Advertisement
০১ মে ২০২৪
নীতির ঘরে দুর্নীতি
Teacher's Day

সমাজে শিক্ষকদের সম্মান এত ঠুনকো নয়

বেলিয়াতোড়ের যামিনী রায় কলেজের শিক্ষক প্রকাশকান্তি নায়েক পড়ুয়াদের মধ্যে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা গড়ে তুলতে তাঁদের নিয়েই ত্রাণ বিলিতে নেমেছিলেন করোনাকালে।

পাশে: পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে শিশুদের স্কুলে ভর্তি করাতে শিক্ষকদের অভিযান। বাঁকুড়ার রাইপুরে। ফাইল ছবি

পাশে: পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে শিশুদের স্কুলে ভর্তি করাতে শিক্ষকদের অভিযান। বাঁকুড়ার রাইপুরে। ফাইল ছবি

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল, রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
পুরুলিয়া, বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:০৫
Share: Save:

রাজ্যে শিক্ষক-নিয়োগে স্বচ্ছতা নিয়ে কিছু মানুষ শোরগোল তুললেও তাতে যে শিক্ষক-সমাজের সম্মান মাটিতে লুটোচ্ছে, তেমনটা মনে করছেন না অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের একটা বড় অংশ। তাঁদের মতে, শিক্ষকেরাই মানুষ গড়ার মূল কারিগর। মূল্যবোধ শিখিয়ে তাঁরাই ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের পথ দেখান। তাই শিশু মনে শিক্ষকদের সম্পর্কে যে শ্রদ্ধার জায়গাটা তৈরি হয়ে থাকে, তা সহজে নষ্ট হওয়ার নয়। তবে সম্মানের জায়গাটা অক্ষুণ্ণ রাখার দায়িত্ব শিক্ষকদেরও।

অনেকে তাই নিছক পেশা নয়, নেশা মনে করে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন। করোনা কালে কিছু শিক্ষক অনলাইনে পড়ার সুযোগ না পাওয়া পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়া দেখিয়ে এসেছেন। স্কুল খোলার পরেও ক্লাসে না ফেরা ছেলেমেয়েকে ধরে আনতে অনেক শিক্ষক বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বুঝিয়েছেন।

বাঁকুড়ার রাইপুরের চাতরি নিম্নবুনিয়াদি আবাসিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তমকুমার মণ্ডল এ বার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুল ভর্তি করানোর আগ্রহ কম দেখে নিজেই গ্রামে গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের ডেকে আবেদনপত্র পূরণ করিয়েছিলেন। বেলিয়াতোড়ের যামিনী রায় কলেজের শিক্ষক প্রকাশকান্তি নায়েক পড়ুয়াদের মধ্যে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা গড়ে তুলতে তাঁদের নিয়েই ত্রাণ বিলিতে নেমেছিলেন করোনাকালে। এ প্রজন্মের শিক্ষকদের এমনই আরও উদাহরণ সামনে এসেছে অতিমারি পর্বে।

রঘুনাথপুর কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক নিরঞ্জন কোলে এখনও বিনামূল্যে কলেজে ক্লাস নেন। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা কখনই কাম্য নয়। আবার এটাও সত্যি, বহু শিক্ষক নিজেদের মেধার জোরে নিযুক্ত হয়েছেন। ওই শিক্ষকেরা যত্ন নিয়ে ছাত্রদের পড়াচ্ছেন, সমাজের কথা ভাবেন। তাদের কিন্তু মানুষজন সম্মান করেন। তাই বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু নিয়োগে দুর্নীতি হলেই, সমাজে শিক্ষকদের সম্মান নষ্ট হয়ে গেল, এমনটা ভাবার কারণ নেই।’’

নিরঞ্জনবাবুর জানান, তাঁর অনেক ছাত্রছাত্রী দেশে-বিদেশে নামী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তাঁরা বাড়ি ফিরলে এখনও তাঁর খোঁজ নিতে ছুটে আসেন। এর পিছনে রয়েছে শিক্ষকতা পেশাটার প্রতি সবার সম্মান। তিনি এ-ও মনে করাচ্ছেন, ‘‘সম্মান পেতে হলে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যটুকু যথাযথ ভাবে শিক্ষকদের পালন করতে হবে।’’

পুরুলিয়ার ঝাপড়া হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অনাদিপ্রসাদ মাজির মতে, ‘‘বর্তমানে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে। সেই প্রেক্ষিতে কিছু সংখ্যক শিক্ষক নিজেদের দায়িত্ব, কর্তব্য পালনে হয়তো বিচ্যুত হচ্ছেন। কিন্তু সে জন্য সার্বিক ভাবে সমস্ত শিক্ষককে লোকজন অসম্মানের চোখে দেখছেন, আদপেই এমনটা নয়। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে রাস্তাঘাটে দেখা হলে তারা প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয়।’’

বড়জোড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি এমন অনেক কমবয়সি শিক্ষকদের জানি, যাঁরা বেশি দিন স্কুল ছুটি পড়লে পড়ুয়াদের নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। স্কুলের বাইরেও ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা সমাধানের জন্য এগিয়ে যান। পড়ুয়ারাও তাঁদের সম্মান দেয়। এদের সম্মান ঠুনকো নয়।’’ (শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher's Day purulia bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE