Advertisement
১১ মে ২০২৪
BJP

পুরনোরা কি ক্ষুব্ধ, দলের অন্দরেই প্রশ্ন

শাসকদলের পুরনো কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ? খাতড়ায় দীর্ঘদিনের পুরনো তৃণমূল কর্মী তথা বাঁকুড়া জেলা পরিষদের বিদায়ী পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শ্যামল সরকার ওরফে বেণুর বিজেপিতে যোগদানের পর এই প্রশ্নই ঘুরেফিরে আসছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৮ ০৭:২০
Share: Save:

শাসকদলের পুরনো কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব তা টের পেয়েছিলেন আগেই। তাই কখনও দলের জেলা পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, আবার কখনও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় এসে পুরনো কর্মীদের দলে সম্মান দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু, রাজ্য নেতৃত্বের এই নির্দেশ জেলা নেতৃত্ব কার্যকর করতে পারছেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল খাতড়ায় দীর্ঘদিনের পুরনো তৃণমূল কর্মী তথা বাঁকুড়া জেলা পরিষদের বিদায়ী পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শ্যামল সরকার ওরফে বেণুর বিজেপিতে যোগদানের পর।

সোমবার দিল্লিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। জেলার রাজনৈতিক মহলের অনেকেই দাবি করছেন, বেণুর বিজেপিতে যোগদান শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল। দীর্ঘদিন ধরে দলের অন্দরে ওই নেতা কার্যত কোণঠাসা হয়ে ছিলেন। সুযোগ পেয়ে এ বার তাই তিনি দ্বিতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উঠে আসা বিজেপির ঘরে তিনি পা রেখেছেন।

দল সূত্রের খবর, খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সহ-সভাপতি তথা জেলা তৃণমূল নেতা জয়ন্ত মিত্রের সঙ্গে বেণুর দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। বেণুর অনুগামীদের ক্ষোভ, এলাকার দীর্ঘদিনের পুরনো তৃণমূল কর্মী হওয়ার পরেও দলীয় নেতৃত্ব তাঁকে সে ভাবে গুরুত্ব দেননি। উল্টে অনেক পরে কংগ্রেস থেকে আসা জয়ন্ত বেশি গুরুত্ব পাচ্ছিলেন। এ বার ভোটে দলের টিকিট পাননি বেণু, যদিও জয়ন্ত তৃণমূলের টিকিটে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন।

দল পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বেণুও দাবি করছেন, “তৃণমূলে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। দুর্নীতিগ্রস্ত লোকজনের ভিড় বাড়ছে। তাই বাধ্য হয়েই বিজেপিতে এলাম।” জয়ন্তবাবু অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন, “দলে যদি দুর্নীতিগ্রস্তদের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে থাকে, তাহলে এত দিন উনি এই দলে ছিলেন কী করে?” তিনি যুক্ত করেন, “দলবিরোধী নানা কাজের জন্য দলই ধীরে ধীরে তাঁর কাছ থেকে সরে এসেছিল। এত দিন উনি ছিলেন না, ছিল তাঁর ছায়া। এ বার সেটাও সরে গেল।”

বস্তুত, জেলার দক্ষিণ প্রান্ত খাতড়া মহকুমাতেই এ বার বিরোধীরা ত্রিস্তরীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিটি স্তরে প্রার্থী দিতে পেরেছিলেন। ভোটের ফলাফলেও দেখা যায় রাইপুর, সারেঙ্গা ও সিমলাপাল ব্লকে মোট চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত জিতেছে বিজেপি। বিরোধী দলগুলির বহু নেতাই আড়ালে দাবি করেছিলেন, জয়ন্ত ও বেণুর অনুগামীদের দ্বন্দ্বের জেরেই খাতড়া মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়ন দিতে পেরেছিলেন তাঁদের প্রার্থীরা। এমনকি বিভিন্ন এলাকায় নির্দল প্রার্থীদের বাড়বাড়ন্তও অস্বাভাবিক ভাবে দেখা গিয়েছিল। বেণুর মদতেই দলের একাংশ নির্দল হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন জয়ন্ত-গোষ্ঠীর লোকজন।

বেণুর বিজেপিতে যোগদানের প্রভাব তৃণমূলে পড়বে কি? তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলেই। জয়ন্তর দাবি, “নিজের স্বার্থে দল পরিবর্তন করেছেন উনি। তাই দলের কোনও কর্মীই তাঁর পাশে থাকবেন না।” বেণু অবশ্য দাবি করেছেন, “আমার মতো জেলার বিভিন্ন এলাকার অনেক তৃণমূল নেতাই বঞ্চনার শিকার হয়ে দলে রয়েছেন। তাঁরাও সুযোগ মতো বিজেপিতে আসবেন।’’

এই পরিস্থিতিতে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে চিন্তায় তৃণমূলের একটা বড় অংশই। রাজ্য নেতৃত্বের বারবার চেষ্টাতেও নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব মেটানো যায়নি। জেলার পাত্রসায়র ব্লক প্রায়ই অশান্ত হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছে ওই ব্লকের সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায় ও তৃণমূল নেতা বাবলু সিংহের অনুগামীদের দ্বন্দ্বে। দলের তরফে ওই ব্লকের জন্য বিশেষ কোর কমিটি গড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, দ্বন্দ্ব পুরোপুরি মেটেনি। স্নেহেশবাবু বলেন, “সিপিএমের সন্ত্রাস সামলে দীর্ঘ দিন ধরে দলের সংগঠন করেছি।কিন্তু এখন দলের মধ্যেই যা হচ্ছে, আর বরদাস্ত করা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরেই আমি দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছি না।” বিষ্ণুপুর বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য ও পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের দ্বন্দ্ব মেটাতে একাধিকবার দুই নেতাকে নিয়ে বৈঠকে বসেছেন দলীয় নেতৃত্ব। তারপরেও কয়েকমাস আগে বিষ্ণুপুর বিধানসভার অধীনে তালড্যাংরার ঢ্যামনামারা গ্রামে এক বালককে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় ওই দুই নেতার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে।

জেলা তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বেণুকে দল সম্মান না দিলে, তিনি কর্মাধ্যক্ষ হলেন কী করে? যাঁরা দল ছেড়ে যাবেন, আখেরে তাঁরা নিজেদের পায়েই কুড়ুল মারবেন। তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হবে না।’’

যদিও দলের নিচুতলার কর্মীদের একাংশের ক্ষোভ, জেলা নেতৃত্বের ব্যর্থতার জন্যই দ্বন্দ্ব মুচছে না। বিজেপির উত্থান আটকাতে যেখানে এখন সংগঠন জোরদার করার প্রয়োজন, সেই সময় পুরনো নেতারা সরে গেলে, আখেরে দলের কারও ভাল হবে না বলেই তাঁদের মত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE