Advertisement
১১ মে ২০২৪
মাদ্রাসায় সাফল্য পেল বকডহরা

দারিদ্র কাঁটাতেও সেরা তিন

দারিদ্র হার মানাতে পারল না। সেই বেড়া টপকেই এ বার মাদ্রাসার পরীক্ষায় চোখ ধাঁধানো ফল করেছে বিষ্ণুপুরের বকডহরা সিদ্দিকা হাই মাদ্রাসার তিন ছাত্র— আব্দুল মজিদ মণ্ডল, সৈফুদ্দিন মল্লিক ও গোলাম নবি খাঁ। তিনজনেই রাজ্যের সেরা দশের মধ্যে স্থান পাওয়ায় তাঁদের সাফল্যে গর্বিত আত্মীয়েরা ও স্কুলের শিক্ষকরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৫ ০২:১০
Share: Save:

দারিদ্র হার মানাতে পারল না। সেই বেড়া টপকেই এ বার মাদ্রাসার পরীক্ষায় চোখ ধাঁধানো ফল করেছে বিষ্ণুপুরের বকডহরা সিদ্দিকা হাই মাদ্রাসার তিন ছাত্র— আব্দুল মজিদ মণ্ডল, সৈফুদ্দিন মল্লিক ও গোলাম নবি খাঁ। তিনজনেই রাজ্যের সেরা দশের মধ্যে স্থান পাওয়ায় তাঁদের সাফল্যে গর্বিত আত্মীয়েরা ও স্কুলের শিক্ষকরা।

আব্দুলের নম্বর ৭৩৪। সে তৃতীয় স্থান দখল করেছে। সৈফুদ্দিন মল্লিক অষ্টম ও গোলাম নবি খাঁ দশম স্থান দখল করেছে। সৈফুদ্দিন পেয়েছেন ৭১৯। গোলামের প্রাপ্ত নম্বর ৭১৫। তিনজনেই দরিদ্র্য পরিবারের সন্তান।

আব্দুলের মা মুড়ি ভাজেন। বাবা সামান্য জমিতে করেন চাষবাস। তাতেও চলে না। খাটতে হয় অন্যের জমিতে। সৈফুদ্দিন ও গোলামের বাবাও নিজেদের সামান্য জমিতে চাষবাস ছাড়াও জনমজুরি খাটেন। ফলে তিন ছাত্রের দারিদ্র্যের সংসারে এ খবর আলো ছড়ালেও তাদের ভবিষ্যতের পড়াশোনা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন পরিবারের লোকজন।

মাদ্রাসা থেকে কিছুটা দূরে কাশীচটা গ্রামে আব্দুলের বাড়ি। মঙ্গলবার বিকেল থেকে সেখানে শুভেচ্ছার বন্যা। অ্যাসবেসটসের ছোট্ট ছাউনির ঘর। প্রথম খবর নিয়ে কৃতী ছাত্রের ঘরে ছুটে আসেন মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মিরাজুল ইসলাম। আব্দুল তখন ছিল বাড়ির বাইরে। ছেলের সুখবর শুনে চোখে জল চলে আসে বাবা হোসেন মণ্ডলের। মাটির দাওয়ায় বসে তিনি বলতে থাকেন, “স্ত্রী, দুই মেয়ে ও চার ছেলেকে নিয়ে আট জনের সংসার। অর্থা ভাবে দুই মেয়েকে পড়াতে পারিনি। আব্দুল ছোট থেকেই মেধাবী। পড়াশোনা অন্ত প্রাণ। ভাল ফল করে কিছুটা এগোল। কিন্তু এ বার কী হবে? উচ্চশিক্ষার পড়ার খরচ সামলাব কী করে?” আব্দুলও চিন্তিত ভাবে বলে, “গ্রামে ডাক্তারের অভাব রয়েছে। ডাক্তারি পড়ার খুব ইচ্ছে। কিন্তু সে সামর্থ কই? মাদ্রাসার শিক্ষকদের ও পরিবারের সকলের সাহায্যে আমাদের এই সাফল্য। কিন্তু এর পর?”

একই চিন্তায় মাথায় হাত পড়েছে বামুনবাঁধ গ্রামে সৈফুদ্দিন ও বকডহরা গ্রামে গোলামের বাড়িতেও। খুশির খবর পেয়ে সৈফুদ্দিন ও গোলাম বলে, “পড়াশোনা শিখে শিক্ষকতা করার ইচ্ছে রয়েছে।

কিন্তু আমাদের দুই পরিবারেও কষ্টের সংসার। সরকারি ভাবে সাহায্য না পেলে এগোন কঠিন।” ওই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মিরাজুল ইসলাম বলেন, “ওদের অভাবের কথা জানি বলেই আমরাও চিন্তায় রয়েছি। এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় মাদ্রাসার সাফল্যের কথা শুনে এলাকায় এসেছিলেন। মাদ্রাসা ও কৃতী তিন ছাত্রদের কিছু আর্থিক সাহায্য করেছেন তিনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bishnupur Madhyamik student school teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE