Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সংশয় তৃণমূলের অন্দরে

অনাস্থা ঠেকানো যাবে তো

ব্লক অফিসে হবে তলবিসভা। কিন্তু পরীক্ষাটা আসলে তৃণমূলের ব্লক এবং জেলা নেতৃত্বের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৬ ০১:৫৯
Share: Save:

ব্লক অফিসে হবে তলবিসভা। কিন্তু পরীক্ষাটা আসলে তৃণমূলের ব্লক এবং জেলা নেতৃত্বের।

আজ, শুক্রবার মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতির প্রধান তৃণমূলের গীতারানি মাহাতোর বিরুদ্ধে তাঁর দলেরই সদস্যদের আনা অনাস্থার তলবি সভা হওয়ার কথা। কিন্তু সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এলে তাঁর কানে এই অনাস্থার বিষয়টি তুলেছিলেন দলীয় নেতৃত্বের একাংশ। সূত্রের খবর, তখনই নেত্রী নির্দেশ দেন, অনাস্থা ঠেকাতে হবে। বিষয়টি দলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোকে দেখতে বলে যান তিনি। তার পরেই অনাস্থা ঠেকাতেই মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা। তৃণমূল সূত্রের খবর, বুধবার বোরোতে এসে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং বিক্ষুব্ধ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে দু’পক্ষকেই বিবাদ মিটিয়ে নিতে বলেছেন শান্তিরামবাবু।

মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতি নিয়ে জেলা তৃণমূলে অস্বস্তি দীর্ঘ দিনের। ওই পঞ্চায়েত সমিতির ১৮ জন সদস্যের মধ্যে ১৬ জনই তৃণমূলের। বাকি দু’জন সিপিএমের। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় দলের সদস্যদের মধ্যেই। বোর্ড গঠনের কয়েক বছরের মধ্যেই পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সীতারাম মুর্মু এবং পাঁচ কর্মাধ্যক্ষ-সহ দলেরই ১০ সদস্য সভাপতি গীতারানি মাহাতোর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। অভিযোগ ছিল, সভাপতি সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করেই মর্জি মাফিক কাজ করেন। কিন্তু সে যাত্রায় তলবিসভা হয়নি। প্রশাসন থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, নির্বাচনের আড়াই বছরের মধ্যে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যাবে না। সময়সীমা পার হওয়ার পরে গত ২ মার্চ তাঁরা অনাস্থা চেয়ে ফের আবেদন করেন। কিন্তু নির্বাচনের প্রস্তুতির চলায় সে যাত্রাও তলবিসভা হয় না। নির্বাচন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কেন তলবি সভা হচ্ছে না, সেই প্রশ্নে ক্ষোভ দেখা দেয়। অনাস্থার দাবি তোলা সদস্যেরা ফের প্রশাসনের কাছে দরবার করেন। চিঠি দেওয়া হয় মহকুমা শাসককে। ১২ অগস্ট তলবিসভার দিন ধার্য হয়।

খোদ দলনেত্রীর নির্দেশের পরে দীর্ঘদিনের এই পরিস্থিতির মোড় ঘুরে গিয়েছে বলে মনে করছেন দলীয় কর্মীদের একাংশ। দলের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘মানবাজার ২ ব্লকের অনাস্থা ঠেকানো না গেলে অন্যত্র তার প্রভাব পড়তে পারে। দলীয় কোন্দল সে ক্ষেত্রে আরও বেশি করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। তাই যে কোনও মূল্যে এই অনাস্থা রুখতে হবে।’’ তৃণমূল সূত্রের খবর, শান্তিরামবাবু এ দিন ওই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গীতারানিদেবীকে সবাইকে মর্যাদা দিয়ে পদ্ধতি মেনে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। না হলে দল তাঁর পাশে থাকবে না বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। সহ-সভাপতি সীতারামবাবুকেও বলেছেন বিরোধ মিটিয়ে নিতে।

কিন্তু দলের ১৬ সদস্যের মধ্যে শান্তিরামবাবুর বুধবারের সভায় হাজির ছিলেন সভাপতি-সহ মোট পাঁচ জন। তৃণমূলের মানবাজার ২ ব্লক সভাপতি হংসেশ্বর মাহাতোর দাবি, এলাকায় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় চাষের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সবাই। তাই কয়েক জন সদস্য হাজির হতে পারেননি। তবে অনাস্থার দাবি মূলত যাঁরা তুলেছিলেন, তাঁরা সবাই এ দিনের সভায় হাজির ছিলেন বলে তিনি দাবি করেছেন। তাঁর আরও দাবি, ওই সভায় সীতারামবাবু এবং পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ বিধান মাহাতো বিরোধ মিটিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সীতারামবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘অনাস্থার বিষয়টি নিয়ে বাকি সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করব। সংখ্যাগরিষ্ঠের মত নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

সেই সিদ্ধান্ত কী হয়, সে দিকেই আপাতত তাকিয়ে দলের নেতা কর্মীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

No confidence motion tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE