কেন্দ্রের নিয়ম বলছে, ব্যাঙ্ক এবং এটিএম মিলিয়ে সপ্তাহে ২৪ হাজার টাকা তুলতে পারবেন কেউ। সেই আশাতেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে লাইন দিয়েছিলেন রামপুরহাট থানার বড়শাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস ভট্টাচার্য। কিন্তু, হাতে নগদ কম, এই যুক্তি দেখিয়ে ব্যাঙ্ক তাপসবাবুকে দিয়েছে মাত্র দু’হাজার। এত কম টাকা হাতে নিয়ে বেজায় চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
চিন্তার কারণ, স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) পরীক্ষা। হাতে টাকা থাক বা না-ই থাক, পরীক্ষা তো নিতেই হবে! অতএব ‘ম্যানেজ’-এর পথে হাঁটতে হচ্ছে ওই স্কুল কর্তৃপক্ষকে।
আজ, রবিবার হবে এসএসসি-র প্রথম ধাপের অর্থাৎ নবম ও শ্রেণির জন্য পরীক্ষা। বীরভূম জেলার তিন মহকুমায় আজ মোট ১২টি কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে। আগামী ৪ ডিসেম্বরও এসএসসি-র একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়া হবে। ওই দিন পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি হওয়ার জন্য জেলায় আরও কয়েকটি পরীক্ষাগ্রহণ কেন্দ্র বাড়ানো হয়েছে। এসএসসি-র তরফ থেকে পরীক্ষা পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পরীক্ষাগ্রহণ কেন্দ্রগুলির নামে বরাদ্দ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী কেন্দ্রগুলি ২৫ থেকে ২৫ হাজার টাকার চেক পেয়েছে। সেই চেক জমা দিয়েও প্রয়োজনীয় টাকা না পেয়ে পরীক্ষা পরিচালনা নিয়ে আতান্তরে পড়েছে ওই সব পরীক্ষা কেন্দ্র।
পরীক্ষাগ্রহণ কেন্দ্রে কর্তব্যরত ইনভিজিলেটর বা পরীক্ষা পরিদর্শত, পরীক্ষার সুপারভাইজার, পরীক্ষার্থীদের চেকিং করার জন্য নিযুক্ত কর্মীদের এবং পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে নিযুক্ত রক্ষীদের জন্য পারিশ্রমিক বাবদ ওই টাকা দেওয়া হয় এসএসসি-র তরফ থেকে। কেন্দ্রগুলির কর্তৃপক্ষেরা ওই চেক হাতে পেয়েছেন বৃহস্পতিবার। শনিবার ছিল ব্যাঙ্ক বন্ধ। ফলে, শুক্রবারই বিভিন্ন স্কুলের তরফে চেক ভাঙাতে লাইন দেওয়া হয়েছিল ব্যাঙ্কে। কিন্তু, কেউই পর্যাপ্ত টাকা পাননি।
তাপসবাবু জানালেন, আজ ৪৫০ জন এবং আগামী ৪ ডিসেম্বর ৩৯০ জন পরীক্ষার্থীর জন্য মোট ২৬ হাজার ৬০০ টাকার চেক পেয়েছিল তাঁর স্কুল। রামপুরহাটে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের প্রধান শাখায় স্কুলের অ্যাকাউন্টে ওই চেক জমা দেওয়ার পরে ব্যাঙ্কে ২৪ হাজার টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। তাপসবাবুর কথায়, ‘‘কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ক্যাশ নেই জানিয়ে আমাকে মাত্র ২ হাজার টাকা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি মহকুমা প্রশাসনে এসএসসি-র দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটকে জানাই। তাতেও কোনও সুরাহা হয়নি। এ দিকে পরীক্ষা নিতেই হবে। ফলে নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করে পরীক্ষা চালাতে হবে।’’ রামপুরহাট হাইস্কুলে পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে আছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক নিখিলকুমার সিংহ। তিনি জানান, আজ ৪৯২ জন এবং ৪ তারিখ ৪৭৩ জন পরীক্ষা দেবেন। পরীক্ষা পরিচালনার জন্য স্কুলের খাতে টাকা ঢুকলেও নোটের আকালে ব্যাঙ্ক থেকে সামান্যই টাকা মিলেছে। ফলে, পুরো বিষয়টাই ম্যানেজ করতে হচ্ছে।
জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বেশি। প্রায় ছ’শো। মোট ৩৫ হাজার ৩০০ টাকার চেক পেয়েছিল ওই স্কুল। র সহকারী প্রধানশিক্ষক প্রকাশকুমার দে বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কে জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু, সেই ব্যাঙ্কে ক্যাশ না থাকায় আবার অন্য ব্যাঙ্কে লাইন দিয়ে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে পরীক্ষা পরিচালনার জন্য ১০ হাজার টাকা তুলেছি। এক সহকর্মীর কাছ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ধারও করেছি। পরে মিটিয়ে দেব।’’ সিউড়ি বেণীমাধব ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক শিশির দাসবৈরাগ্য জানান, চেক ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে কিনা খোঁজ নিতে পারিনি। পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কাউকে কোনও টাকা দিতে পারব না। তবে মনে হচ্ছে কিছু টাকা নিজের পকেট থেকে খরচ করতে হবে। বোলপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় সাধুর কথায়, ‘‘পরীক্ষার দিন কোনও ভাবে ম্যানেজ করে নিতে নিচ্ছি। সোমবার ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে ইনভিজিলেটর ও অন্যান্যদের টাকা দিতে হবে।’’
স্কুলগুলির এই সমস্যার ব্যাপারে বীরভূমের জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী শুধু বলেন, ‘‘পরীক্ষা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আমার কিছু বক্তব্য নেই।’’ কলেজ সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা তো টাকা দিয়েই দিয়েছি। এখন ব্যাঙ্ক থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলি পর্যাপ্ত টাকা না পেলে তার দায় এসএসসি-র নয়। কিন্তু, পরীক্ষা নিতেই হবে। তা তো আর বাতিল করা যায় না!’’ তাঁর সংযোজন, টাকা স্কুলের অ্যাকাউন্টেই রয়েছে। পরে তুলতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy