Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

পৌঁছয়নি প্রশাসন, ক্ষুব্ধ আটলা গ্রাম

বোঁ বোঁ শব্দ। আর তার সঙ্গে তীব্র বেগের হাওয়া! আধঘণ্টা ধরে বিকট শব্দে ধেয়ে আসল ঝড়। আর তাতেই চরম ক্ষতির সম্মুখীন হল রামপুরহাট থানার আটলা গ্রাম। গ্রামের আদিবাসী পাড়া থেকে দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া মিলে ৬০টিরও বেশি বাড়ির ছাউনি ক্ষতিগ্রস্ত হল। সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়েছে চারটি বাড়ি। গ্রামের আদিবাসী পাড়ায় ৪৮টি বাড়ির মধ্যে কমবেশি সব বাড়িরই ছাউনি ক্ষতিগ্রস্ত।

গ্রামে ঝড়ে ভেঙে যাওয়া ঘরবাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

গ্রামে ঝড়ে ভেঙে যাওয়া ঘরবাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০৩:১১
Share: Save:

বোঁ বোঁ শব্দ। আর তার সঙ্গে তীব্র বেগের হাওয়া!

আধঘণ্টা ধরে বিকট শব্দে ধেয়ে আসল ঝড়। আর তাতেই চরম ক্ষতির সম্মুখীন হল রামপুরহাট থানার আটলা গ্রাম। গ্রামের আদিবাসী পাড়া থেকে দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া মিলে ৬০টিরও বেশি বাড়ির ছাউনি ক্ষতিগ্রস্ত হল। সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়েছে চারটি বাড়ি। গ্রামের আদিবাসী পাড়ায় ৪৮টি বাড়ির মধ্যে কমবেশি সব বাড়িরই ছাউনি ক্ষতিগ্রস্ত। অথচ ২৪ ঘণ্টা পরেও সেখানে প্রশাসনের কারও পা পড়েনি। তা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে এলাকায়। অবশ্য রামপুরহাট ১ বিডিও নীতিশ বালার আশ্বাস, ‘‘তদন্ত করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ত্রিপল এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ করা হবে। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করা হবে।’’

রবিবার গ্রামে ঢুকতে গিয়ে দেখা গেল লেট পাড়ার বসতিহীন একটি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। লেটপাড়ার বাসিন্দা কৈলাশ লেটের ছিটে বেড়ার বাড়ির খড়ের ছাউনি সম্পূর্ণ উড়ে গিয়েছে। কাঞ্চন মণ্ডলের বাড়ির একাংশের টিনের ছাউনি আবার গোটাটাই উড়ে গিয়েছে। আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দা ঝিমেল টুডুর বাড়ির খড়ের ছাউনি কড়ি-বরগা সমেত উড়ে গিয়েছে। দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা শ্যামল লেটের খড়ের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। বাড়ির দেওয়ালে ফাটল ধরে যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে। দক্ষিণ পাড়ার আর এক বাসিন্দা মদন লেটের টিনের ছাউনি একাংশ উড়ে গিয়ে লাগোয়া কুড়ি এবং পঞ্চাশ মিটার দূরত্বে দু’টি উঁচু তেঁতুল গাছে আটকে গিয়েছে। গ্রামের বামদেবতলা পাড়ায় ষষ্ঠী লেটের বাড়ির উপর বড় নিমগাছ উপড়ে পড়ে গিয়েছে। গ্রামের উত্তর দিককার মাঠে বিদ্যুৎবাহী ১১,০০০ লাইন ছিঁড়ে গিয়ে গ্রামের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। গ্রামের ভিতরে আদিবাসী পাড়া, লেটপাড়া, বামদেবতলা পাড়ায় বিদ্যুৎবাহী তার ছিঁড়ে গিয়েছে। গ্রামে দু’টি বিয়ে বাড়ির প্যান্ডেল ভেঙে পড়েছিল। গ্রামের বাসিন্দা কাঞ্চন মণ্ডল, পঞ্চায়েত সদস্য বাম লেটরা বলছেন, ‘‘ঝড় এবং বৃষ্টির তাণ্ডবে গ্রামের উত্তর, পূর্ব এবং পশ্চিমপাড়ার মাঠে সব মিলিয়ে প্রায় এক হাজার বিঘে জমির পাকা ধান ক্ষতিগ্রস্ত। মাঠের ধান শুয়ে পড়েছে। জমিতে জল জমে থাকার জন্য পাকা ধান ঘরে তুলতে গিয়ে চরম নাকালের মধ্যে পড়তে হবে।’’

এ দিন সকালে আটলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, লেট পাড়া, আদিবাসী পাড়া, বামদেবতলা পাড়া, দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়ায় বাসিন্দারা ঝড়-বৃষ্টিতে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া বাড়িগুলির ছাউনি ঠিক করতে ব্যস্ত। দক্ষিণপাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলি নিজেদের বসতবাড়ির ভেঙে পড়া কড়ি-বড়গা, ছাউনির অভাবে বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া বাড়ির আসবাবপত্র, গৃহস্থালির সরঞ্জাম, বিছানাপত্র, মজুত খাবার সরানোর কাজে ব্যস্ত। দক্ষিণপাড়ার বধূ পুষ্প লেট বলেন, ‘‘কী অসুবিধায় যে কাল বিকেল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত কাটাচ্ছি, সেটা আমরাই জানি! প্রশাসনের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও সাহায্য পাইনি।’’ গ্রামের বাসিন্দা মদন লেট জানালেন, শনিবার থেকে এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ গ্রামে আসেনি। তাঁদের দাবি, পঞ্চায়েত বা ব্লক অফিস থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলি ভাল ভাবে পর্যবেক্ষণ করে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হোক। গ্রামের বাসিন্দা উমাশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় জানালেন, গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করলে ভাল হয়। এ দিকে, পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের বাম লেটের দাবি, ‘‘ঝড়ের পরেই গ্রামের প্রত্যেকটি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ঘুরে ঘুরে এসেছি। এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৬০-৭০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত । মাঠের পাকা ধান ক্ষতিগ্রস্ত। সংশ্লিষ্ট বিডিও-কে ঝড়ের ব্যাপারে জানানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rampurhat Heavy Storm bamdev tala BDO rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE