Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আঠারোর আগে বিয়ে নয়, অঙ্গীকার

বিয়ে রুখে দিয়ে সারা দেশে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথ দেখিয়েছিল পুরুলিয়ার মেয়েরা। সেই রেখা কালিন্দী, বীণা কালিন্দীর জেলার বোরোর বসন্তপুর গার্লস হাইস্কুলের মেয়েরাই কন্যাশ্রী ক্লাব গড়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে স্কুল ছাড়িয়ে বিয়ের পিঁড়েতে বসানো চলবে না বলে বোঝাতে নেমেছিল।

পথ: মানাবাজার গার্লস হাইস্কুলে। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

পথ: মানাবাজার গার্লস হাইস্কুলে। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

সমীর দত্ত
মানবাজার শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৯
Share: Save:

বিয়ে রুখে দিয়ে সারা দেশে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথ দেখিয়েছিল পুরুলিয়ার মেয়েরা। সেই রেখা কালিন্দী, বীণা কালিন্দীর জেলার বোরোর বসন্তপুর গার্লস হাইস্কুলের মেয়েরাই কন্যাশ্রী ক্লাব গড়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে স্কুল ছাড়িয়ে বিয়ের পিঁড়েতে বসানো চলবে না বলে বোঝাতে নেমেছিল। এ বার পুরুলিয়ারই মানবাজার গার্লস হাইস্কুল ছাত্রী ও অভিভাবকদের লিখিত ভাবে অঙ্গীকার করাচ্ছে, কম বয়সে বিয়ে না দিয়ে মেয়েকে তাঁরা স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করবেন।

পুলিশ, প্রশাসন ও চাইল্ড লাইন সক্রিয় হওয়ায় জেলায় বাল্যবিবাহে এখন অনেকটাই রাশ টানা গিয়েছে। তবুও দারিদ্রের দোহাই দিয়ে গোপনে নাবালিকা বিয়ে দেওয়া বন্ধ হয়নি। তাই অঙ্গীকার করানোর পাশাপাশি এক ছাত্রীর উপরে অন্য ছাত্রীকে নজর রাখারও দায়িত্ব দিচ্ছে মানবাজারের ওই স্কুল।

মানবাজার ১ ব্লকে এটিই একমাত্র গার্লস হাইস্কুল। তাই বরাবরই এই স্কুলে মেয়েদের ভর্তি করতে অভিভাবকদের চাপ থাকে। স্কুলে কস্তুরবা ও আদিবাসী ছাত্রীদের দু’টি হস্টেল থাকায় ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকার মেয়েদেরও এখানে ভর্তি করানো হয়। সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চেয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শোভা সেনাপতি বলেন, ‘‘সম্প্রতি স্কুল পরিচালন সমিতির বৈঠকে স্থির হয়, যারা এই স্কুলে পড়বে, তাদের কন্যাশ্রী প্রকল্পের সমস্ত নিয়ম মেনে চলতে হবে। সে জন্য ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের লিখিত অঙ্গীকার করানো হচ্ছে।’’ মঙ্গলবার শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন সেই কাজ শুরু হয়েছে।

এ দিন পুঞ্চা থানার পেটারিগোড়া গ্রামের বাহামণি সোরেন ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ে মৃত্তিকাকে নিয়ে স্কুলে এসেছিলেন। তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় অঙ্গীকারপত্র।

তাতে লেখা— ১) ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যাব, ২) কন্যাশ্রীর সময়সীমা শেষ হলে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করা হবে, ৩) ১৮ বছরের আগে বিয়ে করব না এবং ৪) শিক্ষা ও স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুফল সম্পর্কে সবাইকে অবগত করব। এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ১৪০০। তার মধ্যে কন্যাশ্রী প্রকল্পে রয়েছে প্রায় ৮০০ জন। একে একে সব ছাত্রী এবং অভিভাবকদের অঙ্গীকারবদ্ধ করানো হবে।

পরিচালন সমিতির সভাপতি মনোজ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিভাবকদের অনুরোধে পরিকাঠামোর অভাব সত্ত্বেও যেমন বাড়তি মেয়েদের আমরা ভর্তি করি, তেমনই অভিভাবকদেরও আমরা নিয়মে বাঁধতে চাইছি।’’ তিনি জানান, কোনও ছাত্রীকে স্কুল ছাড়িয়ে বিয়ে দেওয়ার ঘটনা এখানে নেই। স্কুল ছুট্‌ও নেই। তবুও নিয়মে বাঁধাটা প্রয়োজন।

এ দিন স্কুলে ছিলেন মহকুমাশাসক (মানবাজার) সঞ্জয় পাল। তিনি বলেন, ‘‘এই স্কুলের প্রত্যেকটি মেয়ে অন্যেরা অঙ্গীকার ভাঙছে কি না, তা নজরে রাখবে।’’ বিডিও (মানবাজার ১) নীলাদ্রি সরকার জানান, অন্যান্য স্কুল এই পথে হাঁটলে এটি সামাজিক আন্দোলনের চেহারা নেবে।

ধাদকিডি গ্রামের চিন্তামণি মাহাতো, শিমচাকা গ্রামের লক্ষ্মীমণি হাঁসদা, পাঁইচাগোড়ার ভূদেব মাহাতো, রবি হেমব্রমদের মতো অভিভাবকেরা বলছেন, ‘‘মেয়ে যদি বড় হয়ে স্বাবলম্বী হয় তো ভালই। তখন ওরাই বরং নিজেদের জীবন ঠিক করে নেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Minor Marriage Child Line Kanyashree Club
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE