Advertisement
০১ মে ২০২৪

গীতাঞ্জলি প্রকল্পে কারচুপি চলছেই

কারা বাড়ি পাবেন, মূলত সেটা প্রাথমিক ভাবে ঠিক করে পঞ্চায়েত সমিতি, ব্লক প্রশাসন, বিধায়ক। কিন্তু চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে হলে সই থাকতে হয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিডিও এবং সেই মহকুমার মহকুমাশাসকের।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৭ ০৭:২০
Share: Save:

রাজনৈতিক আক্রশের ফলেই সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পাচ্ছেন না বহু দুঃস্থ পরিবার। শাসক দলের বিরুদ্ধে বিরোধীরা এমন অভিযোগ হামেশাই করেন। সিউড়ি ২ ব্লকের দমদমা পঞ্চায়েতের তেঘড়িয়া গ্রামের শেখ হালিম নামে এক যুবকের পরিবারের সঙ্গেও গত চার বছর ধরে এমনটাই হচ্ছে বলে অভিযোগ। জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলছেন, ‘‘এমন একটা বিষয় নজরে এসেছে। তবে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে অনুমোদন পেতে যে যে শর্তপূরণ করার কথা সে সব এ ক্ষেত্রে পূরণ হয়েছে কিনা দেখব।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, বিপিএল তালিকা ভুক্ত পরিবারটির বাড়ি ভেঙে পড়ছে চার বছর আগে। তারপর থেকেই শেখ হালিম নামে ওই যুবক, তাঁর স্ত্রী তহমিনা বিবি ও তিনটি শিশু নিয়ে ত্রিপলের নীচে বসবাস করেন। সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পাওয়া দূরের কথা, গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বাড়ি পাইয়ে দিতে খোদ তৎকালীন অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদের) বিধান রায়ের সুপারিশও কাজে আসেনি।

হালিমের দাবি, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএমের হয়ে পোলিং এজেন্ট থাকার জন্যই এভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। একই দাবি করছেন সিউড়ি ২ ব্লকের সিপিএমের জোনাল সম্পাদক দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ও। হালিমের অভিযোগ, ‘‘গত কয়েক বছর নিয়ম করে আমার প্রাপ্য অধিকার পাওয়ার দাবিতে বিডিও-মহকুমাশাসক এবং জেলাশাসকের দরজায় দরজায় ঘুরছি। কোনও ফল মেলেনি।’’ সাধারণত বিপিএল তালিকায় ঠাঁই না পাওয়া বা বিপিএল তালিকাভূক্ত হয়েও যাঁরা প্রকৃত দুঃস্থ-গৃহহীন পরিবার, সেই সব পরিবারগুলির আবাসন প্রকল্পে দু’দফায় ৭০ হাজার টাকা অনুদান পাওয়ার কথা। কারা বাড়ি পাবেন, মূলত সেটা প্রাথমিক ভাবে ঠিক করে পঞ্চায়েত সমিতি, ব্লক প্রশাসন, বিধায়ক। কিন্তু চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে হলে সই থাকতে হয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিডিও এবং সেই মহকুমার মহকুমাশাসকের।

হালিম বলেন, ‘‘২০১৪ সালে ঘর ভেঙে পড়ার পরেই ব্লক প্রশাসনের নির্দেশ মেনে আবেদন করি। কিন্তু তখনকার আবাস যোজনায় আমার নাম নথিভুক্ত না থাকায় ঠিক হয়, আমাকে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বাড়ি দেওয়া হবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক বিধান রায় আমাকে ১৫-১৬ অর্থবর্ষে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বাড়ি দেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। এরপর একাধিকবার সমীক্ষা হয়েছে, ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী সই না করায় অনুমোদন মেলেনি।

গত বছর জেলাশাসকের কাছে একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে সিউড়ি ২ ব্লকের যুগ্মবিডিও যে উত্তর হালিমকে দিয়েছেন, সেই চিঠিতেও তার উল্লেখ রয়েছে। হতাশা সত্বেও দিন কয়েক আগে ফের মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন করে হালিম জানতে চান, ‘আদৌ কী সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পাব না আমি, কী অপরাধে করেছি।’ উত্তর মেলেনি। মহকুমাশাসক কৌশিক সিংহ বলছেন, ‘‘পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে সেটা জানতে চেয়ে রিপোর্ট চেয়েছি। রিপোর্ট এলেই বলতে পারব।’’

রাজনৈতিক আক্রোশের যে দাবি করা হচ্ছে, সেটা কতটা সঠিক। জানতে চেয়ে সিউড়ি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী টুনু দে-কে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। সিউড়ি ২ ব্লকের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি নুরুল ইসলাম অবশ্য বলেন, ‘‘রাজনৈতিক আক্রোশের অভিযোগ ভিত্তিহীন। গরিব মানুষ নিশ্চয়ই বাড়ি পাবেন। সভানেত্রী কেন সই করেননি দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gitanjali Gitanjali project
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE