দুই-ছবি: রাস্তায় কাজ। যানজটে আটকে। নিজস্ব চিত্র
পুজোর আগেই রাস্তা সারাইয়ের ধুম পড়েছে পুরশহরে। আর তাতেই, আশঙ্কা সত্যি করে পুজোর সপ্তাহের প্রথম দিন পথে বেরিয়ে নাস্তানাবুদ হলেন বিষ্ণুপুরের বাসিন্দারা। সোমবার যানজটে নাজেহাল ছিল শহর। বিশেষ করে বাহাদুরগঞ্জ, বোলতলা, বৈলাপাড়া, গোপালগঞ্জে ভোগান্তি হয়েছে। শেষ বেলায় পুজো আর মহরমের কেনাকেটা করতে বেরিয়েছিলেন যাঁরা, প্রখর রোদে ঘেমে নেয়ে একশা হয়েছেন।
পুজোর মুখে বিষ্ণুপুর পুরসভার পিচ রাস্তার ধারে কংক্রিটের ঢালাইের কাজ শুরু হয়েছিল। সেই কাজের পরিকল্পনা ও পদ্ধতি নিয়ে শহরবাসীর একাশ প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, কোনও বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই দিনের বেলা রাস্তা খুঁড়ে কাজ হচ্ছে। এমনিতেই দীর্ঘদিন শহরের মধ্যে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ব্যবসা বিশেষ জমছিল না বলে দাবি করছিলেন অনেক ব্যবসায়ী। তাঁদের ক্ষোভ, পুজোর সময় সংস্কারের জন্য রাস্তা বন্ধ হয়ে বিকিকিনিতে আরও ক্ষতি হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘এক দিকে জিএসটি-র ধাক্কা, তার উপরে পুরসভা আর সময় পেল না রাস্তা সারাই করার। আমারা সারা বছর এই সময়টার দিকেই তাকিয়ে থাকি। খুব লোকসান হল।’’
এর মধ্যেই যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সিভিক ভলান্টিয়ারদের গা ছাড়া মনোভাবের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দমদম থেকে ছোট গাড়ি নিয়ে বিষ্ণুপুর বেড়াতে এসে যানজটে আটকে পড়েছিলেন বাসুদেব মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘আজব শহর! মোড়ে মোড়ে সিভিক পুলিশ আছে, কিন্তু গাড়ি সামলানোর থেকে মোবাইল নিয়েই তাঁদের ব্যস্ততা বেশি।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘কোনও শহরে দেখিনি দুপুর ১২টা নাগাদ পুরসভার গাড়ি ময়লা তুলতে তুলতে প্রধান রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে।’’ বাঁকুড়া থেকে ব্যবসার কাজে বিষ্ণুপুরে এসেছিলেন বিমল দে। তিনি বলেন, ‘‘যখনকার কাজ তখন না করে পুজো পর্যন্ত ফেলে রাখা হল কেন সেটাই বুঝতে পারছি না। আর এতো দিন যখন ফেলে রাখা গেল, পুজোর কটা দিনে কী এমন ক্ষতি হতো? এতে তো লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে।’’
বিষ্ণুপুরের পুর প্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘‘সব নিন্দুকেদের ফালতু কথা। ২২ থেকে ৩০ শতাংশ কম খরচে ঠিকাদাররা কাজ করছেন। রাতের বেলা কাজ করলে খরচা বেড়ে যাবে না? ওদের দিকটা দেখতে হবে তো, না কি?’’
পুরপ্রধানকে পুজোর সময়ে সাধারণ মানুষের হয়রানি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর জবাব, ‘‘কাজ না করলেও সবাই বলবে, আবার কাজ করলেও অসুবিধা! উন্নয়নের কাজটা করবো কখন? তাড়াতাড়ি করতে হবে তো।’’ তাঁর দাবি, শহরের ময়লা ফেলা নিয়ে সমস্যা চলছে বলে সাফাই করতে দেরি হচ্ছে।
আইসি (বিষ্ণুপুর) আস্তিক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যানজট নিয়ে মিটিং হয়েছে। পুজোর ক’টা দিন কোনও অসুবিধা হবে না।’’ তিনি জানান, শহরের মধ্যে পর্যটকদের জন্য হেল্পডেস্ক খোলা হবে চার জায়গায়। পুজোর ক’দিন বড় পণ্যবাহী ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হবে না শহরে। সিভিক ভলান্টিয়ারদের সজাগ হয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে, জানান তিনি।
শেষ পর্যন্ত কী হয়, আপাতত সেটাই দেখার অপেক্ষায় শহরবাসী।