Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

নদীতে ডুবে শিশুর মৃত্যু, ক্ষোভ

মাসির হাত ধরে নদীতে স্নান করতে নেমেছিল পাঁচ বছরের ছেলেটি। হঠাৎ-ই পা হড়কে ডুবে গিয়ে মৃত্যু হল সেই ছোট্ট শিশুর। শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ সাঁইথিয়ায় ময়ূরাক্ষী নদীর ঘটনা। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম সমীর ওরফে চাঁদ বাগদি (৫)। তার বাড়ি বোলপুরের ত্রিশূলাপট্টিতে হলেও মাস দুয়েক থেকে সাঁইথিয়ায় মামার বাড়িতে থাকছিল।

শোকস্তব্ধ মা। —নিজস্ব চিত্র

শোকস্তব্ধ মা। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০২:১০
Share: Save:

মাসির হাত ধরে নদীতে স্নান করতে নেমেছিল পাঁচ বছরের ছেলেটি। হঠাৎ-ই পা হড়কে ডুবে গিয়ে মৃত্যু হল সেই ছোট্ট শিশুর।

শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ সাঁইথিয়ায় ময়ূরাক্ষী নদীর ঘটনা। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম সমীর ওরফে চাঁদ বাগদি (৫)। তার বাড়ি বোলপুরের ত্রিশূলাপট্টিতে হলেও মাস দুয়েক থেকে সাঁইথিয়ায় মামার বাড়িতে থাকছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যত্রতত্র বেআইনি ভাবে বালি তোলার কারণেই ময়ূরাক্ষী নদীর বুকে খাল তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ দিনের দুর্ঘটনাও তার ব্যতিক্রম নয়। সেরকম একটি খালে পড়ে গিয়েই চাঁদ নামে ওই শিশু ডুবে মারা গিয়েছে বলে পরিবারের দাবি। এ দিনই ময়না-তদন্তের পরে শিশুর দেহটি পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মাস দুয়েক আগে একমাত্র পুত্রটিকে নিয়ে বাপের বাড়ি সাঁইথিয়ার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রহ্মদ্যুতি পাড়ায় চলে আসেন মা সীতাদেবী। সেখানে মা-বোনেদের সঙ্গেই থাকতেন তিনি। ওই পাড়ার পাশেই ময়ূরাক্ষী নদী। পাড়ার অনেকেই স্নান থেকে জামাকাপড় কাচাকাচি ওই নদীর জলই ব্যবহার করে থাকেন। এ দিন বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ বাড়ির কাছে নদীর ঘাটে মাসি সরের সঙ্গে স্নান করতে গিয়েছিল চাঁদ। প্রতিবেশীদের দাবি, ওই মহিলা পাড়ে কাপড় কাঁচার কাজ করছিলেন। সে সময় চাঁদ নদীর জল ভর্তি খালে পড়ে যায়। স্থানীয় লোক জন সঙ্গে সঙ্গে জলে নেমে চাঁদের খোঁজ শুরু করেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই স্থানীয় এক যুবক চাঁদকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে। প্রতিবেশীদের দাবি, চাঁদ তখনও বেঁচে ছিল। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসকেরা জানান, চাঁদ মারা গিয়েছে।

ঘটনার পর থেকেই সীতাদেবী বারবার অচৈতন্য হয়ে পড়ছিলেনন। মাসি সর বা দিদা পূর্ণিমাদেবীও কথা বলার অবস্থায় নেই। প্রত্যেকেই অঝোরে কেঁদে চলেছেন। খবর পেয়ে হাটটিকড়া থেকে সীতাদেবীর বড় জামাইবাবু পল্টু বাগদি এসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার শ্বশুরের কোনও ছেলে নেই। শ্বশুরও অনেক দিন আগে মারা গিয়েছেন। যা করার প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনেরাই করছেন। চাঁদের বাবা সুকুমার বাগদিকে খবর দেওয়া হয়েছে।’’

এ দিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, ময়ূরাক্ষী নদী কার্যত বালি ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গিয়েছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নদীর সর্বত্র বালি তোলা হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘‘অধিকাংশ বালি ব্যবসায়ী নদী থেকে বালি তোলার ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতির কোনও তোয়াক্কা করেন না। খেয়াল খুশি মতো যত্রতত্র বালি তোলেন। জেসিবির মতো অত্যাধুনিক মেশিনে বড় বড় ট্রাক, ট্রাক্টরে বালি লোড করা হচ্ছে। ফলে নদীর বহু জায়গায় গভীর খাদ হয়ে যায়।’’ ওই সব খাদে পড়েই ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এ দিন যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটে, সেখানেও নদীর উত্তর দিকের একটি বালিঘাট থেকে বালি তোলা হতো বলে স্থানীয়দের দাবি। তাঁদের বক্তব্য, প্রশাসন অবৈধ বালি উত্তোলনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে শিশুটিকে এ ভাবে অকালে ধরে যেতে হতো না। সাঁইথিয়া সেচ দফতরের এসডিও সন্দীপ দাসের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘বেআইনি ভাবে বালি তোলার লিখিত অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Drowning Child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE