Advertisement
০৪ মে ২০২৪

রবি ঠাকুর এত কাছে! অবাক শিখারা

স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন ৪ জন। পড়ুয়াদের কৌতূহল পাঠ্যবইে মেটানো যায় না। পড়াশোনায় একঘেয়েমি কাটাতেই শিক্ষামূলক ভ্রমণ দরকার। কিন্তু প্রাথমিক স্কুলের স্তরে সেই সুযোগ নেই। তাই নিজেরাই টাকা জোগাড় করে ওই উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

শান্তিনিকেতনে লহাট প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

শান্তিনিকেতনে লহাট প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:০৯
Share: Save:

পাঠ্যসূচিতে কখনও ছিল রবীন্দ্রনাথ, বিশ্বভারতী কখনও বা খোয়াইয়ের কথা। সে সব পড়ে কৌতূহল ক্রমেই বেড়েছিল পড়ুয়াদের। শিক্ষকদের জানানো তথ্যেও মেটেনি আগ্রহ।

পড়ুয়াদের কৌতূহল মেটাতে নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে শান্তিনিকেতনে শিক্ষামূলক ভ্রমণের ব্যবস্থা করলেন সাঁইথিয়ার লহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

জেলা শিক্ষা দফতর এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার ওই স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৪৬ জন। তাদের অনেকেই দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়ে। পড়শি, পরিজদের বাড়ি ছাড়া বাইরে কোথাও যাওয়ার সুযোগ মেলেনি কারও। এ দিন সেই সুযোগই পেল তারা। বাস ভাড়া করে পড়ুয়াদের নিয়ে শান্তিনিকেতনে ঘুরতে গেলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ছিল চড়ুইভাতির ব্যবস্থাও।

স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন ৪ জন। ফাল্গুনি সূত্রধর, মহম্মদ সামাইল, রুবাইয়া খাতুন জানান, পড়ুয়াদের কৌতূহল পাঠ্যবইে মেটানো যায় না। পড়াশোনায় একঘেয়েমি কাটাতেই শিক্ষামূলক ভ্রমণ দরকার। কিন্তু প্রাথমিক স্কুলের স্তরে সেই সুযোগ নেই। তাই নিজেরাই টাকা জোগাড় করে ওই উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বাঙালির জীবনে সব কিছুতেই মিশে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। শান্তিনিকেতনে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁরই অনেক স্মৃতি। তা ছাড়া খোয়াই, বল্লভপুর অভয়ারণ্যও পড়ুয়াদের ভাল লেগেছে।’’

ঘুরতে এসে খুশি পড়ুয়ারাও। চতুর্থ শ্রেণির শিখা খাতুন, দ্বিতীয় শ্রেণির শেখ সলমান বলে— ‘‘এই প্রথম বেড়াতে এলাম। খুব মজা পেয়েছি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা পড়েছিলাম। তিনি যে এত কাছে থাকতেন জানতাম না। আর জঙ্গলে এত কাছে হরিণ দেখতে পাব ভাবতেও পারিনি।’’

খুশি অভিভাবকরাও। ভ্যানচালক মাসুদ শেখ, দিনমজুর জাফর শেখ বলেন— ‘‘ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। সংসার টানতে সকাল থেকে সন্ধে কাজ করি। ছেলেমেয়ের কোনও শখ মেটাতে পারি না। ওরা বেড়ানো বা চড়ুইভাতির কথা বললে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিই। খারাপ লাগত। শিক্ষকরা মনের সেই জ্বালা দুর করলেন।’’

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘আমাদের সবার কিছু টাকা খরচ হলো ঠিকই, কিন্তু স্কুলের পড়ুয়াদের খুশির কাছে তা কিছুই নয়। সম্ভব হলে প্রতি বছর এ ভাবেই শিক্ষামূলক ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Visva-Bharati educational tour Lahat Primary School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE