Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জমি থেকে বালি উঠবে কবে, প্রশ্ন

মুখের হাসি মিলিয়ে গিয়েছে ননী সরকারেরও। গুটকা ধান লাগিয়ে ছিলেন পাঁচ বিঘে জমিতে। অল্প কিছু আনাজও ছিল। সবই গ্রাস করেছে বালি। একই ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত গোপাল সিংহ, মন্টু বারুইদের মতো সোনামুখীর মানাচর রাঙামাটির বাসিন্দারা।

অনাবাদি: অতিবৃষ্টিতে ঢুকে পড়া নদের জল সরে গেলেও প্রায় ফুট তিনেক বালির তলায় রয়ে গিয়েছে সোনামুখীর রাঙামাটি গ্রামের প্রায় ২০০ বিঘা সদ্য রোয়া ধান জমি। ছবি: শুভ্র মিত্র

অনাবাদি: অতিবৃষ্টিতে ঢুকে পড়া নদের জল সরে গেলেও প্রায় ফুট তিনেক বালির তলায় রয়ে গিয়েছে সোনামুখীর রাঙামাটি গ্রামের প্রায় ২০০ বিঘা সদ্য রোয়া ধান জমি। ছবি: শুভ্র মিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সোনামুখী শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৭ ০২:১০
Share: Save:

জমির ঘি কাল্লা, পটল ভালয় ভালয় তুলে ফেলতে পারলেই পুজোর কেনাকাটার চিন্তাটা আর করতে হতো না মন্মথ মণ্ডলকে। তবে সে আর হল না। সমস্ত ফসল-সহ জমি চাপা পড়ে গিয়েছে দামোদরের বালির তলায়। কবে আবার নতুন করে চাষাবাদ শুরু করা যাবে, সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন মন্মথবাবু।

মুখের হাসি মিলিয়ে গিয়েছে ননী সরকারেরও। গুটকা ধান লাগিয়ে ছিলেন পাঁচ বিঘে জমিতে। অল্প কিছু আনাজও ছিল। সবই গ্রাস করেছে বালি। একই ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত গোপাল সিংহ, মন্টু বারুইদের মতো সোনামুখীর মানাচর রাঙামাটির বাসিন্দারা।

তাঁদের এলাকার প্রায় ২০০টি পরিবার কৃষি-নির্ভর। মাস দেড়েক আগের বন্যায় এই রাঙামাটি এলাকার প্রায় দেড়শো বিঘা জমি চাপা পড়ে গিয়েছে বালির তলায়। লক্ষাধিক টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। ননীবাবুদের কথায়, ‘‘এমন দুঃসময় জীবনেও আসেনি। সামনেই দুর্গাপুজো। কেনাকাটা তো দূর, রোজ দু’মুঠো ভাতের জোগাড় করাটাই এখন আমাদের কাছে কঠিন হয়ে উঠেছে।’’ কী করে দিন চলছে?

৭৮ বছরের বৃদ্ধ মন্মথবাবু বলেন, ‘‘দু’বিঘা জমি সম্পূর্ণ বালির তলায়। ঘরে ছেলে-বৌমা, নাতি-নাতনি নিয়ে সাতটা পেট। শুধু ভাত জোটাতে হিমসিম খাচ্ছি। দুটো গাভির দেড় কেজি দুধের এক কেজি ২৩ টাকায় গোয়ালাকে বিক্রি করছি। সম্বল বলতে ওই টাকা। যে ঢেঁড়শ নিজের জমিতে করতাম, তাই এখন ২০ টাকা কেজি দরে কিনে এনেছি। শুধু ভাত আর ভাল লাগে না। নাতি-নাতনিগুলো মিড-ডে মিলের দৌলতে বেঁচে আছে।’’

মন্মথবাবুদের মতো কিছু মানুষ বাড়ির গরুর দুধ বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। ননীবাবুরা দিন মজুরি করছেন পেটের দায়ে।

এমন পরিস্থিতি যে কেবল রাঙামাটির বাসিন্দাদেরই হয়েছে তা নয়, প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে সোনামুখী ব্লকের কেনেটি মানা, মানা সমিতি, নিত্যানন্দপুরের মতো বেশ কিছু মানাচরের গ্রামে অন্তত ৮০০ বিঘা চাষ জমি দামোদরের বালির তলায় চাপা পড়ে গিয়েছে।

গ্রামবাসীর দাবি, অপরিকল্পতি ভাবে নদের বুক থেকে বালি তোলার জন্যই এ বার এই বিপর্যয় নেমে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাঙামাটির কুলডাঙার বালি ঘাটে বন্যার ঠিক আগেই প্রচুর বালি তুলে ডাঁই করে রাখা ছিল। যথেচ্ছ বালি তোলার কারণে নদীর গতিপথও পরিবর্তন হয়েছে। বন্যার জলের তোড়ে রাঙামাটি এলাকায় নদের বাঁধ ভেঙে গিয়েই চাষ জমিতে বালি উঠে এসেছে। জমি থেকে বালি সরানোর দাবিতে বহুবার তাঁরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। ননীবাবু, মন্মথবাবুরা বলেন, ‘‘প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছিল, দ্রুত জমি থেকে বালি সরিয়ে দেওয়া হবে। তার পর তো মাস দেড়েক পার হয়ে গেল। কাজই শুরু হল না। আর কবে বালি সরানো হবে? কবেই বা ফের চাষ করতে পারব?’’

কাজ কেন শুরু হয়নি? সোনামুখী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তপন হাজরার জবাব, ‘‘একশো দিনের প্রকল্পে জমি থেকে বালি তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ মঞ্জুর করে জেলা প্রশাসন।’’ একশো দিনের প্রকল্পে এই কাজ অনুমোদন করা হয়েছে কি না জানতে চাওয়া হলে বিডিও (সোনামুখী) রিজাউল আহমেদ বলেন, ‘‘অ্য্যাকশন প্ল্যান জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলার প্রতিনিধিরা এলাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেও গিয়েছেন।’’

বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা খতিয়ে দেখার কাজ শেষ হলেই বালি তোলার কাজ শুরু হয়ে যাবে।’’ তাঁর আশ্বাস, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই যাবতীয় প্রক্রিয়া সেরে কাজ শুরু হবে।

তাঁরা রাঙামাটি এলাকার ভেঙে পড়া দামোদর নদের বাঁধও মেরামতির দাবি তুলছেন।

বিডিও (সোনামুখী) বলেন, ‘‘নতুন করে বাঁধ তৈরির জন্য ব্লকের কৃষি-সেচ দফতরকে চিঠি দিয়েছি। তাঁরাও এলাকা পরিদর্শনও করে এসেছেন। তবে বাঁধ তৈরির জন্য পর্যাপ্ত মাটি পাওয়া যাচ্ছে না বলে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।’’ বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cultivation Sand Land বালি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE