Advertisement
০২ মে ২০২৪
হুল দিবসে রেল ও সড়ক অবরোধ, হয়রান সাধারণ যাত্রীরা

ট্রেন, বাস বন্ধে যাত্রীরা চক্রব্যুহে

একই ভোগান্তি আদ্রাতেও। সকালে আসানসোল-আদ্রা প্যাসেঞ্জার ধরে আদ্রা পৌঁছে ট্রেন বদলে খড়গপুরে অফিসে যাওয়ার কথা ছিল আসানসোলের কুলটির সুগত সরকারের।

নাজেহাল:  টিকিট কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা যাত্রীদের।  ছবি: অভিজিৎ সিংহ, পৌলমী চক্রবর্তী ও শুভ্র মিত্র

নাজেহাল: টিকিট কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা যাত্রীদের। ছবি: অভিজিৎ সিংহ, পৌলমী চক্রবর্তী ও শুভ্র মিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া ও আদ্রা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৭ ০২:৪১
Share: Save:

হুল দিবসে দিনে ‘ভারত জাকাত মাঝি মাড়ওয়া পারগানা মহল’-এর অবরোধে আটকে পড়ে দিনভর হুল ফোঁটানোর যন্ত্রণা ভোগ করলেন দুই জেলার মানুষ। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সেই চিত্রই উঠে এল।

বাঁকুড়া স্টেশনে ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়িতে শুকনো মুখে বসেছিলেন এক দল যাত্রী। সকলেরই মুখে একরাশ হতাশা ও বিরক্তি। তাঁদের মধ্যে ছিলেন পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ সামন্ত। বৃহস্পতিবার রাতে পেশাগত কাজে তিনি বাঁকুড়ায় এসে আর ফিরতে পারেননি। শহরের একটি হোটেলে রাত কাটিয়ে শুক্রবার সকালেই তিনি গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে গিয়েছিলেন বাস ধরতে। কাটজুড়িডাঙা মোড়ে পথ অবরোধ হওয়ায় বাস চলবে না জানতে পেরেই ছোট গাড়ি ধরে বাঁকুড়া স্টেশনে চলে আসেন সকাল আটটায়। কিন্তু স্টেশনে এসে শোনেন, অবরোধের জেরে আটকে পড়েছে ট্রেনও। ক্ষোভ উগরে দিয়ে ইন্দ্রজিৎবাবু প্রশ্ন তোলেন, “এ ভাবে বাস, ট্রেন বন্ধ করে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলে কী পায় এই অবরোধকারীরা? এর চেয়ে সরকারি অফিস কাছারিতে, মন্ত্রীদের দফতরে গিয়েও তো নিজেদের দাবি তো পেশ করা যায়।’’

একই ভোগান্তি আদ্রাতেও। সকালে আসানসোল-আদ্রা প্যাসেঞ্জার ধরে আদ্রা পৌঁছে ট্রেন বদলে খড়গপুরে অফিসে যাওয়ার কথা ছিল আসানসোলের কুলটির সুগত সরকারের। আদ্রা পৌঁছে জানতে পারেন, ছাতনায় অবরোধ শুরু হয়েছে। ট্রেন বন্ধ। দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করে সড়কপথে কুলটি ফিরে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কে হরিডি মোড়ে রাস্তা অবরোধে আটকে পড়েন তিনি।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছিলেন, সকাল ১০টা থেকে অবরোধ করবেন তাঁরা। কিন্তু এ দিন সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে বাঁকুড়া স্টেশনের দু’নম্বর প্লাটফর্মে আটকে পড়ে নিউদিল্লি থেকে পুরীগামী নন্দনকানন এক্সপ্রেস। তিন নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে যায় খড়্গপুর-আসানসোল প্যাসেঞ্জার। কারণ আগের স্টেশনগুলিতে অবরোধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। গরমে নাজেহাল হন যাত্রীরা। শিশুদের কান্না, বয়স্কদের দীর্ঘশ্বাসে পরিবেশ অসহ্য হয়ে ওঠে অনেকের কাছে।

নন্দনকানন এক্সপ্রেসের স্লিপার ক্লাসের যাত্রী সুখবিন্দর সিং বলেন, “আমাদের কামরা এসি নয়। বেশিক্ষণ ট্রেনে বসে থাকা যাচ্ছে না। কখন ট্রেন ছাড়বে কে জানে!’’ দিনভর ভাল করে খাওয়া দাওয়াও করতে পারেননি বহু যাত্রীই। নয়াদিল্লি-ভুবনেশ্বর দুরন্ত এক্সপ্রেস ধরে জরুরি কাজে ভুবনেশ্বর যাচ্ছিলেন দিল্লির প্রকাশ সিংহ। আদ্রা স্টেশনে সকাল থেকেই বিকাল পর্যন্ত আটকে থেকে বলেন, ‘‘শুক্রবার রাতেই ভুবনেশ্বর পৌঁছানোর কথা ছিল। শনিবার পৌঁছলে কাজটাই হবে না।’’

বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রী বিক্ষোভও হয়। বাঁকুড়া স্টেশন ম্যানেজারের অফিসে একদল যাত্রী বিক্ষোভ দেখিয়ে অভিযোগ করেন, তাঁরা হাওড়া যাওয়ার জন্য টিকিট কেটে পুরুলিয়া সুপারফার্স্ট এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন। অবরোধের জন্য বিষ্ণুপুর স্টেশনে ওই ট্রেন থামিয়ে দেওয়া হয়। তখন তাঁরা খড়্গপুর-আসানসোল ট্রেনে চড়ে বাঁকুড়ায় ফিরে আসেন। স্টেশনে ফিরেই টিকিট বাতিল করে টাকা ফেরতের দাবি তোলেন তাঁরা। বাঁকুড়ার স্টেশন ম্যানেজার শেরাফত মল্লিক বলেন, “ট্রেন বাতিল হলে টিকিট ফেরত দেওয়া হয়। পুরুলিয়া এক্সপ্রেস, হলদিয়া এক্সপ্রেসের মতো ছ’টি ট্রেন বাতিল হয়েছে। যাঁরা টাকা ফেরতের আবেদন জানিয়েছেন, তাঁদের নিয়ম মেনে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।” টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিতে যাত্রী বিক্ষোভ হয় আদ্রার টিকিট কাউন্টারেও। সিনিয়র ডিসিএম (আদ্রা) কে এস আনন্দ বলেন, ‘‘সমস্যা বুঝে টিকিটের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করেছি।”

ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের বাঁকুড়ার নেতা রবিনাথ মান্ডি বলেন, “ঝাড়খণ্ড রাজ্য সরকার আদিবাসীদের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। নিজেদের অধিকার রক্ষা করতেই তাই আন্দোলনে নেমেছি।”

আটকে

আদ্রা ডিভিশনে বাতিল ১৫টি প্যাসেঞ্জার ট্রেন

যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করা হয় ১২টি প্যাসেঞ্জার ট্রেনের

থমকে ছিল দুরপাল্লার নিউদিল্লি-ভুবনেশ্বর দুরন্ত এক্সপ্রেস ও পুরী-নিউদিল্লি নন্দনকানন এক্সপ্রেস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE