Advertisement
০৫ মে ২০২৪

প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ সিউড়িতে

তৃণমূল ও ফব যুযুধান দু’পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোলের ঘটনায় পুরভোটের পারদ চড়ল। এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে তাদের মারধর করা, প্রাচরে বাধা দেওয়া এবং নির্বাচনী কার্যালয় ভেঙে ফেলার মতো অভিযোগ এনেছে। বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে সিউড়ি’র ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাহারপাড়ায়। পুলিশ জানিয়েছে, দু’পক্ষই অভিযোগ করেছে। সংঘাতের খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়ে দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করেছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০৭
Share: Save:

তৃণমূল ও ফব যুযুধান দু’পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোলের ঘটনায় পুরভোটের পারদ চড়ল। এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে তাদের মারধর করা, প্রাচরে বাধা দেওয়া এবং নির্বাচনী কার্যালয় ভেঙে ফেলার মতো অভিযোগ এনেছে। বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে সিউড়ি’র ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাহারপাড়ায়। পুলিশ জানিয়েছে, দু’পক্ষই অভিযোগ করেছে। সংঘাতের খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়ে দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করেছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তৃণমূলের ওই ওয়ার্ডের প্রার্থী বিদ্যাসাগর সাউয়ের অভিযোগ, রাত ১০টার পর প্রচার সেরে বাড়ি ফেরার পথে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের হাতে তিনি আক্রান্ত হন। তাঁর দাবি, ‘‘ফব প্রার্থী মন্ত্রীশ্বর মণ্ডলের নির্দেশেই ৪ নন্বর ওয়ার্ডের কিছু লোক ওখানে ওতপেতে অপেক্ষায় ছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ফব-র প্রার্থী মন্ত্রীশ্বর অন্তত জনা চল্লিশ লোক নিয়ে ওখানে রয়েছেন। আমিও আক্রমণের মুখে পড়ি। গলাটিপে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয় আমাকে। বেগতিক দেখে পুলিশে খবর দিই। আমাদের দুই কর্মী আঘাত পেয়েছেন।’’ অন্য দিকে, মন্ত্রীশ্বরবাবু অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। বরং তৃণমূলের লোকজনই মদ্যপ অবস্থায় আমাদের নির্বাচনী কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকে। কোনও ভাবেই প্রাচার চালাতে দেবে না বলেও হুমকি দেয়। কর্মীসমর্থকদের গালিগালাজ করায় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছিল মাত্র। মারধর আমরা করিনি।’

বিদ্যাসাগর সাউ ঘটনাস্থলে এলে উল্টে তাঁকেই হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ মন্ত্রীশ্বরের।

রাজনীতির কারবারি ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সিউড়ি’র ওই ওয়ার্ডে লাড়াই যথেষ্ট হাড্ডাহাড্ডি হবে। তৃণমূল এবং ফব প্রার্থী উভয়েই ওই ওয়ার্ড থেকে জেতার ব্যপারে প্রত্যয়ী। তাই এমন ছোটখাটো বিবাদ অপ্রত্যাশিত নয়। তৃণমূলের সিউড়ি’র দায়িত্বে থাকা তৃণমূল নেতা তথা জেলাপরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘ওই ওয়ার্ডটি দীর্ঘদিন ঘরে বিরোধীদের হাতে ছিল। কোনও উন্নয়নের কাজ হয়নি। এ বার আমরা ওয়ার্ডে জিতবই, এটা নিশ্চিত জেনেই বিরোধীরা দিশেহারা। তাই ভয় দেখিয়ে আক্রমণ করে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’’ ফব-র জেলা নেতা রেবতী ভট্টাচার্যের পাল্টা দাবি, ‘‘ওই ওয়ার্ডে আমাদের প্রার্থী মন্ত্রীশ্বর মণ্ডলই জয়ী হবেন। তাই তৃণমূলের পক্ষ থেকেই আক্রমণ হয়েছে।’’ দু’নেতাই প্রশাসনকে বিষয়টি দেখতে অনুরোধ করেছেন।

তবে ওই ওয়ার্ডের লাড়াই শুধু মাত্র তৃণমূল বা ফব-তেই সীমাবদ্ধ ধরে নিলে হিসাব নাও মিলতে পারে বলছেন ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও রাজনৈতিক মহল। কেন না, ওই ওয়ার্ডে এক নির্দলপ্রার্থী হিসাবে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন বলেই মনে করছেন আনেকেই। তিনি সিউড়ি পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী আলিম মহম্মদ। যিনি আবার এলাকায় বামপন্থী বলেই পরিচিত। স্থানীয় সূত্রের খবর, সিউড়ি পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রক্ষাকালী মন্দির ঘোঁষা মালপাড়া, কোঁড়াপাড়া, কলেজপাড়া, ফকির পাড়া, দাসপাড়ার মতো বেশ কয়েকটি পাড়ায় ভোটারের সংখ্যা ২৮৭১। তার মধ্যে ১১০০-র মতো ভোট রয়েছে সংখ্যালঘু। ২০১০ সালের আগে পর্যন্ত বেশ কয়েকটায় ধারাবাহিক ভাবে বামপন্থী প্রার্থীরাই জয়ী হয়ে এসেছেন ওই ওয়ার্ড থেকে। ২০০০ সালে ওই ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়েছিলেন আলিম মহম্মদ সৈয়দের দিদি সিপিএম প্রার্থী সৈয়দা বিবি। পরের বার একই ভাবে জয়ী হন সিপিএম প্রার্থী সরিফা বেগম এলাহী। বকলমে কাউন্সিলরের ভূমিকা পালন করতেন আলিমবাবুই। এলাকা উন্নয়নের কাজও হয়েছে তাঁর হাত ধরেই। ফলে ওয়ার্ডের তাঁর একটা ভিন্ন পরিচিতি রয়েছে।

কিন্তু সরিফা বেগম এলাহী কাউন্সিলর হিসেবে জয়ী হলেও তাঁর সময়কাল শেষ না করেই পরিবার সিউড়ি শহর ছেড়ে দেন। কারণ যাই থাক। বামপন্থীদের থেকে মুখ ফেরায় মানুষজন। জয়ী হন কংগ্রেসের উত্তম দাস। দলের সদস্য না হলেও এতদিন যে ভাবে পুরভোটের লড়াইয়ে পাশে থেকেছেন সেই অলিমবাবুও ২০১০ সালে পুরভোটে একেবারে হাত গুটিয়ে নিয়েছিলেন। তবে কংগ্রেস জয়ী হলেও পুরপরিষেবা নিয়ে ওয়ার্ডবাসীকে খুশি করতে পারেননি বরং ক্ষোভ এতাটাই চরমে যে, ফের ওই ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হলেও উত্তমবাবুর জেতার ব্যাপারে আশাবাদী নয় কংগ্রেসও। বামপন্থীদের এক সময়ের শক্ত ঘাঁটিতে তাই পাশের ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দু-দুবারের ফব কাউন্সিলর মন্ত্রীশ্বর মণ্ডলকে ৩ নম্বরের টিকিট দেয় দল।

প্রথমত পাশের ওয়ার্ড,বামপন্থী ভোটব্যাঙ্ক এবং পোড়খাওয়া রাজনীতিক হওয়ায় এই ওয়ার্ডে লড়তে সমস্যা হওয়ার কথাছিল না মন্ত্রীশ্বরের পক্ষে। অন্য দিকে, শাসকদলের হয়ে বিদ্যাসগর সাউ যে, ওই ওয়ার্ডের প্রার্থী হবেন সেই প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই চলছিল। কিন্তু দু’জনকেই সমস্যায় ফেলেছেন আলিম। বিশেষ করে বামপন্থী ভোট ভাগাভাগি নিয়ে চিন্তিত বামশিবির। সংখ্যালঘু ভোটের একটা বড় অংশ নিজের অনুকুলে টেনে নিতে পারলে অলিম যে কাউকে বেকায়দায় ফেলতে পারেন, আড়ালে মানছে তৃণমূলও।

আলিম মহম্মদ সৈয়দ নিজে বলছেন, ‘‘কে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন সে কথা ভাবছি না। এলাকায় পুরপরিষেবা বলে কার্যত কিছু নেই। তা সে পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থা, আবর্জনা পরিষ্কার বা পথবাতি— সবই তলানিতে। যতদিন নিজে এলাকা দেখাশোনা করতাম ততদিন এলাকাবাসী সন্তুষ্ট ছিলেন। তাঁদের ইচ্ছেতেই নির্দল থেকে লড়ছি। আশা করি আমিই জিতব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE