স্কুলের সামনে বিক্ষোভকারীদের জটলা।
ইতিউতি বিক্ষোভ চলছিলই। এ বার সাইকেল না পাওয়ার ক্ষোভের আঁচ জাতীয় সড়কে।
অবিলম্বে সাইকেল বিলির দাবিতে মঙ্গলবার পুরুলিয়া-বাঁকুড়া ৬০-এ জাতীয় সড়ক টানা পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখল পুরুলিয়া ২ ব্লকের গেঙাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। বেলা সাড়ে দশটার পর থেকে স্কুলের সামনে অবরোধের জেরে জাতীয় সড়কের দু’পাশেই যাত্রিবাহী বাস-সহ প্রচুর যানবাহন আটকে পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন বহু মানুষ। তাঁদের ক্ষোভ, এতক্ষণ জাতীয় সড়ক আটকে থাকলেও পুলিশ তা সরাতে উদ্যোগী হয়নি। শেষে মহকুমাশাসকের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে।
ওই স্কুলের পড়ুয়াদের আবার দাবি, বারবার দরবার করেও সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল তারা পায়নি। এ দিন অবরোধ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র পুরুলিয়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্মল মাহাতো জানান, এই ব্লকের অন্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল পেয়েছে। কেবল গেঙাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদেরই সাইকেল দেওয়া হয়নি। একাধিক বার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে এই দাবিতে দরবার করা হয়েছে। বিডিও-র কাছেও আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন গা করেনি। তাই বাধ্য হয়ে তাঁদের অবরোধে নামতে হয়েছে, দাবি নির্মলের।
এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার উপরে বসে রয়েছে পড়ুয়ারা। তাদের হাতের প্ল্যাকার্ড লেখা ‘গেঙাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের এখনও সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল দেওয়া হল না, কেন জবাব দাও’। তাদের দাবি, অবিলম্বে সাইকেল দিতে হবে। নয়তো কোনও প্রশাসনিক কর্তাকে উপস্থিত হয়ে লিখিত ভাবে জানাতে হবে কবে সাইকেল দেওয়া হবে। বিপ্লব মাহাতো, ফারুক আনসারি, নবকুমার মাহাতো, পূজা বাউরিদের মতো ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভ, বারবার দাবি জানিয়েও সাইকেল পাচ্ছে না তারা। কারণও পরিষ্কার ভাবে জানানো হচ্ছে না। তাই তারা আন্দোলনে নেমেছে। অবরোধের ফলে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল গাড়ি। পুরুলিয়া শহর থেকে বাসে হুড়া যাচ্ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ামুল খান, মৈত্রেয়ী মণ্ডল, সুরজিৎ রায়। তাঁরা বলেন, ‘‘অনেকক্ষণ ধরে অবরোধে আটকে রয়েছি। কখন উঠবে জানি না। আজ আর যাওয়াই হবে না।’’ অসুস্থ ছেলেকে পুরুলিয়ায় ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন ভাগ্য মাহাতো নামে এক মহিলা। ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষার পর বাস থেকে নেমে হাঁটা দিলেন তিনি। বছর দুয়েকের শিশুকে কোলে নিয়ে পুরুলিয়া শহরে আসছিলেন শবরী মাহাতো। তিনিও উপায় না দেখে বাস থেকে নেমে হাঁটা দিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘কতক্ষণ এ ভাবে বসে থাকা যায়। বাচ্চাটা অসুস্থ, ডাক্তার তো দেখাতেই হবে।’’
টানা অবরোধে নাজেহাল হয়ে অবশেষে পায়ে হেঁটেই গন্তব্যের দিকে যাত্রীরা।
এ দিন জাতীয় সড়ক ধরে হুড়ার লালপুরে যাওয়ার পথে অবরোধে আটকে পড়ে পুরুলিয়ার জেলা জজ নরেন্দ্র রাই ও জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সদস্য সচিব রোহন সিংহের গাড়িও। রোহনবাবু গাড়ি থেকে নেমে অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি রাস্তা অবরোধ মুক্ত করার অনুরোধ করলেও কাজ হয়নি। অবরোধে আটক বিভিন্ন এলাকার যাত্রীরা বলতে থাকেন, পাঁচ ঘণ্টা জাতীয় সড়ক আটকে থাকবে। আর প্রশাসন চুপ হয়ে থাকবে!
এ দিন অবরোধ তুলতে যাওয়া পুলিশকে দেখা যায়, অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অনড় মনোভাব দেখে কার্যত হাল ছেড়ে দিতে। অবরোধে দুপাশে গাড়ির লম্বা লাইন বাড়তে থাকায় আরও পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে গেলেও কাজ হয়নি। গেঙাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু, এখনও স্কুলে সাইকেল আসেনি। তবে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাইকেল এলেই দিয়ে দেওয়া হবে।’’ তিনি জানান, শ’চারেক সাইকেল বাকি রয়েছে। কিন্তু, পড়ুয়ারা সেকথা মানতে নারাজ। এ দিন ইন্দ্রনীলবাবু নিজেও রাস্তায় বেরিয়ে পড়ুয়াদের অবরোধ তুলতে বলেন। কিন্তু, প্রধান শিক্ষকের কথাও কানে তোলেনি ছাত্রেরা। পুরুলিয়া ২ ব্লক অফিসের প্রতিনিধি মানিক ওঝাও এসে বোঝালেও ফল হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘সাইকেল আমাদের হাতে নেই। এলেই দেওয়া হবে। কিন্তু ওরা কোনও কথাই শুনতে চাইছে না।’’
দীর্ঘক্ষণ অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান মহকুমাশাসক (সদর) আশিস সাহা এবং বিডিও (পুরুলিয়া ২) বিডিও তাপস সাহা। তাঁদের সঙ্গে আলোচনার পরে অবরোধ ওঠে। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘কিছু সাইকেল কম পড়েছে বলে এই স্কুলে দেওয়া যায়নি। সাইকেল এলেই দিয়ে দেওয়া হবে, সে কথা বোঝানো হয়েছে ছাত্রদের।’’ পড়ুয়ারা জানায়, প্রশাসনের লিখিত প্রতিশ্রুতি পেয়েই অবরোধ তোলা হয়েছে।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy