Advertisement
০৮ মে ২০২৪

একই দিনে দুই বালকের প্রাণ গেল বিস্ফোরণে

খেলার ছলেই ঘটে গেল বিস্ফোরণ! আর তার জেরে একই দিনে পুরুলিয়ায় মৃত্যু হল এক বালক ও এক কিশোরের। একটি ঘটনার ক্ষেত্রে ঘাতক মোবাইলের ব্যাটারি। আর অন্যটিতে ঘাতক ডিনামাইট। দু’টি ঘটনাই সোমবারের। এ দিন সকালে পুরনো মোবাইলের ব্যাটারি নিয়ে খেলতে গিয়ে সেই ব্যাটারি ফেটে মৃত্যু হয় বিপিন গোপ (৯) নামে এক বালকের। তার বাড়ি পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকার চাঁদড়াডি গ্রামে। গুরুতর জখম অবস্থায় প্রথমে তাকে পুরুলিয়া ১ ব্লকের চাকলতোড় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

মৃত বালক বিপিন গোপ।

মৃত বালক বিপিন গোপ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০১:১০
Share: Save:

খেলার ছলেই ঘটে গেল বিস্ফোরণ! আর তার জেরে একই দিনে পুরুলিয়ায় মৃত্যু হল এক বালক ও এক কিশোরের। একটি ঘটনার ক্ষেত্রে ঘাতক মোবাইলের ব্যাটারি। আর অন্যটিতে ঘাতক ডিনামাইট।

দু’টি ঘটনাই সোমবারের। এ দিন সকালে পুরনো মোবাইলের ব্যাটারি নিয়ে খেলতে গিয়ে সেই ব্যাটারি ফেটে মৃত্যু হয় বিপিন গোপ (৯) নামে এক বালকের। তার বাড়ি পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকার চাঁদড়াডি গ্রামে। গুরুতর জখম অবস্থায় প্রথমে তাকে পুরুলিয়া ১ ব্লকের চাকলতোড় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে হাসপাতালেই বালকটির মৃত্যু হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপিন গ্রামেরই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। তার বাড়ির লোকজন জানিয়েছেন, কয়েক দিন ধরেই মোবাইলের পুরনো ব্যাটারি জোগাড় করে বিপিনের মতোই গ্রামের কিছু ছেলে এলইডি আলো জ্বালানোর খেলা খেলছিল। এ দিন সকালে বিপিনের জেঠতুতো দাদা রাকেশ গোপ ও বিপিন তাদের খামার বাড়িতে একই ভাবে খেলা করছিল। রাকেশ খানিকটা তফাতে ছিল। বিপিনের বাবা, পেশায় দিনমজুর মঙ্গল গোপ বলেন, ‘‘ছেলে অন॥ দিনের মতোই মোবাইলের ব্যাটারি নিয়ে খেলা করছিল। আমি সে সময় গরুকে খড় দিচ্ছিলাম। আচমকা বেশ জোরে কিছু একটা ফাটার শব্দ শুনি। দেখি বিপিন চিৎকার করছে আর মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। কাছে গিয়ে দেখি, ওর মুখ রক্তে ভেসে যাচ্ছে। থুতনির নীচেটা ফেটে গিয়েছে।’’ কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন মঙ্গলবাবু।. বিপিনের জেঠু পতিতপাবন গোপ বলেন, ‘‘মোবাইলের পুরনো ব্যাটারি নিয়ে আলো জ্বালানোর খেলা খেলছিল ভাইপো। তাতে যে এত বড় বিপদ হবে, আমরা কোনও ভাবেই আন্দাজ করিনি।’’ চোখের সামনে গোটা ঘটনা দেখে থম মেরে গিয়েছে বিপিনের জেঠতুতো দাদা, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রাকেশ গোপ। সদর হাসপাতালের সহকারী সুপার শান্তনু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিস্ফোরণের আঘাতে ওই বালকটির থুতনির নীচের দিকের অংশটি পুরো উড়ে গিয়েছিল। খুবই দুখঃজনক ঘটনা। হাসপাতালে আনার সঙ্গে সঙ্গেই ছেলেটি মারা যায়।’’

এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ একই রকম মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে কাশীপুর থানার কেতনকেয়ারি গ্রামের কাছে। সেখানে ডিনামাইট নিয়ে খেলার সময় বিস্ফোরণে মারা গিয়েছে গৌরাঙ্গ বাউরি (১১) নামে এক কিশোর। তার বাড়ি স্থানীয় পারবেদিয়া গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কেতনকিয়ারি গ্রামের কাছে একটি নদীর উপর চেকড্যাম নির্মাণের কাজ চলছে। সেই কাজের জন্য ডিনামাইট রাখা রয়েছে। ড্যাম তৈরিতে পাথর ফাটানোর কাজে ব্যবহার করার জন্য ডিনামাইটের ব্যবহার করতে হচ্ছে। গৌরাঙ্গ দিনমজুর পরিবারের সন্তান। এলাকার একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র গৌরাঙ্গ মাঝে মাঝে ছাগলও চরায়।

কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘যেখানে চেকড্যাম নির্মাণের কাজ চলছে, সেখান থেকে কোনও ভাবে ছেলেটি একটি ডিনামাইট নিয়ে চলে এসেছিল। গ্রামের কাছাকাছি যেখানে ছেলেটি খেলা করছিল, সেই জায়গায় মাথার উপর দিয়ে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎবাহী তার গিয়েছে। ডিনামাইটটি ছেলেটির কোমরে বাঁধা ছিল।’’ ডিনামাইটের সঙ্গে সঙ্গে তারও ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। খেলতে খেলতেই কোনও ভাবে ডিনামাইটটি ফেটে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা বিজ্ঞান আচার্য বলেন, ‘‘ফাঁকা জায়গায় ছেলেটি খেলছিল। কিছু ফাটার শব্দ পেয়ে কাছে গিয়ে দেখি, ছেলেটার কোমরের কাছে গর্ত হয়ে গিয়েছে। চোট রয়েছে ডান হাতেও।’’ সঙ্গে সঙ্গে ওই কিশোরকে গৌরাঙ্গডি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ছেলেটির মৃত্যু হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE