েছে।

সাহাপুর হাইস্কুলেরই সহকারী প্রধান শিক্ষক তথা পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক অধীরকুমার দাসের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভাবতে অবাক লাগছে অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন এই জেলা তথা রাজ্যেরই এক জন। অথচ হঠকারী শিক্ষানীতির জেরে সেই বিষয়টিকেই ব্রাত্য করে দিল সরকার। শুধু দু’একটি স্কুলই নয়, রাজের অধিকাংশ স্কুলেই ওই বিষয়ের ছাত্রছাত্রী নেই বললেই চলে।’’

এর প্রভাব পড়েছে উচ্চস্তরেও। রামপুরহাট কলেজে অর্থনীতিতে অর্নাসের আসন সংখ্যা ৩৭। কলেজ সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০১৪-’১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে তার মধ্যে ভর্তির সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২, ১ এবং ৫। ওই কলেজের অর্থনীতির শিক্ষক অনুপম হাজরা বলেন, ‘‘স্কুলে ছাত্রছাত্রী না থাকলে তার প্রভাব তো কলেজেও পড়বে। তা ছাড়া বিষয়টি ঐচ্ছিক হওয়াতে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগও তুলনামূলক বিচারে সীমিত। কিন্তু শিক্ষকতার বাইরেই যে ওই বিষয়ে কর্মসংস্থানের বিরাট জগত আছে, সে সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই।’’ জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) রেজাউল হক জানান, এই নীতিগত সিদ্ধান্তটি রাজ্যের নেওয়া। তা নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাস বলছেন, ‘‘আমি দায়িত্বে আসার আগে বছর তিনেক আগে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তখন দু’টি বিষয়ের শিক্ষকের সংখ্যা এবং চাহিদা অনুযায়ী ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে পড়ুয়াদের একটা বড় অংশের মধ্যে কোনও সঙ্কট দেখা দিয়েছে, এমন কোনও অভিযোগ আমার কাছে এখনও আসেনি। এলে তা খতিয়ে দেখে ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফের ভাবনা-চিন্তা করা যেতেই পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Economics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE