Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Pathashree Project

সূচনা-অনুষ্ঠান সরকার না তৃণমূলের! কটাক্ষ

সম্প্রতি জেলা তৃণমূলের বৈঠকে এ দিন কাজের সূচনা হওয়া প্রতিটি জায়গায় অন্তত ৫০০ জন দলীয় কর্মীর জমায়েতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যে রাস্তার কাজের সূচনা হচ্ছে, তার দু’পাশে দলীয় পতাকা বাঁধতে হবে।

A Photograph of TMC project

বড় উরমা পঞ্চায়েতের সাগমা তালতল-পাঁড়দ্দা রাস্তায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৩ ০৬:৫৮
Share: Save:

‘পথশ্রী-রাস্তাশ্রী’ প্রকল্পে পুরুলিয়ায় ৩২৮টি গ্রামীণ রাস্তার কাজের সূচনা হল মঙ্গলবার। জেলার প্রতি ব্লকে একটি প্রকল্পস্থলকে মূল অনুষ্ঠানের জন্য বাছা হয়েছিল। সেখানে দূরসঞ্চার ব্যবস্থার মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজের সূচনার অনুষ্ঠান দেখানোর ব্যবস্থা ছিল। তবে এ দিনের প্রশাসনিক অনুষ্ঠানকে কার্যত ‘দলীয় কর্মসূচি’তে পরিণত করেছে তৃণমূল, অভিযোগ বিরোধীদের। অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।

পুঞ্চায় জেলার মূল অনুষ্ঠানে ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান শান্তিরাম মাহাতো, মানভূম কালচারাল অ্য়াকাডেমির চেয়ারম্যান হংসেশ্বর মাহাতো, কুড়মি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুনীল মাহাতো, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) আদিত্য বিক্রম এম হিরানি, জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৃষ্ণচন্দ্র মাহাতো প্রমুখ। মানবাজার ১ ব্লকের কামতা-জাঙ্গিদিরি পঞ্চায়েতে ছিলেন মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু। অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে সভাধিপতি দাবি করেন, “পালাবদলের পরে জেলার রাস্তাঘাটের প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়া মানুষের চাহিদা মেনে মুখ্যমন্ত্রী এই প্রকল্পের সূচনা করলেন। আমরা নির্বাচনে এর সুফল পাব।” শান্তিরামের পর্যবেক্ষণ, আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে ‘পথশ্রী’ ভাল প্রভাব ফেলবে। কেন্দ্রের বঞ্চনা সত্ত্বেও এ দিন রাজ্য জুড়ে ১২ হাজারেরও বেশি কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তার কাজের সূচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রকল্পগুলিকে সামনে রেখে এ দিন দলীয় কর্মীদেরও এক সঙ্গে চলার বার্তা দেন তিনি।

সম্প্রতি জেলা তৃণমূলের বৈঠকে এ দিন কাজের সূচনা হওয়া প্রতিটি জায়গায় অন্তত ৫০০ জন দলীয় কর্মীর জমায়েতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যে রাস্তার কাজের সূচনা হচ্ছে, তার দু’পাশে দলীয় পতাকা বাঁধতে হবে। তবে কাজগুলি সরকারি অনুষ্ঠানের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে করার নির্দেশও দেওয়া হয়। তবে অভিযোগ, এ দিন জেলার একাধিক জায়গাতেই সরকারি অনুষ্ঠান ও দলীয় কর্মীদের যোগদানে ফারাক ছিল না। সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ বাদ রেখে মঞ্চের সামনের জায়গা দলীয় পতাকায় মুড়ে দেওয়া হয়েছে, এমন ছবি দেখা গিয়েছে বলরামপুর ব্লকের বড় উরমা পঞ্চায়েতের সাগমা তালতল-পাঁড়দ্দা রাস্তার কাজের সূচনাস্থলেও। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান গদাধর মাহাতো বা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য উর্মিলা মাহাতো হাজির থাকলেও অনুষ্ঠানের রাশ ছিল জেলা তৃণমূলের সম্পাদক সুভাষ দাস গোস্বামী ও দলের বলরামপুর ব্লক সভাপতি ধনঞ্জয় মুর্মুর হাতে। সরকারি কোনও আধিকারিককেও বক্তব্য রাখতে দেখা যায়নি। সুভাষ বলেন, “এলাকার বাসিন্দা হিসেবে উন্নয়নের কাজে হাজির ছিলাম। তবে কাজের সূচনা করেছেন পঞ্চায়েত প্রধান।” ব্লক সভাপতি ধনঞ্জয় মুর্মু বলেন, “এই রাস্তা স্থানীয় মানুষের চাহিদা মেনে গড়ে উঠছে। তাই মানুষ এসেছেন। আমরাও এসেছি।”

জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, “কংগ্রেসের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অনুষ্ঠানে ডাকাই হয়নি। যেভাবে সরকারি কর্মসূচিকে দলের প্রচারে ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়ে আমরা সরব হব।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের প্রশ্ন, “তৃণমূল কি দল ও সরকারে কোনও ফারাক রাখে! এই প্রশ্ন তো আমরা দীর্ঘদিন ধরেই তুলে আসছি।” বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গার টিপ্পনী, “গ্রামে সংগঠনের অবস্থা বর্তমানে কী অবস্থায় রয়েছে, তা তৃণমূল নেতৃত্ব জানেন। তবে সরকারি কর্মসূচির আড়ালে এ ভাবে দলের প্রচারে লাভ হবে না।”

জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “বিজেপি কী ভাবে দলতন্ত্রের অভিযোগ তোলে! আমরা কি রেলের অনুষ্ঠানগুলি দেখছি না!, সেখানে দলের পতাকা পর্যন্ত লাগানো হচ্ছে। আর এই রাস্তাগুলির কাজের সূচনা মুখ্যমন্ত্রী করেছেন মানুষের চাহিদা মেনে, রাজ্য সরকারের অর্থে। ওদের (বিজেপি) মুখে এই কথা মানায় না।” সরকারি অনুষ্ঠান হয়েছে আলাদা করে। সেখানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দলের কর্মীরাও গিয়েছেন। এতে মহাভারত অশুদ্ধ হয় না, দাবি তাঁর।

বাঁকুড়াতেও এ দিন ৩৯৬টি নতুন রাস্তার কাজের সূচনা হয়। বড়জোড়ার নান্দিন গ্রামে জেলা স্তরের অনুষ্ঠানে ছিলেন জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার। তবে জেলাতেও নানা জায়গায় জনপ্রতিনিধি নন, এমন তৃণমূল নেতাদের সরকারি মঞ্চে দেখা গিয়েছে বলে দাবি। জেলার এক তৃণমূল নেতা বলেন, “দল থেকেই আমাদের অনুষ্ঠানগুলিতে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।” ঘটনায় সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, “পাঁচ বছর ধরে যে কাজগুলি করা হয়নি, ভোটের মুখে সেগুলি করা হচ্ছে। উন্নয়নের কাজ নিয়ে আমাদের কোনও প্রশ্ন নেই। তবে এই ঘটনা উন্নয়নের নামে তৃণমূলের প্রচারে পরিণত হয়েছে।” বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানা বলেন, “আমরা সাধারণের ভোট পেয়ে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েও সরকারি অনুষ্ঠানে ডাক পাচ্ছি না। আর তৃণমূলের ব্লক সভাপতি, অঞ্চল সভাপতিরা জনপ্রতিনিধি না হয়েও সরকারি অনুষ্ঠানে অতিথি হচ্ছেন।” পাল্টা বড়জোড়ার তৃণমূল বিধায়ক অলক মুখোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূল সরকার মানুষকে পরিষেবা দেয়। আর বিরোধীরা উন্নয়নের কাজেও রাজনীতি দেখেন। এটাই ওদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য। সরকারি অনুষ্ঠান নিয়ম মেনেই হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pathashree Project TMC controversy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE