Advertisement
E-Paper

বিধায়কের নির্দেশ উড়িয়েই সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা

ভোট মিটতেই ফের সামনে আসতে শুরু করেছে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থা আনা যাবে না—দলের এই নির্দেশকে কার্যত তোয়াক্কা না করেই রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন দলেরই সদস্যেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০১:৪৮

ভোট মিটতেই ফের সামনে আসতে শুরু করেছে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থা আনা যাবে না—দলের এই নির্দেশকে কার্যত তোয়াক্কা না করেই রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন দলেরই সদস্যেরা।

সোমবার ওই পঞ্চায়েত সমিতির ১৩ জন তৃণমূল সদস্য সভাপতি কৃষ্ণ মাহাতোর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছেন রঘুনাথপুর মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে। এই অনাস্থার পিছনে যে দলেরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কাজ করছে, তা স্পষ্ট। এমনকী, এর আগে সমিতির যে সহ-সভাপতিকে অনাস্থার হাত থেকে বাঁচাতে কৃষ্ণবাবু ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, অনাস্থা আনা ১৩ সদস্যের মধ্যে নাম রয়েছে তাঁরও! সহ-সভাপতি ছাড়াও ওই ১৩ জনের মধ্যে রয়েছেন সমিতির মোট ন’জনের মধ্যে আট কর্মাধ্যক্ষ এবং চার জন সাধারণ সদস্য। মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) দেবময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাইরে থাকায় অনাস্থার বিষয়টি এখনও জানা নেই। দফতরে ফিরে দেখব। সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা এলে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পুরুলিয়ায় এ বার বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফল করার পরেও দলের ভিতরের কোন্দল এ ভাবে প্রকাশ্যে এসে যাওয়ায় বিড়ম্বনা বেড়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের। তড়িঘড়ি শুরু হয়েছে বিক্ষুব্ধদের বোঝানোর কাজ। এ দিনই রঘুনাথপুর ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির নির্দেশে পঞ্চায়েত সমিতির দলীয় সদস্যদের নিয়ে উদ্ভুত সমস্যা মেটাতে আলোচনায় বসেছিলেন ব্লকের কার্যকরী সভাপতি পূর্ণিমা কুম্ভকার। পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের ১৭ সদস্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ১৬ জনই। তবে, দলীয় কার্যালয়ে হওয়া ওই বৈঠকে কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি।

দল সূত্রেই জানা গিয়েছে, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুযায়ী অনাস্থা আনা যাবে না বলে ওই বৈঠকে জানিয়েছিলেন পূর্ণিমাদেবী। কিন্তু, তাঁর কথা শুনতে চাননি বিক্ষুব্ধ সদস্যেরা। শুধু তাই নয়, পূর্ণিমাদেবীর সামনেই এক মহিলা কর্মাধ্যক্ষ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৃষ্ণবাবুর সমর্থনে থাকা এক কর্মাধ্যক্ষের দিকে চটি ছুড়তে উদ্যত হন বলেও খবর!

এমনিতে রঘুনাথপুর ১ ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন নয়। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই এই ব্লকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য পরপর অনাস্থা এসেছিল তৃণমূলের দখলে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে। বাদ পড়েনি পঞ্চায়েত সমিতিও। অতীতে এই পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি রীনা বাউরির বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন দলের সদস্যদের একাংশ। ভোটাভুটিতে জিতে যাওয়ায় অবশ্য য়ে যাত্রা পদ খোওয়াতে হয়নি রীনাদেবীকে। ওই সময় তাঁর সমর্থনে দাঁড়িয়েছিলেন সমিতির সভাপতি কৃষ্ণ মাহাতো। আর এ বার কৃষ্ণবাবুর বিরুদ্ধেই অনাস্থা আনা সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন রীনাদেবীও!

বস্তুত এ বার ভোটের আগেই এই পঞ্চায়েত সমিতিতে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তুঙ্গে উঠেছিল। কৃষ্ণবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার প্রক্রিয়া তখন থেকেই শুরু হয়। কিন্তু ভোটের মুখে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধেই অনাস্থা এলে দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রচারে হাতিয়ার পেয়ে যাবে বিরোধীরা, মূলত এই আশঙ্কাতেই তখনকার মতো অনাস্থা আসেনি। কিন্তু, আর ফল ঘোষণা হতেই দেরি না করে অনাস্থা আনল দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী। সোমবার প্রশাসনের কাছে দেওয়া চিঠিতে ওই বিক্ষুব্ধেরা সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা না করে পঞ্চায়েত সমিতি পরিচালনা-সহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন। কৃষ্ণবাবু দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে।

বিক্ষুব্ধদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মাধ্যক্ষ বলেন, ‘‘নিজের ইচ্ছামত সমিতির কাজকর্ম পরিচালনা করছেন সভাপতি। সাধারণ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা দূর অস্ত, কর্মাধ্যক্ষদের পরামর্শও নিচ্ছেন না। আমরা তাঁকে অতীতে এ বিষয়ে বহুবার সতর্ক করেছি। দলের নেতৃত্বকেও জানিয়েছি। কিন্তু কোন ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি বলে অনাস্থা আনতে বাধ্য হয়েছি।”

কৃষ্ণবাবু অবশ্য বলেছেন, ‘‘যাঁরা অনাস্থা এনেছেন, তাঁরা দুর্নীতিতে আমার জড়িয়ে থাকার বিষয়টি প্রমাণ করতে পারলে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করব।” তাঁর দাবি, সকলকে নিয়েই সব সময় কাজ করার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। কৃষ্ণবাবুর কথায়, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সমিতির কিছু সদস্য সেই ষড়যন্ত্রে সামিল হয়েছেন। পুরো বিষয়টি বিধায়ককে জানিয়েছি। তাঁর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করব।”

তৃণমূল সূত্রে কিন্তু জানা যাচ্ছে, অনাস্থা আনার দিন কয়েক আগেই কয়েক জন কর্মাধ্যক্ষ বিধায়ক পূর্ণচন্দ্রবাবুর সঙ্গে দেখা করে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে তাঁদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছিলেন। বিধায়ক ওই কর্মাধ্যক্ষদের জানান, সভাপতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা করা হবে। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই অনাস্থা আনা যাবে না। কিন্তু বিধায়ক তথা ব্লক সভাপতির নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই অনাস্থা আনা হল। শপথগ্রহণ ও বিধানসভার অধিবেশনের জন্য পূর্ণচন্দ্রবাবু বর্তমানে কলকাতায় রয়েছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে যে ভাবে অনাস্থা আনা হল, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিধায়ক।

এ দিন তিনি বলেন, ‘‘অনাস্থা নিয়ে দলের কড়া নির্দেশ রয়েছে। তা সত্ত্বেও রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থা এসেছে বলে শুনেছি। বিধানসভা থেকে ফিরেই সকলকে নিয়ে আলোচনায় বসব।” যাঁরা দলীয় নির্দেশ অমান্য করে অনাস্থা এনেছেন, প্রয়োজনে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন বিধায়ক।

Ranaghat MLA TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy