Advertisement
০৬ মে ২০২৪
ধৃত কলসেন্টারের প্রাক্তন কর্মী ও ছাত্রকে জেরায় দাবি পুরুলিয়া পুলিশের

চালকের দেহ ফেলে গাড়ি নিয়ে পালায় দুই ভাই

ভাড়া খাটিয়ে রোজগারের জন্য ভাগ্নেকে একটা গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন মামা। কিন্তু সেই সাদা ঝকঝকে গাড়িই কাল হল ভাগ্নের। পাশের এলাকার দুই মাসতুতো ভাই ভাড়ায় সেই গাড়ি নিয়ে গিয়ে চালককে পরিকল্পনা করে খুন করে গাড়ি ছিনিয়ে নিল। কিন্তু তাঁদের কপালেও সইল না সেই গাড়ি। বিক্রি করার আগেই পুলিশ গাড়ি সমেত দুই ভাইকে তুলে নিয়ে গেল।

পুলিশ হেফাজতে সেই গাড়ি।—নিজস্ব চিত্র।

পুলিশ হেফাজতে সেই গাড়ি।—নিজস্ব চিত্র।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৫ ০১:৩২
Share: Save:

ভাড়া খাটিয়ে রোজগারের জন্য ভাগ্নেকে একটা গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন মামা। কিন্তু সেই সাদা ঝকঝকে গাড়িই কাল হল ভাগ্নের। পাশের এলাকার দুই মাসতুতো ভাই ভাড়ায় সেই গাড়ি নিয়ে গিয়ে চালককে পরিকল্পনা করে খুন করে গাড়ি ছিনিয়ে নিল। কিন্তু তাঁদের কপালেও সইল না সেই গাড়ি। বিক্রি করার আগেই পুলিশ গাড়ি সমেত দুই ভাইকে তুলে নিয়ে গেল।

শুক্রবার রাতে পুলিশ আদ্রা থেকে ওই দুই মাসতুতো ভাইকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে একজন ঝাড়খণ্ডের ভোজুডির একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। অন্য জন বছর তেইশের যুবক। সে টাটার একটি কলসেন্টারে কিছুদিন আগে পর্যন্ত কাজ করত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

পুরুলিয়ার জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার দাবি করেছেন, ‘‘ভোজুডি লাগোয়া চন্দনকিয়ারি থানার শিববাবুডির বাসিন্দা দীপক বাউরিকে তাঁর মামা একটি গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু দীপককে খুন করে সেই গাড়িটি হাতিয়ে নেওয়ার ফন্দি আঁটে ওই দুই মাসতুতো ভাই। সেই মতো গত রবিবার তারা ১০০০ টাকায় ভাড়া নিয়ে দীপককে নিয়ে পুরুলিয়ায় আসে। ফেরার পথে রাতে এক ভাই দীপকের গলায় ক্লাচের তার পেঁচিয়ে ধরে। অন্যজন দীপকের গলায় ছুরি চালায়।’’ সোমবার সকালে পুরুলিয়া মফস্‌সল থানার ছড়রা গ্রামের অদূরে শুঁড়িবাঁধ এলাকায় দীপকের দেহ পাওয়া যায়। পরে দেহটি শনাক্ত করেন তাঁর মামা সুবর্ণ বাউরি ও বাড়ির লোকজন।

শনিবার ধৃতদের আদালতে তোলা হয়। দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ার বয়েস ১৮ বছরের কম হওয়ায় এ দিন তাকে জুভেনাইল আদালতে তোলা হয়। পরে তাকে একটি হোমে পাঠানো হয়। আর ওই যুবককে পেশ করা হয় পুরুলিয়া সিজেএম আদালতে। বিচারক তাকে চারদিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠায়। নিহত দীপকের মামার আক্ষেপ, ‘‘ভাগ্নের রোজগারের জন্য ওকে একটি ভাড়া খাটানোর জন্য কিনে দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই গাড়ির জন্য ওরা দীপককে খুন করল কেন? ভয় দেখিয়ে কেড়ে নিতেও তো পারত। তাহলে ওকে এ ভাবে হারাতে হতো না।’’

দেহ উদ্ধারের পরে সুবর্ণবাবুর কাছ থেকেই পুলিশ জানতে পারে দীপক ভাড়ায় গাড়ি নিয়ে পুরুলিয়ায় এসেছিলেন। এরপরেই পুলিশ খুনের কিনারা করতে ওই গাড়ির যাত্রীদের খোঁজে নামে। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়ার ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একাধিক দল পৃথক পৃথক ভাবে ঘটনার তদন্তে নামে। তদন্তে নেমে গত সোমবারই পাড়া থানার বাগালমারি জলাধার অর্থাৎ ফতেপুর জলাধারের পাশ থেকে রক্তমাখা কিছু জামা কাপড় উদ্ধার করে পুলিশ। সেখান থেকে দেহ উদ্ধারের জায়গা বেশি দূরে নয়। ওই জলাধারের পাশ দিয়ে ঝাড়খণ্ডে যাওয়া যায়। পুলিশ অনুমান করে, আততায়ীরা সম্ভবত ঝাড়খণ্ডে পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারে। রাস্তায় তল্লাশিতেও জোর দেওয়া হয়। আরও কিছু সূত্রও হাতে আসে পুলিশের। তার ভিত্তিতেই শুক্রবার রাতে আদ্রার কাছ থেকে ওই গাড়ি সমেত দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশের দাবি, ধৃতদের জেরা করে তারা জানতে পেরেছে, ওই ছাত্রের বাবা আদ্রা ডিভিশনের রেলকর্মী। কিন্তু সে ভোডুডিতে থেকে পড়াশোনা করত। মাসতুতো দাদার সঙ্গে সে পরিকল্পনা করে, দীপকের নতুন গাড়ি হাতিয়ে বিক্রি করতে পারলে কয়েক লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে। সে জন্য তারা দীপককে খুন করার মতলব করে। একটা ছুরিও কেনে তারা। কিন্তু এলাকায় খুন করলে পাছে সহজে ধরা পড়ে যায়, তাই দীপকের গাড়ি ভাড়া করে তারা সোজা পুরুলিয়ায় চলে আসে। ফেরার পথে রাতে রাস্তায় তারা দীপককে খুন করে।

জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের দাবি, পুরুলিয়া থেকে ফেরার পথে রাস্তায় গাড়ির ক্লাচের তার কেনে দুই ভাই। রাস্তায় দাদা চালকের গলায় সেই তার পেঁচিয়ে ধরে, আর ছুরি চালায় তার মাসতুতো ভাই। তারা ভেবেছিল দেহ শনাক্ত হবে না। নিহতের রক্তমাখা পোশাক তারা ফেলে রেখে যায় রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে জলাধারের পাশে। দু’জনে চলে যায় টাটানগরে। সেখান থেকে ট্রেন ধরে ওই ছাত্র আদ্রায় চলে আসে। আর গাড়ি নিয়ে দাদা অন্যদিকে ভাগে। কয়েকদিন পরে সব ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছে ভেবে দুই ভাই সেই গাড়ি নিয়ে বেরোয়। কিন্তু পুলিশ যে ওঁত পেতে ছিল তা বুঝতে পারেনি।

একজন স্কুলছাত্রের টাকার কেন প্রয়োজন হল তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। চেষ্টা করেও অবশ্য ধৃতদের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে আক্ষেপ কিছুতেই ঘুচছে না দীপকের মামা সুবর্ণবাবুর। তিনি বলেন, ‘‘দীপক ছোট থেকেই আমার বাড়িতে থাকত। ওরা যখন দীপককে নিয়ে পুরুলিয়ায় রওনা দেয় তখন আমি বাড়িতে ছিলাম না। পরে জানতে পেরে ফোন করি। দীপক জানিয়েছিল, রাতেই ফিরবে। কিন্তু আর ফেরা হল না। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে দিদি প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছে। ওকে আমি কী বলে সান্ত্বনা দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

car purulia police investigation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE