Advertisement
১৮ মে ২০২৪

বেতন বৃদ্ধিতে বাড়ছে পুজোর রোশনাইও

কোথাও জরাসন্ধ বধ, কোথাও দেবী দুর্গার সঙ্গে শুম্ভ নিশুম্ভের ঘোর যুদ্ধ। কোথাও বা মাদুরাইয়ের মন্দিরের আদলে বিশাল মণ্ডপসজ্জা নিয়ে প্রস্তুত রেল শহ আদ্রা। রাত পোহালেই বিশ্বকর্মা পুজো। তার আগে থেকেই বিভিন্ন পুজো কমিটিগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা জমে উঠেছে। রেলের বিভিন্ন কার্যালয়েও চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

আদ্রায় রেলের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের একটি পুজোয় চলমান পুতুল দিয়ে জরাসন্ধ বধের কাহিনি দেখানো হবে। (ডান দিকে) বিষ্ণুপুরের কৃষ্ণগঞ্জে মৃৎশিল্পীরা শেষ মুহূর্তের তুলির টানে ব্যস্ত। —নিজস্ব চিত্র

আদ্রায় রেলের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের একটি পুজোয় চলমান পুতুল দিয়ে জরাসন্ধ বধের কাহিনি দেখানো হবে। (ডান দিকে) বিষ্ণুপুরের কৃষ্ণগঞ্জে মৃৎশিল্পীরা শেষ মুহূর্তের তুলির টানে ব্যস্ত। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
 আদ্রা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৫৮
Share: Save:

কোথাও জরাসন্ধ বধ, কোথাও দেবী দুর্গার সঙ্গে শুম্ভ নিশুম্ভের ঘোর যুদ্ধ। কোথাও বা মাদুরাইয়ের মন্দিরের আদলে বিশাল মণ্ডপসজ্জা নিয়ে প্রস্তুত রেল শহ আদ্রা। রাত পোহালেই বিশ্বকর্মা পুজো। তার আগে থেকেই বিভিন্ন পুজো কমিটিগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা জমে উঠেছে। রেলের বিভিন্ন কার্যালয়েও চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

পুলিশের হিসাবে এই বছর পঁচিশটি পুজো হচ্ছে শহরে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন ছোট বড় মিলিয়ে পুজোর সংখ্যা চল্লিশের আশেপাশে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকরী করায় রেল শহরে পুজোর জাঁকজমকেও তার কিছুটা ছাপ পড়েছে।

জেলার মধ্যে আদ্রার বিশ্বকর্মা পুজো বিখ্যাত। শহরের বাইরে থেকেও প্রচুর মানুষ রেলের দফতরগুলির পুজো দেখতে আসেন। ভিড় টানার একটা অলিখিত প্রতিযোগিতা চলে পুজোর উদ্যোক্তাদের মধ্যে। দফতরগুলি ঘুরে চোখে পড়ল, এ বারও সেই বিষয়টির ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বরাবরই চলমান মডেলের মধ্য দিয়ে মণ্ডপ সজ্জায় পৌরাণিক কাহিনি তুলে ধরার রেওয়াজ রয়েছে ঝালদায়। রেলের বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার (সাউথ)-এর কার্যালয় এ বার চলমান মাটির মডেলের মাধ্যমে মণ্ডপে তৈরি করছে জরাসন্ধ বধের দৃশ্য। নেপথ্যে ওই কাহিনি বলা হবে।

দর্শক টানতে চলমান মডেলে গল্প বলার আয়োজন করেছে আরও বেশ কিছু উদ্যোক্তা। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একটি কার্যালয় করছে শুম্ভ নিশুম্ভ বধ। সেখানে থাকছে দেবীর সঙ্গে দুই দানবের যুদ্ধ, শেষে তাদের মৃত্যু। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আর একটি কার্যালয়ের মণ্ডপ সজ্জায় এসেছে পুরনো দিনের স্মৃতিমেদুর কথা। সেখানে হাজির পুরোন আমলের স্টিম ইঞ্জিন। দৃশ্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে— ইঞ্জিন চালাচ্ছেন বিশ্বকর্মা। লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে সিগনাল দিচ্ছে তাঁর বাহন হাতি।

দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা রেল শহরের জমজমাট বিশ্বকর্মা পুজোর ছন্দে এক বার তাল কেটে গিয়েছিল। তখন নব্বইয়ের দশক। ভরা মণ্ডপে দুস্কৃতীদেরগুলিতে খুন হয়েছিলেন এক রেলকর্মী। তার পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছে শহর। নতুন করে রোশনাই ফিরেছে পুজোর আয়োজনে। এই পুজোগুলি রেলকর্মীরা নিজেরাই চাঁদা তুলে করেন। এ বারে আবার বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকরী হওয়ায় বেতন বেড়েছে। ফলে অনেক পুজোর বাজেটও বেশ কিছুটা বাড়ানো হয়েছে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।

বরাবর বড় করে পুজো করেন রেলকর্মী সংগঠনের নেতা রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। এ বারে তাঁর কার্যালয় পিডব্লুআই (পশ্চিম)-এর মণ্ডপ হচ্ছে মাদুরাই এর একটি মন্দিরের আদলে। সঙ্গে থাকছে মানানসই আলোকসজ্জা। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘প্রত্যাশিত ভাবে বেতন বাড়েনি ঠিকই। কিন্তু সামান্য হলেও বেতন বাড়ায় পুজোর বাজেট কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।”

কয়েক বছর ধরে আদ্রার বিশ্বকর্মা পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাঙালি সমিতির মাঠের সতেরো ফুট বিশ্বকর্মা মূর্তি। এ বছরও গড়া হয়েছে সেই উঁচু মূর্তি। ওই পুজো ঘিরে বাঙালি সমিতির মাঠে বসে দশ দিনের মেলা বা মিনাবাজার। পুজোর আগে তারও প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। সমিতির সম্পাদক পার্থ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আদ্রার বিশ্বকর্মা পুজোয় দুর্গাপুজোর চেয়েও বেশি ভিড় হয়। সেই কথা মাথায় রেখেই মিনাবাজারের আয়োজন করা হয়েছে।’’

সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মীদের পুজোর প্রস্তুতিও তুঙ্গে। সেখানে এ বার কাগজের মণ্ড দিয়ে ডোকরার ধাঁচে মূর্তি গড়েছেন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাস্তুকার সুদীপ সরকার। উদ্যোক্তারা জানান, ওই পুজোয় সুদীপবাবু বরাবরই ভিন্ন ধাঁচের মূর্তি গড়েন। বিদ্যুৎকেন্দ্র কলোনির আবাসনে ডি টাইপের মাঠের সামনে পুজো করেন কর্মীরা। ওই মণ্ডপে মূর্তি গড়েছেন সুদীপবাবু। তিনি জানান, খবরের কাগজ জলে ভিজিয়ে, হাত দিয়ে ঘষে, কাঠির আকার দেওয়া হয়েছে। মূর্তির খড়ের কাঠামোর উপরে ওই কৃত্রিম কাঠি দিয়ে ডোকরার ধাঁচ আনা হয়েছে।

এ দিকে ভিড় সামলাতে বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। গত বার পুজোর দুই দিন শহরের কয়েকটি রাস্তায় বড় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, এ বারেও কিছু রাস্তায় নো-এন্ট্রি বোর্ড বসানো হচ্ছে। ভিড় সামলাতে বিভিন্ন থানা ও পুলিশ লাইন থেকে দু’শোরও বেশি পুলিশ কর্মীকে নিয়ে এসে দু’ দিনের জন্য আদ্রায় মোতায়েন করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Biswakarma puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE