Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রঘুনাথপুর কোর্টে আবার কর্মবিরতি

বছরের পর বছর হাজার হাজার মামলার পাহাড় জমছে। এই পরিস্থিতিতে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুল চেল্লুর আইনজীবীদের যে কোনও কারণে কাজ বন্ধ রাখা থেকে দূরে থাকতে বারবার বার্তা দিচ্ছেন। কিন্তু তাতে অবস্থা বদলাচ্ছে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৫ ০২:০৮
Share: Save:

বছরের পর বছর হাজার হাজার মামলার পাহাড় জমছে। এই পরিস্থিতিতে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুল চেল্লুর আইনজীবীদের যে কোনও কারণে কাজ বন্ধ রাখা থেকে দূরে থাকতে বারবার বার্তা দিচ্ছেন। কিন্তু তাতে অবস্থা বদলাচ্ছে না।

ফের কর্মবিরতির পথে হাঁটলেন রঘুনাথপুর আদালতের আইনজীবীরা। রঘুনাথপুরকে বঞ্চিত করে পুরুলিয়া আদালতে সিভিল জজ (সিনিয়র ডিভিশন) এর নতুন এজলাস শুরুর প্রতিবাদেই বুধবার থেকে চারদিনের কর্মবিরতি শুরু করেছে রঘুনাথপুর আদালতের বার অ্যাসোসিয়শন। কয়েকমাসের ব্যবধানে ফের এই আদালতে কর্মবিরতি শুরু হওয়ায় অসন্তুষ্ট বিচারপ্রার্থীরা।

গরমে প্রবল দাবদাহ চলার সময়ে মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে রঘুনাথপুরে কর্মবিরতি করেছিলেন আইনজীবীরা। একমাস পার করেই ফের বঞ্চনার প্রতিবাদে একই পথে হাঁটলেন তাঁরা। ফলে স্বভাবতই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের। যদিও বার অ্যাসোসিয়শনের দাবি, বিচারপ্রার্থীদের সুবিধার্থেই আন্দোলনে নেমেছেন তাঁরা। তবে বিচারপ্রার্থীদের একাংশের বক্তব্য, আন্দোলনের আরও অন্যান্য পদ্ধতি তো রয়েছে। কর্মবিরতি না করে আইনজীবীরা সেই পথে যেতেন।

বস্তুত শতাব্দী প্রাচীন রঘুনাথপুর আদালতে সিভিল জজের (সিনিয়র ডিভিশন) কোর্ট শুরুর দাবি দীর্ঘদিন ধরেই জানিয়ে আসছে বার অ্যাসোসিয়েশন। বর্তমানে এখানে সিভিল জজ (জুনিয়র ডিভিশন) এর কোর্ট রয়েছে। কিন্তু সেখানে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা জমির মূল্যের মামলা করা যায়। ফলে তার বেশি অঙ্কের জমির মামলা এখানে করা যায় না। তাই রঘুনাথপুরে সিভিল জজ (সিনিয়র ডিভিশন) এর কোর্ট চালুর দাবি উঠেছে দীর্ঘ সময় ধরেই। বার অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, গত নভেম্বর মাসে পুরুলিয়া আদালতে অতিরিক্ত সিভিল জজ (সিনিয়র ডিভিশন)এর নতুন কোর্ট শুরু হয়েছে। অথচ এই কোর্ট শুরুর কথা ছিল রঘুনাথপুর আদালতে। পুরুলিয়ার ওই কোর্টেই রঘুনাথপুর মহকুমার সাতটি ও পুরুলিয়ার তিনটি থানা-সহ মোট ১০টি থানার জমি সংক্রান্ত মামলা দায়ের করা যায়। আর এই প্রেক্ষিতেই রঘুনাথপুরের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছে এই আদালতের বার অ্যাসোসিয়শন.

বর্ষীয়ান আইনজীবী তথা বার অ্যাসোসিয়শনের সদস্য দেবব্রত সরকার বলেন, ‘‘রঘুনাথপুর মহকুমার সাতটি থানা এলাকার বাসিন্দা বিচারপ্রার্থীদের স্বার্থেই এই আদালতে সিভিল জজ (সিনিয়র ডিভিশন)এর কোর্ট শুরুর দাবি আমরা গত ১৮ বছর ধরে বিভিন্ন মহলে জানিয়ে আসছি। কিন্তু রঘুনাথপুরের বদলে পুরুলিয়ায় ওই কোর্ট থাকা স্বত্বেও আরও একটি অতিরিক্ত এজলাস শুরু করা হয়েছে। অথচ এই কোর্ট রঘুনাথপুরেই হওয়ার কথা ছিল।” সিভিল জজের কোর্ট শুরু হলে বিচারপ্রার্থীদের কী সুবিধা হবে? বার অ্যাসোসিয়শনের ব্যাখ্যা, রঘুনাথপুরে সিভিল জজ (জুনিয়র ডিভিশনের) এজলাসে এখন ৬০ হাজার টাকার বেশি মূল্যের জমির মামলা করা যায় না। অথচ রঘুনাথপুরের বেশিরভাগ এলাকাতেই বর্তমানে মাত্র এক ডেসিমিল জমির দামই সরকারি হিসাবে ৬০ হাজার টাকার বেশি। ফলে কার্যত রঘুনাথপুর আদালতে জমি সংক্রান্ত মামলা করতেই পারছেন না বিচারপ্রার্থীরা। তাঁদের ছুটতে হচ্ছে পুরুলিয়া আদালতে।

বার অ্যাসোসিয়শনের দাবি, বছরে গড়ে মাত্র ১১০টির মতো জমি বিবাদের মামলা দায়ের হয় রঘুনাথপুরে। বার অ্যাসোসিয়শনের কার্যকরী সমিতির সদস্য প্রণববাবু বলেন, ‘‘রঘুনাথপুর উন্নয়ন পর্ষদ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরেই এই এলাকার জমির সরকারি মূল্য কার্যত দেড় থেকে দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে জমি সংক্রান্ত যে কোনও মামলা করতে মহকুমার সাতটি থানার বাসিন্দাদের ছুটতে হচ্ছে পুরুলিয়ায়। এতে একদিকে যেমন বিচারপ্রার্থীদের মামলা করতে যাতায়াতের খরচ বাড়ছে, তেমনই ভোগান্তিও বাড়ছে।’’

মে মাসে শুরু হওয়া প্রায় একমাসের কর্মবিরতি প্রথমে গরমের কারণে হলেও পরের দিকে সিভিল জজের কোর্ট (সিনিয়র ডিভিশন) শুরুর দাবিতেই কর্মবিরতি চালিয়ে গিয়েছিলেন আইনজীবীরা। বার অ্যাসোসিয়শনের দাবি, তখন ওই কোর্ট এখানেই পাওয়া যাবে আশ্বাসে তাঁরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি গেজেট নোটিফিকেশনে তাঁরা জানতে পারেন, নভেম্বর মাসেই পুরুলিয়া আদালতে অ্যাডিশনাল সিভিল জজ (সিনিয়র ডিভিশন) কোর্ট শুরু হয়ে গিয়েছে। ফলে ঘটনাটিকে রঘুনাথপুরের প্রতি বঞ্চনা হিসাবেই দেখছেন আইনজীবীরা। বার অ্যাসোসিয়শনের সম্পাদক অলোককুমার নন্দী বলেন, ‘‘বিচারবিভাগের বিভিন্ন মহল থেকে মন্ত্রীদের কাছে রঘুনাথপুরে কেন ওই কোর্ট শুরুর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তা জানিয়েছি। কিন্তু আমাদের অন্ধকারে রেখে রঘুনাথপুরকে বঞ্চিত করে পুরুলিয়ায় অতিরিক্ত সিভিল জজ (সিনিয়র ডিভিশনের) কোর্ট শুরু করা হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আমাদের আন্দোলনের পথে নামতে হয়েছে।” জেলার মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE