Advertisement
০৬ মে ২০২৪

তলবি সভা হবে কি, শুরু জল্পনা

নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে জুন মাসে দলের রাজনৈতিক সম্মেলনে সমস্ত স্তরের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মিলেমিশে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৬ ০১:২০
Share: Save:

নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে জুন মাসে দলের রাজনৈতিক সম্মেলনে সমস্ত স্তরের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মিলেমিশে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার এক সপ্তাহ পার হতে না হতেই পুরুলিয়া জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অনাস্থার চিঠি দিয়েছিলেন এই স্থায়ী সমিতির অন্য চার সদস্য।

গত শনিবার দলের নীতি নির্ধারণ কমিটির বৈঠকে দলনেত্রী শীর্ষ নেতৃত্বকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, পঞ্চায়েতের তিনটিস্তরে দলেরই একাংশের অনাস্থা আনা নিয়ে তিনি রীতিমতো অসন্তুষ্ট। কোনও সমস্যা থাকলে সদস্যেরা দলের জেলা নেতৃত্বকে তা জানাতে পারবেন। কিন্তু দলেরই কারও বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা যাবে না। দরকার হলে বিক্ষুদ্ধরা দল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারেন। এই নির্দেশের পরে আজ শুক্রবার উত্তমবাবুকে সরাতে পূর্বনির্ধারিত তলবিসভা হবে কি না তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।

গত ২১ জুন বর্ধমান বিভাগের কমিশনারকে লেখা অনাস্থা প্রস্তাবের চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন পুষ্প বাউরি, বড়কারাম টুডু, অনাথবন্ধু মাজি ও সুধীর সোরেন। চিঠিতে সংশ্লিষ্ট স্থায়ী সমিতির এই চার সদস্যের অভিযোগ ছিল, কর্মাধ্যক্ষ তাঁদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ফলে পঞ্চায়েত আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে, এই দাবি করে তাঁরা আবেদনের প্রেক্ষিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে উত্তমবাবু জানিয়েছিলেন, সমস্ত অভিযোগই ভিত্তিহীন। তাঁকে কাজই করতে দেওয়া হয়নি। সেই অনাস্থার চিঠির প্রেক্ষিতে সভা তলব করা হয়েছে কমিশনারের দফতর থেকে। জেলা পরিষদ ভবনেই এই সভা হওয়ার কথা। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই সভা কি শেষমেশ হবে তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরে।

দল সূত্রে জানা গিয়েছে, ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের অনাস্থা সংক্রান্ত বিধির ফাঁস কাটতে না কাটতে যে ভাবে বিভিন্ন জেলার গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতি এমনকী খোদ জেলা পরিষদের কোনও পদ নিয়ে অনাস্থার চিঠি জমা পড়ছে, তাতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিরক্ত। বিধানসভা নির্বাচনে ব্যাপক সাফল্যের পরেও এই ধরনের অনাস্থা আনার ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন নেতৃত্ব। দলনেত্রীর ওই বৈঠকে জেলা সভাপতিরাও ছিলেন। রাজ্য নেতৃত্ব জেলাকে জানিয়েছে, দলের কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে দলেরই কারও অভিযোগ থাকতেই পারে। সেই অভিযোগের নিস্পত্তি করবে দলেরই শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। জেলা সভাপতির মাধ্যমে সেই অভিযোগ দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির গোচরে নিয়ে আসতে হবে। তৃণমূলের পুরুলিয়ার এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি যদি মনে করে অভিযোগের সত্যতা রয়েছে, তাহলে কমিটি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। সংশ্লিষ্ট নেতা কোনও পদে থাকলে প্রয়োজনে কমিটি তাঁকে পদত্যাগের নির্দেশও দিতে পারে।’’

প্রশ্ন উঠেছে এই নির্দেশের পরে কি আজ শুক্রবার জেলা পরিষদে অনাস্থার ভোটাভুটি হবে? সংশ্লিষ্ট স্থায়ী সমিতির তিন সদস্য বড়কারাম টুডু, অনাথবন্ধু মাজি ও পুষ্প বাউরি বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘এই বিষয়ে আমরা আগাম কোনও মন্তব্য করব না।’’ বড়কারামবাবু বলেন, ‘‘এ বিষয়ে দলের জেলা সভাপতি যা বলবেন সেই নির্দেশই পালন করব।’’

জেলা পরিষদে তৃণমূলে দলনেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দলের সদস্য দলেরই কারও বিরুদ্ধে অনাস্থা আনছে এটা বিসদৃশ। যাঁরা অনাস্থা আনতে চান, তাঁদের বক্তব্য শুনে দল যা নির্দেশ দেবে তা সকলকেই মেনে চলতে হবে। দল যদি পদত্যাগের নির্দেশ দেয় তাই মানতে হবে। তারপরেও যদি তিনি সেই নির্দেশ অমান্য করেন, তাহলেই অনাস্থার প্রশ্ন আসে। দলনেতা হিসেবে আমি দলকে সবই জানিয়েছি। দল পুরো বিষয়টি দেখছে।’’ দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘অনাস্থা যাতে না হয় দেখছি।’’ যদিও জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো বলেন, ‘‘অনাস্থার সভা হবে বলে চিঠি পেয়েছি। অনাস্থার সভা না হওয়ার তো কোনও কারণ নেই!’’ শেষমেশ কী হয়, অপেক্ষায় তৃণমূল কর্মীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Speculation requisitioned meeting
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE