Advertisement
০৬ ডিসেম্বর ২০২৪

বাস অমিল জেনে রাস্তাই ফাঁকা

শনিবার পথে বেরোলে কী হবে, শুক্রবারই তা টের পেয়েছিলেন অনেকে। তাই ব্রিগেডের জনসভার দিন ভোগান্তির আশঙ্কায় পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার পথে বাসের খোঁজে লোকজন খুব বেশি বেরোননি। রাস্তাঘাট তুলনায় ফাঁকাই ছিল। আর নিতান্ত প্রয়োজনে যাঁরা পথে নেমেছিলেন, তাঁদের বাসের জন্য ঠায় অপেক্ষা করতে হয়েছে।

বিষ্ণুপুরের তুর্কি সীতারামপুরে সুনসান অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ড।শনিবার। নিজস্ব চিত্র

বিষ্ণুপুরের তুর্কি সীতারামপুরে সুনসান অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ড।শনিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:০৫
Share: Save:

শনিবার পথে বেরোলে কী হবে, শুক্রবারই তা টের পেয়েছিলেন অনেকে। তাই ব্রিগেডের জনসভার দিন ভোগান্তির আশঙ্কায় পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার পথে বাসের খোঁজে লোকজন খুব বেশি বেরোননি। রাস্তাঘাট তুলনায় ফাঁকাই ছিল। আর নিতান্ত প্রয়োজনে যাঁরা পথে নেমেছিলেন, তাঁদের বাসের জন্য ঠায় অপেক্ষা করতে হয়েছে।

পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি থাকা অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে অটোয় চেপে রায়বাঁধ থেকে রঘুনাথপুর পর্যন্ত গিয়েছিলেন নিমাই মাহাতো। তাঁর অভিযোগ, রঘুনাথপুর বাসস্ট্যান্ডে দীর্ঘ অপেক্ষার পরেও বাস না পেয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাঁকে। একই ভাবে ঝালদার মসিনা গ্রামের বাসিন্দা গৌতম মাহাতোর এ দিন কাজ ছিল পুরুলিয়া শহরে। কিন্তু, সময়ে বাস না পেয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাঁকেও। স্কুল থেকে ফেরার পথে রঘুনাথপুর বাসস্ট্যান্ডে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া যাওয়ার বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেন দুই স্কুল শিক্ষিকা জয়তী দেওঘরিয়া ও রিঙ্কু নারায়ণ দেও। তাঁরা বলেন, ‘‘বাস না পেয়ে ট্রেন ধরতে বাধ্য হয়ে অটো ভাড়া করে আদ্রা স্টেশনে যেতে হয়েছে।’’ কাশীপুরের বাসিন্দা রবি মাহাতো অবশ্য অনেক অপেক্ষার পরে একটি বাস পেলেও দমবন্ধ ভিড়ে আদ্রায় ফেরেন।

বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন বিভিন্ন রুটে বাড়তি সরকারি বাস চালানোর আশ্বাস দিলেও বাসিন্দাদের অন্য অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, সরকারি বাস চলেইনি বলা যায়। ছোট গাড়িই ছিল ভরসা। ইঁদপুর বাংলা মোড়ে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরা বাসের অপেক্ষায় থেকে শেষে ভাড়াগাড়িতে ওঠেন। বিষ্ণুপুর শহরের বাসস্ট্যান্ডেও বেসরকারি বাসের দেখা মেলেনি। সকালে কিছু যাত্রী এলেও বেলার পরে ফাঁকাই থাকে বাসস্ট্যান্ড।

পুরুলিয়া জেলা বাসমালিক সমিতির সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘জেলায় প্রায় ৪০০ বাস চলে। তার মধ্যে ব্রিগেডের সমাবেশের জন্য প্রায় ৪০ শতাংশ বাস নেওয়া হয়েছে। বাকি বাস পথেই ছিল। যাত্রী দুর্ভোগের খবর পাইনি।’’ সরকারি বাসডিপোর কর্মকর্তা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়েরও দাবি, ‘‘জেলায় চালু থাকা ৩১টি সরকারি বাসের সবগুলিই এ দিন চলাচল করেছে।’’

বাস পাবেন না ভেবে বোরো থানার চেকুয়া গ্রামের প্রভাত মাহাতো সাইকেলে করে অসুস্থ মেয়েকে দেখতে মানবাজারে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি শুনে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছে। এ দিন বাস পাব না। তাই যাওয়া-আসা মিলিয়ে ৪০ কিমি পথ সাইকেলে চালিয়েই এসেছি।’’ অনেকের ভরসা ছোট গাড়ি। যাত্রীদের অভিযোগ, কয়েকগুণ ভাড়া বাড়িয়েই তাঁদের যাতায়াত করতে হয়েছে।’’

আবার কোথাও বাস থাকলেও যাত্রী পাওয়া যায়নি। দুপুরে মানবাজার বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেল, পুরুলিয়াগামী একটি মাত্র বাস রয়েছে। ভিতরে কোনও যাত্রী ছিল না। এক বাস কর্মী রসিকতার সুরে বলেন, ‘‘আমাদের এই গাড়ির যা অবস্থা কলকাতা পর্যন্ত পৌঁছত না। তাই নেতাদের নজরে ধরেনি। কিন্তু, জেলায় থেকেও দেখছি, বিশেষ লাভ হল না। যাত্রী কই? বাস পাবে না বুঝে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে বেরোননি।’’

যাত্রী না থাকার জেরে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে থাকা ছোট দোকান, ঠেলাগাড়ির বিক্রেতাদের বেচাকেনা মার খেয়েছে। মানবাজারে ঠেলাগাড়িতে মশলামুড়ি বিক্রি করেন সত্যবান দাস। তিনি বলেন, ‘‘ফাঁকা বাসস্ট্যান্ডে মাছি তাড়াচ্ছি।’’ বাঁকুড়া শহরে দোকানপাট খোলা থাকলেও লোকজনের ভিড় চোখে পড়েনি। বাঁকুড়ার চকবাজারের ব্যবসায়ী কাশীনাথ কুণ্ডু বলেন, “বাইরের ক্রেতারা একেবারেই আসেননি।” আদালত চত্বরেও মানুষজনের ভিড় ছিল অন্য দিনের তুলনায় বেশ কম। এক আইনজীবী বলেন, “বাসের অভাবে কয়েক দিন ধরেই গ্রামাঞ্চলের লোকজন আদালতে কম আসছিলেন। এ দিন খুবই কম লোক এসেছিলেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Brigade TMC Rally Bus Bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy